Alapon

গণতন্ত্র ডাকাতির মহোৎসবে আপনাকে স্বাগতম

নাম বললে চাকরি থাকবে না... জনৈক বিএনপি নেতার এই শিরোনামে একটি বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে বহুবার ঘুরে ফিরে ভাইরাল হয়েছে। অনেকের হাসির খোরাক জুগিয়েছে। অনেকের সামনে হাজির করেছে হতাশার সাগর। গণতন্ত্র হেরে যাওয়ার এ নিদারূন দৃশ্য ক্ষমতায় আরোহনের পর থেকে বার বার দেখিয়েছে আওয়ামী লীগ। কেউ ওই নেতার মত চিৎকার করে বলতে পেরেছে। কেউ হয়তো সে সুযোগও পায়নি।

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট ডাকাতির আলোচনার রেশ না কাটতেই নানা অনিয়ম, অভিযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ভোট গণনাও প্রায় শেষের দিকে। কিন্তু নির্বাচনের নামে এটা কি হলো তা বুঝে উঠতেই দেশের মানুষের আরও সপ্তাহ খানেক লেগে যেতে পারে।


সকাল থেকেই বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অভিযোগ করে আসছিলেন যে, ভোটকেন্দ্রগুলো দখল করে নিচ্ছে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। বেলা যত বাড়তে লাগলো তত তার অভিযোগ সত্য আকার ধারণ করতে লাগলো। নির্বাচন কমিশন ভোট ডাকাতদের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ ঠেকাতে না পারলেও পুলিশের সহায়তায় ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশের পথ ঠিকই রুদ্ধ করতে পেরেছেন। সেজন্য তাকে বাহবা দেয়া ছাড়া উপায় নেই। বিএনপি অবশ্য তা করেছেও।


বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু সিইসি’র উদ্দেশ্যে বলেছেন- ‘আপনাদের ধন্যবাদ। আগামী দিনে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের কবর রচনার জন্য আপনারা যে রাস্তাটি তৈরি করেছেন সেজন্য সিইসিকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। আর কোনো অভিযোগ আপাতত তাদের কাছে আমাদের নেই।’

অবশ্য রাজনীতির ময়দানে অন্যায়কে রুখে দাঁড়ানোর ব্যাপারে দক্ষতা না দেখাতে পারলেও দিনব্যাপি বিএনপি নেতাদের ভেউ ভেউ কান্না দেখে দেশবাসীর মনে অবশ্য কিছু দয়া জন্মাতেও পারে। তবে আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত নই।

যাইহোক, ভোটের নামে যে ভোট ডাকাতির মহোৎসব হয়েছে তা অনেকটা স্পষ্ট। চলুন সারাদিনের ভোট নিয়ে পত্রিকার অনলাইন ভার্সন গুলো কি শিরোনাম করেছে তার দিকে নজর দেয়া যাক।

১। জোর করে বুথে ঢুকে ২০ যুবকের নৌকার পক্ষে সিল (প্রথম আলো)
২। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট ছিনিয়ে সিল (প্রথম আলো)
৩। গাজীপুরে ভোটারের হাত থেকে ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে সিল (প্রথম আলো)
৪। এখনই ভোট বন্ধের দাবি বিএনপি প্রার্থীর (প্রথম আলো)
৫। সাত কেন্দ্রে বিএনপির পোলিং এজেন্ট নেই- ‘কোনো সাউন্ড নাই, বের হ’ (ভিডিওসহ) (মানবজমিন)
৬। আড়াই ঘন্টায় ব্যালট পেপার শেষ! (মানবজমিন)
৭। গাজীপুরে সাত কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত (মানবজমিন)
৮। ‘চারপাশে ঘিরে ধরে আধা ঘন্টায় ভোট কেটে নেয়’ (ভিডিওসহ) (মানবজমিন)
৯। ‘মেয়রের ভোট দেয়া লাগবে না’ (মানবজমিন)
১০। কেন্দ্রের পাশেই ভিড়তে পারেনি বিএনপি (মানবজমিন)
১১। গাজীপুরে ৮০ বছরের ইতিহাসে এমন ভোট ডাকাতি হয়নি: হাসান সরকার (মানবজমিন)
১২। ৫-৬টি কেন্দ্রে জোরপূর্বক সিল, জালভোটের কথা স্বীকার রিটার্নিং কর্মকর্তার (যুগান্তর)
১৩। কেন্দ্রে পড়ে আছে দুমড়ানো-মুচড়ানো ব্যালট পেপার (বাংলাদেশ প্রতিদিন)
১৪। ব্যালট ছিনতাই করে ভোট, প্রতিবাদে বিক্ষোভ (শীর্ষ নিউজ)
১৫। স্বেচ্ছাসেবক পরিচয়ে কেন্দ্রে যুবকদের প্রবেশ, বিশৃঙ্খলা (শীর্ষ নিউজ)
১৬। গাজীপুর সিটি নির্বাচন: অনিয়মের নানা অভিযোগ (বিবিসি বাংলা)

এভাবে সবগুলো অনলাইন সংস্করণ থেকে যদি আজকের নির্বাচন নিয়ে করা প্রতিবেদনগুলো পড়া যায় তবে স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা হবে যেকোন বিবেকবান মানুষের।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে গণতন্ত্রের নামে এসব হচ্ছেটা কি? এ কেমন উন্নয়নের গণতন্ত্র? ভোট যদি ডাকাতিই হবে তবে এত এত প্রশাসন, এত শক্তিশালী(?) নির্বাচন কমিশন, এত এত অর্থ ব্যয়ের কিইবা অর্থ থাকতে পারে? মানুষের সাথে জনগণের সাথে এ ধরণের প্রতারণা না করলে হয় না? আইনের শাসনকে এভাবে নির্লজ্জ ধর্ষণ না করলে হত না?

ভোট ডাকাতির এ মহোৎসব কোন সভ্য দেশে চলতে পারে না। জনমত হরণের এ অশুভ প্রতিযোগিতা আমাদেরকে উগান্ডার চেয়েও তলানীতে নিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। হয়তো এই ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। অন্যথায় আওয়ামী লীগের মত বুক ফুলিয়ে বলুন- “গণতন্ত্র ডাকাতির মহোৎসবে আপনাকে স্বাগতম।”

পঠিত : ১৩৩৩ বার

মন্তব্য: ০