Alapon

বিএনপি জোটে অবমূল্যায়নের শিকার জামায়াত

সম্প্রতি সিলেট করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী দেয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে জামায়াতসহ জোটের কয়েকটি শরিক দলের। বিএনপি বলছে, জোটের সিদ্ধান্তের বাইরে প্রার্থী দিয়ে এ সমস্যার সৃষ্টি করেছে জামায়াত। দলটির অনেক নেতা এর জন্য জামায়াতকে জোটছাড়া করারও হুমকি দিচ্ছেন। আর জামায়াত বলছে, দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মধ্যে ১১টিতে বিএনপির প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ার বিনিময়ে একটি সিটি তারা চেয়েছে মাত্র।

দলটি বলছে, দেশের সিটি করপোরেশনগুলোর মধ্যে রাজশাহী, গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে তাদের যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। বিগত নির্বাচনগুলোতে এসব এলাকায় তাদের ভালো অবস্থানও লক্ষ করা যায়। জামায়াত নেতাদের মতে, যেসব এলাকায় তাদের ভালো অবস্থান রয়েছে তার মধ্যে সিলেট সবার সেরা। তাই তারা সিলেট সিটিতে নির্বাচন করতে চায়। এছাড়া, ঢাকা উত্তর ও গাজীপুরে জামায়াতের প্রার্থীদের বসিয়ে দেয়ার সময় কথা ছিল সিলেট তাদের ছাড়া হবে। তাই এবার সিলেটে ভালোভাবে গো ধরেছে দলটি।

আমি মনে করি, জামায়াতের চাওয়ার যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে। কারণ একথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে, ভোটের হিসেবে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জামায়াতের অবস্থান তৃতীয়। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পরই যে দলের অবস্থান তাদেরতো একতৃতীয়াংশ জনপ্রতিনিধি থাকা উচিত। কিন্তু জোটগত কারণে তারা ১২টি সিটিতে মাত্র একটি চেয়েছে, যা দলটির অবস্থানের তুলনায় খুবই সামান্য।

অন্যদিকে আওয়ামী জোটের বড় শরিক জাতীয় পার্টি। ভোটের বিবেচনায় দেশের রাজনীতিতে তাদের অবস্থান চতুর্থ বা পঞ্চম। দলটি বর্তমানে বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকলেও আওয়ামী লীগ তাদের দিয়েছে মন্ত্রীত্ব। যা এদেশের রাজনীতির জন্য নতুন মডেল। জোটে থেকেও সম্প্রতি রংপুর সিটি নির্বাচনে দলটি লড়েছে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে। জয়ও হাকিয়ে নিয়েছে তারা। কয়েকটি পৌরসভা ও সংসদ নির্বাচনেও দেখা গেছে একই চিত্র। কিন্তু তাদের নির্বাচনে অংশ নেয়া ও জয় পাওয়া নিয়ে কোনো আপত্তি ছিল না প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের। অনেকের মতে, বিরোধিতার পরিবর্তে রংপুরে জাতীয় পার্টির জয়ে বেশি ভূমিকা ছিল আওয়ামী লীগেরই। সেখানে আওয়ামী লীগের করুনায়ই জিতেছে তারা।

এবার আসি বাম দলগুলোর দিকে। আওয়ামী শিবিরে এমন কিছু রাজনৈতিক দল রয়েছে দেশের ভোটব্যাংকে যাদের কোনো অবস্থানই নেই বললে চলে। তবু সেইসব দলের নেতাদের এমপি ও মন্ত্রীত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। যার জ্বলন্ত প্রমাণ হাসানুল হক ইনু, নুরুল ইসলাম নাহিদ, রাসেদ খান মেনন ও দিলীপ বড়ুয়া। যারা এককভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে হলে কখনোই সংসদও আসতে পারতো না। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের জোট শরিকদের মূল্যায়ণই তাদের এই সুযোগ দিয়েছে।

এখন কথা হলো আওয়ামী লীগ যদি তার শরিকদের ভোট ব্যাংক না থাকা স্বত্ত্বেও অনেকগুলো এমপি ও মন্ত্রীত্ব দিতে পারে জামায়াতকে একটি সিটি করপোরেশন ছাড়তে এত আপত্তি কেন বিএনপির। 

এবার আসি জোটের ত্যাগের হিসেবে। বিগত দশ বছরের ইতিহাস ঘাটলে আওয়ামী লীগের শরিকদের জোটে খুব একটা ত্যাগের উদাহরণ চোখে পড়ে না। জোটকে দেয়ার তুলনায় তাদেরকে জোট থেকে বেশি নিতেই দেখা গেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগকে কখনোই দেখা যায় না তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে।

অপরদিকে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে জোটের টানা আন্দোলনে সর্বোচ্চ অবস্থান দেখা যায় জামায়াতের। এর আগেও জোটের সব কর্মসূচিতে সরব দেখা মিলেছে তাদের। এসময় আন্দোলনে ভালো ভূমিকা রাখতে গিয়ে ব্যাপক জুলুম নির্যাতন সহ্য করেছে দলটির নেতাকর্মীরা। কিন্তু এর বিনিময়ে জোটের কাছ থেকে কিছুই পায়নি দলটি। জামায়াত যখন চরম বিপদে ছিল তখনও কোনো সহযোগিতা করেনি বিএনপি। যখন দলটির প্রথম সারির নেতাদের ফাঁসি হয় তখনও জোটের প্রধান দল বিএনপিকে কোনো বিবৃতি দিতে দেখা যায়নি, মিলেনি একটু সান্তনাও। বরং বিএনপির অনেক নেতা জামায়াতকে রাজাকার বলে বিরুপ মন্তব্য করেছে। যার জন্য কখনো প্রতিবাদ করতেও দেখা যায়নি তাদের। অবস্থার পর্যবেক্ষণে সহযেই বলা যায়, বিএনপি জোটে কোনো প্রাপ্তি নেই জামায়াতের।

প্রাপ্তিতো পরের কথা বিএনপি নেতারা এখন এমন ভান করছেন যেন জোটে জামায়াতের কোনো অবদান নেই। তবে বিএনপি স্বীকার করুক আর না করুক ইতিহাস সাক্ষী দিবে জোটের জন্য জামায়াতের ত্যাগ কতটুকু। তবে একথা বলতেই হয় যে, বিএনপি এখনো জোট করতে চাইলে অনেক দল পাবে কিন্তু জামায়াতের মতো শরিক আর পাবে না। তাই এখনই জোটের প্রধান শরিক বিএনপি যদি নমনীয় না হয়ে ১২টির মধ্যে একটি সিটি করপোরেশন দাবি করা নিয়ে জামায়াতের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটায় তাহলে এ সিদ্ধান্ত হবে দলটির জন্য সবচেয়ে আত্মঘাতী। নিসন্দেহে এখন বিএনপি-জামায়াতের কেউই ভালো নেই। এখন নিজেরা নিজেরা বিবাদে লিপ্ত হলে বিরোধীপক্ষ সুযোগ পেয়ে যাবে। তাই দেশের গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে সামান্য বিষয় নিয়ে নিজেরা বিবাদে লিপ্ত না হয়ে সমস্যার দ্রুত সমাধান করা দরকার। আর জোটের বড় দল বা বড় ভাই হিসেবে সেই দায়িত্ব নিতে হবে বিএনপিকেই। আবারো বলছি ১২টি সিটিতে মাত্র একটি দাবি করে জামায়াত বড় দোষ করে ফেলছে এমনটা ভাবা হবে স্বার্থপরতা। তাই বিএনপির উচিত বৃহত্তর স্বার্থে সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে জামায়াতের প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়ে এ বিতর্কের অবসান ঘটাবে বিএনপি। জোটের অভিভাবক হিসেবে এটা তাদেরই দায়িত্ব।

#সোর ব্লগার প্রতিযোগিতা

পঠিত : ১১২২ বার

মন্তব্য: ০