Alapon

গত শতাব্দীতে ইসলামপন্থীদের ভূমিকা কী?

বিশ্বে ইসলামের পতনের প্রায় ১০০ বছর হতে যাচ্ছে। ১ম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে মোটামুটি ইসলাম আর মাথা তুলে কোথাও বেশিদিন থাকতে পারেনি। গত একশ বছর আমাদের ইতিহাস পরাজিত হওয়ার ইতিহাস।


যখন কোন আদর্শ জয়ী অবস্থায় থাকে, ট্রেন্ডে থাকে তখন সবাই সে চালু আদর্শকে গ্রহণ করতে চায়। গত ১০০ বছরে তাই মুসলিম হওয়ার ইতিহাস একেবারেই হাতে গোণা। তাই আমরা দুই একজন ইউরোপিয়ান ইসলাম গ্রহণ করলে সেটা আর্টিকেল আকারে প্রকাশ করতে থাকি। অথচ তার আগের সময়গুলোতে গোষ্ঠীশুদ্ধ মানুষ ইসলামে প্রবেশ করতো।


এই যে ধরুণ তুর্কি অঘুজ গোষ্ঠী যখন একটু একটু করে নেতৃত্বে আসতে শুরু করলো তখন তাদের আদর্শ ইসলাম ছিল না। তখন বিশ্বে চালু আদর্শ ছিল ইসলাম। যেহেতু তারা বিশ্বে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে চাইলো তারা ইসলাম গ্রহণ করেছে।


এরপর তুর্কিরা যখন বহু বছর ধরে বিশ্ব শাসন করছে আরবদের শাসনকে উপেক্ষা করে, তখন বন্য মোঙ্গলদের আক্রমণে তুর্কি শাসন লণ্ডভণ্ড হয়েও আবার ঠিক হয়ে গেছে। কারণ মোঙ্গলরা ট্রেন্ডি আদর্শ গ্রহণ করেছে।


লাস্ট ১০০ বছর মানুষ ইসলাম থেকে দূরে সরেছে কেবল। কারণ ইসলাম ট্রেন্ডে ছিল না। ক্যাপিটালিজম, ন্যাশনালিজম, সেক্যুলারজম ও কম্যুউনিজমের হামলায় দিশেহারা হয়েছি আমরা।


ক্যাপিটালিজম ও ন্যাশালিজম খুব সহজে মানুষকে গ্রাস করে। এর জন্য আলাদা পড়ালিখা বা খুব বেশি আদর্শবান মানুষ হওয়ার প্রয়োজন নেই। একটি ব্যাক্তিগত উন্নয়নে ও আরেকটি জাতিগত উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। এদের সাথে ধর্মের খুব একটা বিরোধ খালি চোখে দেখা যায় না। তাই মুসলিমরা সহজেই এর কবলে পড়ে গিয়েছে। এবং এই দুই জাহেলিয়াতকে ইসলাম বিরুদ্ধ বলতে নারাজ সবাই। এই দুই জাহেলিয়াত কখনোই নিজেদের ধর্মের বিরুদ্ধে বা ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড় করেনি বরং সুযোগমত ইসলামকে ব্যবহার করেছে।


আর বাকী দুটো পুরোটাই ঈমান বিধ্বংসী এবং তারা নিজেদেরকে ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড় করেছে। এরপরও তারা অনেক মুসলিমদের কাছে প্রিয় হয়েছে।


প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়ন খুব শক্তিশালী ছিল। ট্রেন্ডি আদর্শ হিসেবে সবাই কম্যুউনিজম গ্রহণ করেছে বিশেষ করে এই উপমহাদেশের মানুষরা। আফগানিস্তানের মুসলিমরা দলে দলে সবাই কমিউনিস্ট হয়ে সেখানে কমিউনিজমের বিপ্লব করেছে।


৪৭ এ পাকিস্তান গঠনের পর এই আদর্শ সেখানে নিষিদ্ধ হলেও গোপনে এই আদর্শের প্রচার চলতে থাকে। এই আদর্শ যুবক ও ছাত্র সমাজের কাছে বেশ প্রিয় হয়। আওয়ামীলীগ ও মুসলিম লীগে এই আদর্শের ব্যাপক মানুষ ঘাপটি মেরে ছিলো।


সবচেয়ে মজার বিষয় হলো কিছু বিখ্যাত ইসলামপন্থী সেই কমিউনিজমকে ইসলামীকরণের হাস্যকর চেষ্টা করেছিলো। বস্তুত তারা বিদ্বান হিসেবে সমাজে পরিচিত ছিল। এরা বিভিন্ন পত্রিকায় আর্টিকেল ও বই লিখে ইসলামপন্থীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে গিয়েছে।


অতঃপর নিজেরাই একটি দল গঠন করেছিলো খেলাফতে রব্বানী নামে। তাদের এই দল উচ্চশিক্ষিত সমাজে বেশ সাড়া ফেলেছিলো। এই দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন ড মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। এই প্রসঙ্গে শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বলেন, খেলাফতে রব্বানীর এক নেতা তাঁকে বলেছিলেন, আমরা বুঝি না আমরা এত ছাত্রকর্মী তৈরী করি কিন্তু তারা সবাই একটু বুঝজ্ঞান হলেই কমিউনিস্ট হয়ে যাচ্ছে।


তখন শহীদ নিজামী বলেন, আপনারা ইসলামের ভিতরে কমিউনিজমের কথা বলছেন কিন্তু তারা যখন ইসলামে কমিউনিজম খুঁজে পায় না তখন তারা সত্যিকারের কমিউনিস্ট হয়ে যায়। এই দলেরই কালচারাল উইং ছিল তমুদ্দুনে মজলিশ। যাদের বাড়াবাড়িতে এক ভয়ংকর জাতীয়তাবাদের জন্ম হয়েছে। সেই থেকে বাড়তে বাড়তে এক সেক্যুলার রাষ্ট্রের সৃষ্টি।


একসময় সোভিয়েত ভেঙ্গে পড়ে। কিন্তু একই আদর্শের আরেকটি মডেল চীনসহ অনেক দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়। তাদের প্রভাব এই ভূখন্ডসহ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে।


কিন্তু বাংলাদেশে শেখ মুজিব ও জিয়ার আমলে তারা ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়। আর সারা পৃথিবীতেও তারা একটু মিইয়ে পড়ে। মুসলিমদের মধ্যে তাদের প্রভাব অনেক কমতে থাকে।


সেক্যুলারিজম এরই মধ্যে মুসলিমদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়। আগের মতো ইসলামপন্থীদের মধ্যে একটি গ্রুপ আবারো সেই হটকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে আগাতে থাকে। তাদের দাবী ইসলামপন্থী হয়েও সেক্যুলার হওয়া যায়। সারা বিশ্বে এখন মুসলিমরা ও ইসলামপন্থীরা ট্রেন্ডি আদর্শ হিসেবে সেক্যুলারিজমকে গ্রহণ করছে।


লাস্ট একশ বছরে আমাদের শত পরাজয়ের মধ্যেও আশার দিক হলো তিনজন মুজাদ্দিদ। জামাল উদ্দিন আফগানী, হাসান আল বান্না আর আবুল আ'লা মওদুদী। তাদের সংগ্রাম ও আন্দোলন সবার কাছেই পরিষ্কার।


গত একশ বছরে এই তিনজন মুজাদ্দিদের সবচেয়ে বড় কাজ ছিলো মুসলিমদের মুসলিম রাখা। মুসলিমদের মধ্য থেকে যাতে ইসলাম হারিয়ে না যায় সে চেষ্টা করা।


আলহামদুলিল্লাহ। গত শতাব্দি আমাদের না হলেও এই তিন মুজাদ্দিদের উসিলায় মুসলিমরা সঠিক পথে থেকেছে। আরব রাষ্ট্রগুলোতে ইখওয়ান এবং এশিয়াতে জামায়াত যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছে।


জামায়াত আফগানিস্তানের মুসলিমদের আবারো ইসলামপন্থী করে তুলেছে। পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াতে ইসলামী আদর্শের মানুষ তৈরী করেছে অবিরত। বাংলাদেশেসহ এশিয়ার সব মুসলিম দেশে কমিউনিস্টদের আদর্শিক পরাজয় হয়েছে জামায়াতের কাছে।


১০০ বছর ধরে একটি আদর্শ ক্রমাগত পরাজিত হতে থাকলে সেই আদর্শের মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কিন্তু ইসলামকে তো আল্লাহ মুছে ফেলবেন না দুনিয়া থেকে এটা আল্লাহর ওয়াদা। আর এই কাজ আল্লাহ তায়ালা বাস্তবায়ন করেছেন ইখওয়ান ও জামায়াত দ্বারা।


আমি খুব আশাবাদী। এই শতাব্দি ইসলামের শতাব্দি। যারা পরাজিত অবস্থায় একশ ধৈর্য ধরে থাকতে পারে, আল্লাহ তাদের বিজয় দিবেন ইনশাআল্লাহ। ইসলামেই থাকুন। কোন জাহেলিয়াতকে টেনে নিবেন না।


ক্যাপিটালিজম, ন্যাশনালিজম, সেক্যুলারজম ও কম্যুউনিজমের থাবা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। কোন ইজমের সাফল্য দেখে নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন না। মনে রাখবেন আপনার আদর্শই সর্বোত্তম আদর্শ।

পঠিত : ৬২৬ বার

মন্তব্য: ০