Alapon

ফাতেমা আল ফিহরিঃ যে মুসলিম নারী বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা

যখনই কোনো সফল মানুষের নাম আমাদের কাছে জিজ্ঞেস করা হয়, তখনই আমরা সাধারণত এমন নামের অধিকারীদের চিন্তা করি যারা পুরুষ। অবশ্যই আমরা তাদের কথা স্মরণ করব, কিন্তু পাশাপাশি সভ্যতার অগ্রগতিতে নারীরও যে অবদান রয়েছে এবং তারাও যে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের সাফল্যের সাক্ষর রেখেছেন, আমাদের তা একবারেই ভুলে যাওয়া উচিত হবেনা। সফল পুরুষের পাশাপাশি আমাদের সফল নারীদের কথাও স্মরণ রাখা একান্ত দায়িত্ব।  

উম্মুল বানীন বা ‘শিশুদের মা’ হিসেবে পরিচিত ফাতেমা আল ফিহরি ছিলেন মরক্কোর ফেজের অধিবাসী একজন শিক্ষানুরাগী বিদূষী নারী। তিনি ছিলেন বিশ্বের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা, যেটি বর্তমানেও তার শিক্ষা কার্যক্রম চালু রেখেছে। বর্তমান তিউনিসিয়ার কায়রোয়ানে আনুমানিক ৮০০ ঈসায়ীতে ফাতেমার জন্ম। পরবর্তীতে তার পরিবার ফেজে গিয়ে বসবাস শুরু করে। তার পিতা মুহাম্মদ আল ফিহরী ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী। তার পিতার মৃত্যুর পর পিতার বিশাল সম্পত্তির মালিক হন তিনি ও তার বোন মরিয়ম আল ফিহরী।

তারা দুইজনেই ঠিক করেন, তারা তাদের প্রাপ্ত অর্থ জনকল্যাণমূলক কাজে খরচ করবেন। মরিয়ম একটি মসজিদ নির্মাণ করেন, যেটি বর্তমানে আল  আন্দালুস মসজিদ নামে পরিচিত। ফাতেমা তার অর্থ শিক্ষাক্ষেত্রে খরচ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ৮৫৯ ঈসায়ীতে তিনি আল কারউন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করেন। কারো কারো মতে, বিশ্ববিদ্যালয়টি শুরুতে একটি মসজিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পরবর্তীতে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়।

এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাই বিশ্ববিদ্যালয়টির একমাত্র সাফল্য নয় বরং এর বিষয়ভিত্তিক অধ্যয়নের প্রসারতার কারণে শীঘ্রই এর খ্যাতি সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। মুসলমানদের পাশাপাশি অনেক অমুসলিম জ্ঞানসাধকও এই বিশ্ববিদ্যালয় হতে শিক্ষাগ্রহণ করেন। কুরআন, হাদীস ও ইসলামী আইনশাস্ত্রের পাশাপাশি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল, জ্যোর্তিবিজ্ঞান, ব্যাকরণ, রসায়ন, চিকিৎসাশাস্ত্র, গণিত, সংগীতসহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে পাঠদান করা হত।  

৮৮০ ঈসায়ীতে ফাতেমা ফেজ শহরেই ইন্তেকাল করেন। তার ইন্তেকালের ১১৩৭ বছর পার হলেও তার প্রতিষ্ঠিত আল কারউন বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো শিক্ষাকার্যক্রম চলমান। মরক্কোর প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে আল কারউন বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। মরক্কোর নারীদের কাছে এখনো ফাতেমা একজন অনুসরণীয় উচ্চাকাংক্ষী অনুপ্রেরণাদানকারী নারীর আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন।

পঠিত : ১১৯২ বার

মন্তব্য: ০