Alapon

তালিবানঃ একই সাথে মাদক ও ইসলামের লালন করে যারা!

শিরোনামটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক সেই সাথে ভয়ংকরও। তালিবান, যারা মনে করে তারাই পারে একমাত্র পৃথিবীতে ইসলামকে নিয়ে আসতে। তবে তারা কতটুকু ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করেছে সেটা প্রশ্নবিদ্ধ হলেও তারা সারা পৃথিবীতে এখন হেরোইন সাপ্লাইয়ের কাজ করছে। এই কাজটা তারা বেশ ভালোভাবেই পারছে। এই নিয়ে কারো কোন কনফিউশন নেই। 

আফগানিস্তানের জন্য একটি দুঃখজনক ঘটনা হলো আফিম বা পপি চাষ। আফিম চাষে আফগানিস্তান সেরা। প্রতি বছর বিশ থেকে পঁচিশ হাজার টন আফিম উৎপাদন করে তারা। আর এই আফিমের মূল ক্রেতা হলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। 

আফগানিস্তানের মানুষ আফিম চাষ শিখেছে মূলত কমিউনিস্ট শাসনামলে। আফিম চাষ লাভজনক হওয়ায় বহু কৃষক সহজেই এই চাষের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে। আফগানিস্তান জামায়াতের নেতৃত্বে দীর্ঘ যুদ্ধের পর ১৯৯২ সালে কমিউনিস্ট শাসনের পতন হলে জামায়াতের আমীর শহীদ বুরহান উদ্দিন রব্বানী প্রেসিডেন্ট হন। এবং আফগানিস্তান ইসলামী রাষ্ট্রে রূপ নেয়। 

আফগানিস্তান জামায়াতের সাবেক আমীর শহীদ প্রেসিডেন্ট বুরহান উদ্দিন রব্বানী

জামায়াতে ইসলামী আফগানিস্তানে পপি চাষ নিষিদ্ধ করে। কিন্তু অল্প কিছুদিন পরেই আবারো আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ইসলামী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোন কারণ ছাড়াই বিদ্রোহ করে হিজবে ইসলামের প্রধান গুলুবুদ্দিন হেকমতিয়ার। দেশের বিশৃঙ্খল অবস্থায় CIA স্পন্সরড আল কায়েদার তত্ত্বাবধানে শুরু হয় তালিবানের উত্থান। 

হিজবে ইসলামের প্রধান গুলুবুদ্দিন হেকমতিয়ার

বিষয়টা তালিবান সরকারের ইমেজের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ায় তারা এটা পপি চাষ বন্ধ করার ব্যবস্থা করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফলতা বেশি আসে নি। তারপরও তারা চেষ্টা চালিয়ে এসেছিলো। 
১৯৯৬ সালে বিদেশী শক্তির (আমেরিকা ও পাকিস্তান) সহায়তায় তালিবান জামায়াতকে হটিয়ে সরকার গঠন করে। তখন অনেক মার্কিন NGO তালিবান সরকারের অনুকূলে যুদ্ধবিদ্ধস্ত আফগানিস্তানকে পুনর্গঠনে কাজ শুরু করে। তারাই আবার কৃষকদের টাকা দিয়ে পপি চাষে উদ্বুদ্ধ করে। 

তালিবান আমলে আবারো পপি চাষ শুরু হয়। বেশি লাভ পায় বলে অল্প দিনের মধ্যেই প্রচুর কৃষক পপি চাষ শুরু করে। আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান ও ইরান সীমান্তের কৃষকেরাও এই চাষ শুরু করে। মাদক চাষের জন্য পৃথিবীতে এই অঞ্চলের নাম নতুন নাম হয় গোল্ডেন ক্রিসেন্ট। 

হেলমান্দে আফগানিস্তানের ৮০% আফিম পপি উৎপন্ন হয়। তালিবানদের মূল এলাকা হেলমান্দ, এটা এক বিরাট মাদক কারখানা। হেলমান্দ বলতে বোঝায় মাদক, পপি ও তালিবান। 

২০০১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসন হওয়ার পর আফগানিস্তানে আবারো পপি চাষ বেড়ে যায়। এবার মার্কিনীরা পরোক্ষ ভূমিকা রাখলেও প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে তালিবানরা। এখন তালিবানরাই সবচেয়ে বড় মাদক ব্যবসায়ী। এর মাধ্যমে তাদের আয় হয় সবচেয়ে বেশি। 

কালক্রমে এখন আফগানিস্তান সবচেয়ে বেশি আফিম উৎপাদনকারী দেশ। আফগান সরকার এটি নিয়ন্ত্রনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। আফগানিস্তানে যা আফিম তৈরি হয় তার ৯৫% তৈরী হয় তালিবান নিয়ন্ত্রনাধীন এলাকায়। 

আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণি বলেছেন, মাদক না থাকলে অনেক আগেই আফগান যুদ্ধ শেষ হয়ে যেত। এখন আমেরিকা ও তালিবান উভয়েই মাদকের সাথে যুক্ত। 

তবে আশার দিক হলো আফগান সরকার এই আফিম চাষ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে কয়েক বছর ধরে। আফিম চাষ লাভজনক হওয়ায় চাষীরা এই চাষে খুব আগ্রহী। আফগান সরকার এখন গোলাপ চাষে উদ্বুদ্ধ করছে কৃষকদের। 


আমেরিকার সৈন্যরা অল্প সময়ের মধ্যে পুরো আফগানিস্তান দখলে নিলেও অল্প কিছু অঞ্চলে তালিবানরা বহুদিন শাসন করছে। আফগান সরকার মনে করে তালিবানদের বাঁচিয়ে রাখছে মার্কিনীরাই। তালিবানরা নিশ্চিহ্ন হলেই মার্কিনীদের আফগানিস্তান ছাড়তে হবে। কিন্তু সেটা মার্কিনীরা চায় না। 

একদিকে কপট যুদ্ধ লাগিয়ে রাখছে অন্যদিকে পপি চাষ করে যাচ্ছে। কানাডায় পাওয়া হেরোইনের ৯০ শতাংশ ও যুক্তরাজ্যের ৮৫ শতাংশ পরিমাণ হেরোইনের উৎস আফগানিস্তান। ২০১৭ সালের ইউরোপীয় মাদক রিপোর্ট মতে ইউরোপে পাওয়া হেরোইনের অধিকাংশই গোল্ডেন ক্রিসেন্টে উৎপাদিত। 

বর্তমান আফগানিস্তানে তালিবানদের সাথে মার্কিনীদের যুদ্ধ তালিবানদের জন্য আশির্বাদ। এখন হেলমান্দের একজন তালিবান কমান্ডার গড়ে মাসে দশ লাখ ডলার আয় করে মাদক ব্যবসায়ের মাধ্যমে। 

আফিম ছেড়ে এখন গোলাপের চাষ শুরু করে দিয়েছে চাষীরা 

তবে আশার দিক হলো আফগান সরকার এই আফিম চাষ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে কয়েক বছর ধরে। আফিম চাষ লাভজনক হওয়ায় চাষীরা এই চাষে খুব আগ্রহী। আফগান সরকার এখন গোলাপ চাষে উদ্বুদ্ধ করছে কৃষকদের।


দেশটির অনেক কৃষকই আফিম চাষ বাদ দিয়ে গোলাপ চাষে মজেছেন। সে গোলাপ থেকে তৈরি হচ্ছে গোলাপজল আর তেল। সেগুলো ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে।


নানগারহার আফগানিস্তানের একটি প্রদেশ। এটি পাকিস্তানের সীমান্তে এবং তালিবানদের উৎপাতও রয়েছে এখানে। সেখানে বহুদিন ধরে সরকার আফিমমুক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে।


‘নানগারহারের জন্য গোলাপ’ প্রকল্পের আওতায় চাষীরা আফিমের জগৎ ছেড়ে গোলাপের জগতে পা রেখেছেন। এটি আফগানিস্তান ও জার্মানির যৌথ উদ্যোগ। নানগারহারের আটশর বেশি চাষী গোলাপ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। চাষীরা জানিয়েছেন সরকারি সুবিধা ও কষ্ট কম হওয়ায় এই চাষ পপি চাষের চাইতেই লাভজনক হচ্ছে দিনকে দিন।


আফগানিস্তানে তালিবান নির্মূল হবে, যুক্তরাষ্ট্র বের হয়ে যেতে বাধ্য হবে। শুধু আফগানিস্তান নয়, সারা পৃথিবী মাদকমুক্ত হবে। এই কামনাই করছি।

পঠিত : ১৩৭৭ বার

মন্তব্য: ০