Alapon

ইতেওয়ানঃ সিউলের বুকে একখন্ড মুসলিম দুনিয়া

সিউলে বসবাস করা মুসলমানদের এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজারেরই বসবাস ইতেওয়ান জেলায় যাদের এক তৃতীয়াংশই নৃত্বাত্ত্বিক দিক হতে কোরীয়। রাজধানী সিউলের এটি একটি ব্যস্ততম জেলা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম মসজিদ, সিউল কেন্দ্রীয় মসজিদেরও অবস্থান এই জেলায়। ১৯৭৬ সালে এই মসজিদটি প্রথম নামাজের জন্য খুলে দেওয়া হয়। কোরিয়ার হালাল রেস্টুরেন্টগুলোর অনেকগুলোই ইতেওয়ানে অবস্থিত। এরমধ্যে বিখ্যাত ‘ঈদ হালাল রেস্টুরেন্ট’ যেটি এক কোরীয় মুসলিম পরিবার পরিচালনা করছে।কোরীয় উপদ্বীপের মুসলিম অধিবাসীরা সংখ্যায় ক্ষুদ্র হওয়া সত্ত্বেও তা আমাকে এই দেশের সংস্কৃতি ও দেশটিকে জানতে কখনোই বাধাগ্রস্ত করেনি।

বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ায় মোট ১৫টি মসজিদ রয়েছে। এছাড়া বিমানবন্দর, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বড় বড় অনেক শপিং কমপ্লেক্সে নামাজের জায়গা রয়েছে।

ছবিঃ কোরিয়ায় অবস্থিত সিউল কেন্দ্রীয় মসজিদ 

ওলা বরা সঙ

ছবিঃ ওলা বোরা সঙ

ওলা বোরা সঙ, একজন কোরিয়ান মুসলিম এবং আরবী ভাষার শিক্ষক। কোরিয়ায় অমুসলিমদের ইসলাম সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর তিনি প্রদান করেন। সিউল কেন্দ্রীয় মসজিদে তার সাথে আমার অল্প কিছুসময় আলাপ হয়। তার সাথে কথা বলার মধ্য দিয়ে আমি প্রথমবারের মত অনুভব করলাম, ইসলাম কতই সংস্কৃতি নিরেপেক্ষ!

বিশেষ কোনো ক্ষুদ্র ভৌগোলিক সংস্কৃতির সাথে ইসলাম যুক্ত নয়। তিনি একজন মুসলমান হওয়ার পাশাপশি একজন কোরিয়ান। অনেক কোরীয় ও নন-কোরীয় ব্যক্তিই প্রথম দর্শনে এতে অবাক হন। কিন্তু তার বেশভূষা আমাকে বরং কোরীয় ঐতিহ্যবাহী পোশাকের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।  

হানবক- কোরিয়ার ঐতিহ্যবাহী পোশাক


ছবিঃ হানবক পোশাকের প্রদর্শনী

সম্প্রতি কোরীয় টেলিভিশনের এক অনুষ্ঠানে তরুণ কোরীয় নারীরা জানায়, যখন তারা হানবক পরিধান করে, তখন তারা তাদের নিজেদের মধ্যে সম্মান এবং মর্যাদাবোধের অনুভূতি অনুভব করে। এটি কোরিয়ার ঐতিহ্যবাহী শালীন পোশাক এবং অনেকাংশেই ইসলাম নির্দেশিত পোশাকের সাথে এর সাদৃশ্য রয়েছে। মুসলিম মহিলাদের হিজাবের মতই কোরীয় নারীরা এই পোশাকের সাথে মাথা ঢাকার জন্য ‘জাঙ-ওট’ নামক একপ্রকার কাপড় পরিধান করে।

যদিও বর্তমানে কোরীয়রা পশ্চিমা পোশাকে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্যটক ও কোরীয়দের মাঝে এই পোশাক খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কোরিয়ার বিভিন্ন পর্যটন গন্তব্যে এই ঐতিহ্যবাহী পোশাকে পর্যটকরা অনেকসময় বিনা খরচে প্রবেশ করতে পারে। বর্তমানে কোরীয় ফ্যাশন ডিজাইনাররা এই ঐতিহ্যবাহী পোশাকের  আধুনিকায়ন ও সর্বসাধারণের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে নিয়ে আনতে চেষ্টা করছেন ।

কোরীয় সংস্কৃতি ও ইসলামের সেতুবন্ধন



ধর্মভীতির এই যুগে কোরীয় মুসলমানরা সক্ষম হয়েছেন কোরীয় জনগণকে ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে।  আমার একজন প্রিয় চিত্রশিল্পী মুনা হুনমিন বে এবজন কোরীয় মুসলিম এবং বর্তমানে তিনি আরব আমিরাতে বাস করছেন। তার শৈল্পিক দক্ষতার সাহায্যে তিনি চেষ্টা করছেন ইসলাম ও কোরীয় সংস্কৃতির মধ্যে সাদৃশ্য স্থাপন করতে।  

তিনি জানান, প্রথম যখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন নিজেকে খুব একাকী বলে অনুভব করতেন। কিন্তু যখন সুন্নাহ ও হাদীসের অধিক বিস্তারিত পাঠ শুরু করলেন, তখন তিনি আবিষ্কার করলেন, ইসলাম ও কোরীয় সংস্কৃতি কতইনা কাছাকাছি! ইসলাম ও কোরিয়ার এই সাদৃশ্য তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন তার চিত্রকর্মের সাহায্যে।

তিনি আরো জানান,

‘কোরিয়ার মানুষ কখনো কখনো আমার ধারণার প্রকাশে নেতিবাচকতা প্রকাশ করে। যার ফলে আমি  দুরপ্রাচ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের মেলবন্ধন ঘটাতে আরো নির্ভরযোগ্য সূত্রের খোঁজ করি।’  

অনেকসময় ঐতিহাসিক বিভিন্ন ঘটনাকেও তিনি তুলে আনেন যার মাধ্যমে কোরীয় সংস্কৃতি ও ইসলামের মধ্যকার সম্পর্ক উন্মোচিত হয়।  

তার সাথে কথা বলে আমি অনেক কিছু বুঝতে পারি। তিনি তার অন্তরে একইসাথে ইসলামী বিশ্বাস ও কোরীয় সংস্কৃতির ধারন ও লালন করছেন। এর মধ্য দিয়েই প্রকাশিত হয় ইসলামের সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতার। একজন মুসলিম কোরীয় হওয়ার সেরূপ সুযোগ রয়েছে যেরূপ সুযোগ একজন মুসলিম আরব বা অন্য যেকোনো দেশের মুসলমান হওয়ার মধ্যে রয়েছে। বিশ্বের নির্দিষ্ট কোনো জাতি বা সংস্কৃতির মধ্যে ইসলাম সীমাবদ্ধ নয় বরং ইসলামের আবেদন বিশ্বের সকল সংস্কৃতির মানুষের জন্যই।

পঠিত : ৯৪১ বার

মন্তব্য: ০