Alapon

ডিপ স্টেটঃ রাষ্ট্রের ভেতর আরেক রাষ্ট্র

যাক, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনটা শেষ হলো। অবশ্য এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে তিক্ততা ও বিভক্তির সূচনা হলো, তার রেশ কত বছর থাকবে, তা কেউ বলতে পারছেন না। এই প্রতিযোগিতায় যাঁরা জিতলেন, তাঁদের চেয়ে বহু গুণ বেশি লোক হারলেন। এই নির্বাচনে যাঁরা প্রকৃত অর্থে জিতলেন, তাঁরা আসলে কারা তা কী জানেন?

তাঁরা 'ডিপ স্টেট'। কিন্তু আপনার মাথায় প্রশ্ন আসতেই পারে আবার কারা? এই প্রশ্নের উত্তরটা পাকিস্তানের সদ্যবিদায়ী প্রেসিডেন্ট নওয়াজ শরিফ মুখ থেকে শুনে আসি, তিনি কিছুদিন আগে বলেছিলেন, পাকিস্তান রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে আছে আরেক রাষ্ট্র, তারও ভেতরে আরেক রাষ্ট্র। এটিকে সবাই ‘ডিপ স্টেট’ বলে জানে। আদতে এই ডিপ স্টেটই পাকিস্তানের চালিকাশক্তি। এই ডিপ স্টেট বরাবরই চেয়েছে পাকিস্তানের সরকারগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে। এ জন্য তারা সর্বোচ্চ অনুগত নেতা চায়। আপাতত ইমরানের চেয়ে অনুগত কেউ পাকিস্তানে আর নেই। আসল সত্যিটা যা-ই হোক, পাকিস্তানের জনগণের ধারণা, ইমরানকে ক্ষমতায় বসাতেই সেনাবাহিনী ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি করেছে।

বিশ্বাস করুন ইমরান খানের উপর আমার কোন ক্ষোভ নাই। কিন্তু ‘আমার দুঃখ হয়, কেন আমি ইসলামাবাদের ভোটার হলাম না। সেখানকার ভোটার হতে পারলে আমি ইসমত শাহজাহান অথবা অমর রশীদের মতো মানবাধিকার আন্দোলনকর্মীকে ভোট দিতে পারতাম। দুজনের কেউই নির্বাচনে জিততে পারেননি। কিন্তু তাঁদের মতো কিছু নেতা এখনো আছেন, যাঁরা সত্যিকার অর্থে জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি চান।’

‘আমার আক্ষেপ হয়, কেন আমি করাচির ভোটার হলাম না? যদি হতাম তাহলে জিবরান নাসিরের মতো উদারপন্থী প্রগতিশীল নেতার সঙ্গে থেকে নির্বাচনী প্রচারপত্র বিলি করতে পারতাম।’

কেন আমি এই কথা বলছি জানেন?
ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গদিতে বসলেও তাঁর ওপর সেনাবাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে। তাদের ইচ্ছামাফিক চলবে সরকার। এটি যদিও পাকিস্তানের জন্য নতুন কোনো বিষয় নয়। তবে এবারের বিষয় ভিন্ন। ইমরান যে ছোট ছোট দলগুলোর সঙ্গে জোট বাঁধতে যাচ্ছেন, তারা কট্টরপন্থী। ইমরান নিজে পশ্চিমা জীবনযাপনে অভ্যস্ত হলেও সেনাবাহিনীর চাপে পড়ে এই শরিকদের কথা তাঁকে মানতে হবে। এটি পাকিস্তানের মানবাধিকারকর্মীদের দারুণভাবে আহত করছে। সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব আমাকে দারুণভাবে আহত করছে।

এখন পাকিস্তানিদের সামনে বিরাট প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, সরকার পরিবর্তনে তাদের ভূমিকা কতটুকু? তারা কি সরকার পরিবর্তনের নিয়ামক নাকি সেনাবাহিনী? যদি সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন 'ডিপ স্টেট' সবকিছুর নিয়ন্তা হয়ে থাকে, তাহলে এই গণতন্ত্র এবং এই ভোটের কী মূল্য আছে? এই অবস্থার পরিবর্তন কবে হবে?

পাকিস্তানের মানুষের কাছে এই প্রশ্নগুলোর জবাব পরিষ্কার নয়। কিন্তু জবাবগুলো পরিষ্কার হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজকের এই নির্বাচনে যাঁরা ভোট দিয়েছেন, তাঁরা এর মাধ্যমে এই নির্বাচন পদ্ধতিকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এর বাইরে তাঁদের করারও কিছু ছিল না।

পাকিস্তানের অধিকাংশ মানুষ বুঝতে পারছে, সরকারের নেতৃত্বে যাঁরা আসছেন, তাঁরা কোটি কোটি পাকিস্তানির সমর্থন নিয়ে নয়, বরং অল্প কিছুসংখ্যক ক্ষমতাশালীর আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে আসছেন। অর্থাৎ ভোটের ফল যা-ই হোক, জনগণ মনে করে, ক্ষমতার চেয়ার বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর হাতে নয়, মুষ্টিমেয় লোকের হাতে রয়ে গেছে।

পাকিস্তানের মানুষ এই অবস্থার অবসান চায়। কিন্তু ডিপ স্টেটের কবল থেকে পাকিস্তান কবে মুক্তি পাবে, তা তারা জানে না। 

পঠিত : ৭৫৯ বার

মন্তব্য: ০