Alapon

এই আন্দোলনের পরিণতি কী..?

স্কুল ছাত্ররা যখন নিরাপদ সড়কের দাবী নিয়ে রাস্তায় নামলো, আওয়ামী মন্ত্রী শাজাহান খান হাসিমুখে তা উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করলো। ভাবল তার হাসিমুখ ভুবন মাতিয়ে বাচ্চাদের ঘরে পাঠিয়ে দিবে। বাচ্চারা ঘরেতো ফিরলই না, বরং দাবী করে বসল ৯ দফা, মন্ত্রীর রেজিগ্নেশান আর ক্ষমাপ্রার্থনা।


শাহজাহান খান চাইল ক্ষমা, কিন্তু সাথে ডাকাল পরিবহন ধর্মঘট। এতে ছাত্ররা তার ক্ষমা মেনে নিল না। সরকার নিরাপদ সড়কের প্রতিশ্রুতি দিলেও মাঠে ছাত্রদের প্রতিহত করতে আর ভয় দেখাতে নামালো পুলিশ। ছাত্ররা বুঝে গেলো সরকার মুখে যাই বলুক, করবে সেই পুরাতন যেই কে সেই। এবার স্কুলের সাথে সাথে কলেজের ছাত্ররাও মাঠে নেমে বলল "পুলিশ কোন চ্যাটের -ল।" ছাত্ররা মাঠ ছাড়লো না।


হলুদ মিডিয়া যত এসব ঘটনা চেপে যেতে লাগল, সোশ্যাল মিডিয়া তত সরগরম। এবার আওয়ামীরা মাঠে নামালো তাদের সোশ্যাল মিডিয়া কর্মী আর মটিভেশোনাল স্পিকারদের। মাঠে নামলো সুলায়মান সুখন, সালমান মুক্তাদির, সাকিব আল হাসানেরা (কেবল সশ্যাল মিডিয়ায়)। লাভ তো হলই না, বরং এসব জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যক্তিত্ব হারালো তাদের রেপুটেশান। রাস্তায় নামা ছাত্ররা এক পয়সার দামও দিল না এদের। ছাত্ররা মাঠেই থাকল। রাতে বাসায় গিয়ে কেবল ঘুমায়, পরেরদিন আবারও রাস্তায়।


ছাত্ররাই শুরু করল লাইসেন্স চেক, গাড়ির কাগজপত্রের বৈধতা চেক, ট্রাফিক কন্ট্রোল। এসব কাজ তারা সিম্বলিক হিসাবে করল, দেখিয়ে দিল আইন সবার জন্য সমান, হোক সে ডাকসাইটে কোন মন্ত্রী, আর্মি, জজ, পুলিশ, কিংবা সাধারন কোন মানুষ । এতদিন যা অসম্ভব মনে হয়েছে সবার কাছে, তাকে সম্ভব করে দেখাল এই ছোট ছোট বাচ্চাগুলো। ধূলিসাৎ করে দিল অনেক স্ট্যাটাস কো।


হাসিনা সরকার স্কুল বন্ধ করল, লাভ হলো না; আইন বানাবো বলল, লাভ হলো না; ঘাতক জাবালে নুরের বাস দুটোর লাইসেন্স বাতিল করল, লাভ হলো না। ছাত্ররা মাঠেই থাকল, তারা হাসিনা সরকারকে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না। আর পারবেই বা কেন? সংসদে দাড়িয়ে শেখ হাসিনা মাত্র তিন মাস আগেই কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়ে সেখান থেকে পল্টি মেরেছে। ভিসির বাসায় তাণ্ডব চালিয়েছে লীগের গুণ্ডারা, সরকারি বাহিনী রিমান্ডে নিয়েছে আর কারাগারে পুরেছে কোটা আন্দোলনকারীদের। এমনকি লাশও ফেলেছে। তাই হাসিনার মুখের কথার কোন মুল্যই আজ নেই।


নেতৃত্বহীন, সমন্বয়হীন বাচ্চাদের এই আন্দোলন ব্যাপকহারে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে সফল হয়ে পড়ে ইতিমধ্যে। যা দেখে হাসিনা সরকারের মাথা গরম হয়ে পড়ল। অবশেষে হাসিনা মাঠে নামালো তার কালোবাহিনি তথা যুবলীগ আর ছাত্রলীগ। আগের দিন থেকেই বাচ্চারা জানত এরা মাঠে নামতে যাচ্ছে, কিন্তু তারা বড়দের মতন ভিতু নয়, তারা রাজনৈতিক দলের নেতাদের মতন ভয়ে বাসায় বসে থাকেনি।


একদিকে যুবলীগ আর চ ছাত্রলীগ মাথায় হেলমেট আর হাতে লাঠি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ল বাচ্চাদের উপর অপরদিকে সরকার এসব খবর গুজব হিসাবে প্রচার চালাতে লাগল। একদিকে দেশের মিডিয়া খবর চেপে যেতে লাগল, অপরদিকে আন্তর্জাতিক মিডিয়া খবর কাভার করে দিল। একদিকে সরকার ৫৭ ধারায় মামলা করে দিল সোশ্যাল মিডিয়ার নিউজ সাইট থেকে শুরু করে কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে, অপরদিকে একই খবর ছাপালো আল জাজিরা, বিবিসি, টেলিগ্রাফ, ওয়াশিংটন পোস্ট, এমনকি ফক্স নিউজ পর্যন্ত ।


এবার মাঠে নামার ঘোষণা দিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। আর খবর আর যোগাযোগ ব্যাহত করতে সরকার কমিয়ে দিল ইন্টারনেটের গতি। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-অভিভাবক-জনতা যদি সব ভয় আর দ্বিধা কাটিয়ে স্কুল-কলেজের ছাত্রদের পাশে শক্তভাবে মাঠে নেমে পড়তে পারে, ছাত্রলীগ-যুবলীগের সাথে পাল্টাপাল্টি লাঠি চালাতে পারে, তাহলে লীগারদের সব ডিফেন্সের মহাকাল চলে আসবে।


স্কুল কলেজের বাচ্চারা পুলিশকে বানিয়েছে চ্যাটের -ল, আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যদি যুবলীগ আর ছাত্রলীগকে বানাতে পারে চ্যাটের -ল, তাহলে বাকি থাকে আর্মি। সরকার তাদের মাঠে নামালে সেই সাথে জারী করবে ১৪৪ ধারা।


আর তারপর? ............... এসব এখন নির্ভর করছে পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের উপরে।


পঠিত : ১১৭১ বার

মন্তব্য: ০