Alapon

আওয়ামীলীগ সরকার পুরোপুরি গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে

টানা দশ বছরের শাসনে আওয়ামী লীগ সরকার এখন অনেকটাই জনবিচ্ছিন্ন। বিশেষ করে ৫ জানুয়ারির ইলেকশনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ১৫৪ এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর শেখ হাসিনা সরকার জনগণের স্বার্থ দেখা প্রায় বন্ধই করে দিয়েছে। সরকার টিকে আছে পুলিশ ও দলীয় ক্যডারদের উপরে। এজন্য পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তা সুযোগ সুবিধা বাড়িয়েছে বহুগুণে। দলীয় লোকদের জন্যতো লুটপাটের ব্যবস্থা খোলাই আছে। 

আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে মঈন-ফখরুদ্দিনদের সাথে সমঝোতা করে ক্ষমতায় এসেই প্রথমে সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের এতদিনের স্বৈরাচারী আচরণের মূল ক্ষমতার জায়গা এটাই। বিডিয়ার বিদ্রোহের নাম করে এদেশের প্রায় ৫৭ চৌকশ সেনা অফিসারসহ খুন করা হয় ৭৬ জনকে। এই ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে চাকুরী হারায় আরো প্রায় ১০০ সেনা অফিসার। এরপর থেকেই মূলত সেনাবাহিনী তাদের মেরুদন্ড হারিয়ে ফেলেছে এবং আওয়ামীলীগ সরকারের পোষ্য বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। এই নিয়ে সাবেক সেনাবাহিনী সদস্য, সাজাপ্রাপ্ত বিডিয়ার সদস্য এবং জনমানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে। 

বর্তমান সেনাবাহিনীকে হাতে রাখার জন্য সরকার বহু উন্নয়ন প্রজেক্ট সেনাবাহিনীর হাতে ছেড়ে দিয়েছে। ফলে সেনা অফিসারদের বাড়তি ইনকামের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এটা ছাড়াও হেন ব্যবসা নেই যা সেনাবাহিনী করছে না। সেনাবাহিনী চাল, আটা, ময়দা, সুজি, তেল, চিনিসহ সকল নিত্য ভোগ্যপণ্য, পরিবহণ ব্যবসা, ব্যাংক, বীমা,কনস্ট্রাকশন ইত্যাদি সকল ব্যবসাই তারা করছে। সেনাবাহিনী এখন একটি ব্যবসায়িক গ্রুপে পরিণত হয়েছে। 

শেয়ার বাজারে লুটপাট করেছে সরকার। আওয়ামীলীগের মন্ত্রী এমপিসহ আওয়ামীলীগ নেতাদের কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। এটা মানুষের মধ্যে বেশ বিরূপ প্রভাব রেখেছে আওয়ামীলীগের ব্যাপারে। অনেক মানুষ টাকা-পয়সা হারিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। আওয়ামী লীগ সরকার এর বিরুদ্ধে তো ব্যবস্থা তো নেয়নি উল্টো শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের নিয়ে হাসি ঠাট্টা, ব্যঙ্গ করেছে। 

আর্থিক খাতে বড় ধরণের অনিয়ম করে আসছে আওয়ামী লীগ সরকার। দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে। প্রায় সকল সরকারি ব্যাংকে জালিয়াতি করে টাকা সরিয়ে নিয়েছে। হলমার্ক, বেসিক ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক ইত্যাদিতে হাজার হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নিয়েছে আওয়ামী নেতারা। এই নিয়েও ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে মানুষের মধ্যে। 

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রিজার্ভ লুট হয়ে যাওয়া, ব্যাংকের সোনা মিশ্র ধাতুতে পরিণত হওয়াসহ পুরো আর্থিক খাতে রয়েছে দুর্নীতির ছড়াছড়ি। পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগে যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেন পদত্যাগ আওয়ামীলীগকে বেশ বিপাকে ফেলেছে। 

আওয়ামীলীগ সরকারের জন্য একটি বিষফোঁড়া ছিল ছাত্রলীগ। খুন, ধর্ষন, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক, ইভটিজিং, দেহব্যবসা, ছাত্রদের নির্যাতন, শিক্ষকদের লাঞ্চিত করা, ভাংচুর করা, ক্যান্টিনে ফ্রি খাওয়া, দলীয় কোন্দলে সবসময় মারামারি করা, বিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলোকে নিশ্চিহ্ন করাসহ এমন কোন অপরাধ নেই যা তারা করছে না। সারা বাংলাদেশের মানুষ তাদের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে আওয়ামীলীগ বিরোধী হয়ে উঠেছে। 

শাহবাগ আন্দোলনের সময় আওয়ামীলীগ ইসলামবিরোধী অবস্থান নিয়ে ও নাস্তিকদের পক্ষ নিয়ে নিজেদের নাস্তিকবান্ধব প্রমাণ করেছে। শাহবাগের ধর্মবিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে গড়ে উঠা হিফাযতে ইসলামকে নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে সরকার। রাতের আঁধারে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়েছে অগণিত মানুষের। সারাদেশের ইসলামপন্থী মানুষ সেই থেকে আওয়ামীলীগ থেকে সরে এসেছে। 

পাঁচ জানুয়ারির পর সারাদেশে রাষ্ট্র কর্তৃক হত্যা, গুম, খুন, নির্যাতন শুরু হয়েছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা না বললেই চলে। প্রতিমাসে গড়ে শ'খানেক মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। সর্বশেষ ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে এদেশের  মানুষের মন থেকে তারা উঠে গিয়েছে। কোটা নিয়ে আন্দোলনে দেখা গিয়েছে ঢাবির অনেক ছাত্রলীগ নেতা পদত্যাগ করেছেন। 

সব মিলিয়ে সারাদেশের মানুষ আওয়ামীলীগের জনসমর্থনের অবস্থা অত্যন্ত বেগতিক। এটা জাতি যেমন জানে তেমনি জানে হাসিনাও। তাই তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে রাজি নয়। অন্যদিকে জনগণ কোন সুযোগ পেলেই রাস্তায় নেমে যাচ্ছে। নিরাপদ সড়ক চাই এটা মোটেই সরকার বিরোধী আন্দোলন ছিল না। কিন্তু সরকারের হটকারিতায় সারাদেশের ছাত্ররা রাস্তায় নেমে আসে এবং সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকে। 

পঠিত : ১১৩৭ বার

মন্তব্য: ০