Alapon

পানির অপর নাম ‘মৃত্যু’

পানির অপর নাম জীবন। এটা আমরা সেই ছোট বেলা থেকেই শুনে আসছি। মানবদেহের ৭০ ভাগ পানি, তাই আমাদের নিয়ম করে সব সময় পানি পান করা উচিৎ। প্রতিনিয়ত পুষ্টিবিদরা আমাদের মনে করিয়ে দেন যে, শরীরের সব কাজ সঠিকভাবে সম্পাদনের জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত। ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা শরীরের জন্য যেমন ঝুঁকিপূর্ণ তেমনি আবার অতিরিক্ত পানি পান শরীরের জন্য সমান ঝুঁকিপূর্ণ।

কিন্তু, এই পানিও আপনার জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, যদি নিয়ম না মেনে অতিরিক্ত পানি পান করেন। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পানি পান হচ্ছে ওয়াটার ইনটক্সিকেশন যা হাইপোনাট্রেমিয়া নামেও পরিচিত। এই অভ্যাসে রক্তে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে যায়। এছাড়াও গুরুতর ক্ষেত্রে মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন হৃদরোগ, কোমা এবং এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

আপনার শরীরের জন্য সত্যিই বেশি পানি পান করা প্রয়োজন কিনা তা জানার সেরা উপায় হচ্ছে, তৃষ্ণা পেয়েছে নাকি পায়নি সে ব্যাপারে সচেতন থাকা। আমাদের শরীর এমনভাবে তৈরি যা পানি শূন্যতার বিরুদ্ধে লড়াই করে থাকে। যেহেতু পর্যাপ্ত পানি পান না করার আশঙ্কা থাকে, তাই এর বিরুদ্ধে লড়াই করে আমাদের রক্ষা করার জন্য শরীরের অভ্যন্তরে প্রক্রিয়া থাকে। এর মধ্যে একটি প্রক্রিয়া হচ্ছে, তৃষ্ণা লাগা। তৃষ্ণা সব সময় শরীরকে পর্যবেক্ষণ করে এবং আরও পানি পান প্রয়োজন হলে তা অনুভব করায়। এজন্য তৃষ্ণা না পেলে জোর করে পানি পান করা থেকে বিরত থাকুন।

আপনি যদি সব সময় পানির বোতল সঙ্গে রাখেন এবং তা খালি হওয়া মাত্রই আবার পূর্ণ করেন, তাহলে হয়তো আপনি বেশি পানি পান করছেন। প্রতিনিয়ত পানি পান করতে থাকলে রক্তে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে যায়। ফলে শরীরের সব কোষ ফুলে যায়। বেশি পানি পান করলে ব্রেইনের কোষ ফুলে যেতে পারে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।

পরিমাণ মতো পানি পান না করলে মূত্রের রং হালকা স্বচ্ছ হলদে হয়। অনেকে মনে করেন, মূত্রের রং পরিষ্কার স্বচ্ছ হলে তা দেহের সুস্থ অবস্থার লক্ষণ। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে মূত্রের মধ্যে কোনো রং না থাকাটাই আপনার বেশি পানি পান করার লক্ষণ প্রকাশ করে। অনেকের মতে, দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা স্বাভাবিক। তবে এটা প্রত্যেকের উচ্চতা, ওজন ও পরিশ্রমের ওপর নির্ভর করে।

প্রায়ই গভীর রাতে প্রস্রাবের বেগ পাওয়ায় ঘুমে ভেঙে যাচ্ছে, তাহলে বুঝতে হবে বেশি পানি পান করছেন। স্বাভাবিক অবস্থায় সারা দিনে ৬-৮ বার প্রস্রাব হয়। যদি ১০ বারের বেশি প্রস্রাব হয়, তাহলে তা শরীরের প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পানি পানের লক্ষণ। রাতের বেলা প্রস্রাবের ঝামেলা এড়াতে ঘুমানোর কয়েক ঘণ্টা আগে পানি পান করুন। এতে আপনার কিডনি কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাবে।

অতিরিক্ত পানি পানের লক্ষণ ডিহাইড্রেশনের লক্ষণের মতোই। বেশি পরিমাণে পানি খেলে কিডনি মাঝে মাঝে পানি পরিশোধন করে পুনরায় শোষণ করতে ব্যর্থ হয়। ফলে বমি বমি ভাব, বমি এবং ডায়রিয়া হয়। প্রয়োজনের তুলনায় কম পানি পান করলে কিংবা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পানি পান করলে অর্থাৎ উভয় কারণেই মাথা ব্যথা হতে পারে। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পানি পান করলে শরীরে লবণের ঘনত্ব কমে যায় ফলে সকল অঙ্গ পানি শোষণ করে ফুলে যায়।

পানি অতিরিক্ত খেলে ব্রেইনের স্কাল্পে চাপ লাগে তখন মাথা ব্যথা অনুভূত হয়। এছাড়া মস্তিষ্কে ক্ষতি এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যাঘাতের মতো গুরুতর সমস্যা হতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত পানি পানে যে সকল সমস্যা হতে পারে, তাহলো- অতিরিক্ত পানি খাওয়ার ফলে অনেকের হাত, পা ও ঠোঁট ফুলে বা রঙের পরিবর্তন হয়ে যায়। দেহের সকল কোষ ফুলে গেলে ত্বকের কোষও যথারীতি ফুলে যেতে থাকে। পেশী দুর্বল ও সহজেই খিল ধরে যায়।

পঠিত : ৭১৪ বার

মন্তব্য: ০