Alapon

নারী স্বাধীনতার নামে এ যেন নব্য ফিতনা....

নিজের মা হওয়ার ইচ্ছা পূরণ করতে কোনও স্বামী প্রয়োজন হয়নি কলকাতার চলচ্চিত্র নির্মাতা অনিন্দিতা সর্বাধিকারীর। ঘটনাটি কয়েক বছর আগের। ভারতের মিডিয়াগুলোতে এ নিয়ে তোলাপাড় হয়েছে। নারীবাদী সংগঠন ও তাদের অনলাইন পোর্টালগুলোও অনিন্দিতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল। তারা এটাকে দেখছে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহ হিসেবে।

মূলত স্পার্মব্যাংক থেকে শুক্রাণু নিয়ে আইভিএফ পদ্ধতিতে গর্ভধারণ করেছেন অনিন্দিতা। এক্ষেত্রে শুক্রাণুদাতাকে চেনারও সুযোগ নেই। সম্প্রতি বিষয়টি আবার আলোচনায় এসেছে অনিন্দিতা তার ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করানোর সময়। বাবার পরিচয় না থাকায় কোনো স্কুল তার ছেলেকে ভর্তি করতে চায়নি। পরে আদালতের রায়ে সেটা সম্ভব হয়েছে।

ভারতের অনেক মিডিয়াই ওই নারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। সব মিডিয়া তার প্রশংসা করে লেখালেখি করেছে। অনিন্দিতারও ভাষ্য, তিনি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন। কমিউনিস্ট পরিবারে বড় হওয়ায় এক্ষেত্রে পরিবার থেকেও তিনি সাহায্য পেয়েছেন। খুব ভালো কথা! সমাজে তিনি বিরাট বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছেন! ব্যক্তিস্বাধীনতার উদাহরণে পরিণত হয়েছেন!

কিন্তু এরকম মিলিট্যান্ট স্টাইলের ব্যক্তিস্বাধীনতার বিপরীত চরিত্র নিয়ে মিডিয়া কিংবা নারীবাদের প্রতিনিধিদের কেউ কোনো শব্দ করেনি। এটা হয় তাদের প্রেজুডিস, না হয় অজ্ঞতা। স্বামী ছাড়াই অনিন্দিতা মা হয়েছেন- এর অর্থ এই নয় যে তার সন্তান জন্মদানে কোনও পুরুষের প্রয়োজন হয়নি। অবশ্যই একজন পুরুষের কন্ট্রিবিউশন আছে এবং সেই পুরুষটাই তার সন্তানের বাবা।

এখন আসে অধিকারের প্রশ্ন। অনিন্দিতা যে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, তার অধিকার আছে বাবাকে চেনার; বাবার আদর পাওয়ার। কিন্তু এই মহিলা নিজের কথিত ব্যক্তিস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার নামে সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃতভাবে সন্তানের সেই অধিকার হরণ করেছেন। তার ছেলেটি কোনোদিন বাবাকে দেখতে পাবে না। এটা নিজের ছেলের বাবাকে খুন করার মতো। ছেলে বড় হয়ে যদি জিজ্ঞেস করে, আমি আমার বাবাকে চাই! তো এই মহিলা কী জবাব দেবেন? সন্তানকে পিতাহীন করার জন্য আইনিভাবে তিনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

এরপর, আধুনিক নীতিতত্ত্ব বলে, কাজের উপায় হিসেবে মানুষকে ব্যবহার করা যাবে না (ইমান্যুয়েল কান্ট)। আইনের ভিত্তি হিসেবে এই তত্ত্বটিও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। অথচ অনিন্দিতা তা-ই করেছেন। নিজের মা হওয়ার খায়েশ পূরণ (এটা তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন) করার জন্য তিনি উপায় হিসেবে ব্যবহার করেছেন আরেকজন মানুষ, অর্থাৎ নিজের সন্তানকে।

আবার, কোনো বিধান মানুষের জন্য নিয়ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে হলে ওই বিধানের Universalizability বা সার্বজনীনকরণযোগ্যতা (জন লক, কান্ট, আরএম হেয়ার) থাকতে হয়। অর্থাৎ, কাজের নিয়মটি পৃথিবীর সব মানুষ অনুসরণ করলেও বিশ্বব্যবস্থাপনায় কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে না। এবার ভাবুন, অনিন্দিতার এই নিয়মটি সব মানুষ অনুসরণ করলে পৃথিবীর স্বাভাবিক ব্যবস্থাপনা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে!

এই বাইরেও বিষয়টি নিয়ে প্রচুর আলোচনা করা যায়। সিঙ্গেল প্যারেন্টিংয়ের অসংখ্য সমস্যা আছে। সেসব আলোচনা আরেকদিনের জন্য থাক। চিন্তা করুন, একজনের খামখেয়ালিপূর্ণ ব্যক্তিস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে কীভাবে আরেকজনের অধিকারণ হরণ করা হলো! এইসব ব্যক্তিস্বাধীনতার তত্ত্ব মানুষ, সমাজ ও সভ্যতার জন্য বিধ্বংসী। শুধু এক্ষেত্রেই নয়; অতিমাত্রায় এবং উগ্র ব্যক্তিস্বাধীনতা সবক্ষেত্রেই ভয়ংকর। অজ্ঞ মিডিয়া এসবকে গ্লোরিফাই করে! সেইসঙ্গে নারীবাদীরা। অন্ধের মতো অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করেই তাদের মাতামাতি। আমাদের বোনদের কেউ কেউ এদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হুক্কাহুয়া রব তোলে।

যাই হোক, এই আলোচনার পুরোটাই আধুনিক পশ্চিমা ন্যারেটিভ থেকে করা হয়েছে। যদিও মানুষের জন্য সবচেয়ে ভালো নিয়ম একমাত্র আল্লাহই তৈরি করতে পারেন- ‘তবে কি তারা জাহিলিয়্যাতের বিধান চায়? অথচ বিশ্বাসীদের জন্য আইন প্রদানে আল্লাহর চেয়ে কে অধিক শ্রেষ্ঠ?’ (সুরা: মায়েদা, আয়াত: ৫০)।


পঠিত : ৭৩২ বার

মন্তব্য: ০