Alapon

মানুষ মাজারমুখী হচ্ছে কেন...?

ইসলাম থেকে বৈষয়িকতা বাদ! খণ্ডিত উপস্থাপনের ফলেই মানুষ পীর-মাজার মুখী হচ্ছে!

- ক্ষিদের জ্বালায় ডাস্টবিন থেকে একজনকে উচ্ছিষ্ট খেতে দেখে; কেউ যদি বলে এটা নাজায়েজ!
- সন্তানকে হাসপাতালের বেডে শুইয়ে পিতা ছুটছেন সুদী টাকার সন্ধানে; কেউ বল্লেন এটা হারাম!
- টাকার অভাবে পাগলী কন্যার চিকিৎসায় ব্যর্থ বাবা মাজারে ছুটেছেন, কেউ বললেন এটা শিরক!
- উপায়ন্তর-হীন খিচুনি আক্রান্ত এতিম শিশুর মা, পীরের দ্বারস্থ হলেন; কেউ বলেন বেপর্দা-বেশরম নারী!
- সাধারণ দ্বীন-হীন মানুষ সহায় সম্বল নিয়ে পাগলের মত ওরসে ছুটেছেন; কেউ বলেন ভণ্ডের আস্তানার মুরিদ!
- মোচে-চুলে একাকার, চেহারা তার কদাকার, গেছেন মাসয়ালা জানতে; যদি কেউ বলা দূর হও কমবখত, আগে মানুষ হও!
- ধর্ষিত কন্যার অসহায় পিতার করুন আর্জি শুনে যদি বলে; 'আগে পিতারে দোররা মার, মেয়েরে বিয়ে দ্যাস নাই ক্যান'!

- উপরের এসব কথা শুনতে কটু লাগলেও নিরেট বাস্তবতা, যা অহরহ ঘটছে; আরো বহু বাক্য লিখা যাবে।
- এই ধরনের পরিস্থিতিতে কেউ তাদের কাছে গিয়ে যদি জান্নাতের লোভ দেখায়, তারা ক্ষিপ্ত হবে নয় পরিহাস করবে।
- এটার মূল কারণ ইসলামকে আমরা বৈষয়িক করিনি শুধু পরকালের জন্যই উপস্থাপন করি।
- যারা ইসলাম প্রচার করে তাদের ওয়াজ শুনে স্রোতারা নির্ঘাত বুঝে, এটা দিয়ে উপকার তখনই পাব, যখন মরে যাব।
- কেউ সংসার ঝামেলা, স্ত্রী-পুত্রের জিল্লতী থেকে মুক্তি পেতে দ্বীনের রাস্তায় আহবান করেন।ৱ
- অনেকেই আধা বৈরাগী বেশে ঘর-সংসার, সন্তান-সন্তুতিকে আল্লাহকে হাওলা করে বের হয়ে যান।
- অন্যদিকে অগণিত মুসলমান ধুকে ধুকে ভাবছে, হালাল-হারাম যাই হোক, কিভাবে পরবর্তী বেলার আহার যোগাড় হবে!
- বেশুমার মানুষ পেটের দায়ে, পিঠের দায়ে, বুকের সন্তানের দায়ে পরবর্তী মাসের সুখের জন্য গতর খাটছে।
- আবার ওদিকে আজিমুশ্শান মাহফিল করে, ওপরের এসব কে হারাম ঘোষণা করে, সবাইকে জান্নাত থেকে বের করে দিচ্ছি।

যারা মাজারে দৌড়াচ্ছে, তাদের কখনও প্রশ্ন করে দেখেছি? কেন তারা সেখানে দৌড়ায়? প্রশ্ন করে দেখুন তারা নিন্মের কথাগুলোই বলবে,

- তারা বলবে, মাজারে গেলে দুনিয়ার মান্নত পূরণ হবে।
- তারা বলবে, জটিল-দুরারোগ্য রোগ-বালাই থেকে মুক্তি মিলবে।
- তারা বলবে, দুর্ভাগ্য কাটবে, ভাগ্য সু-প্রসন্ন হবে।
- তারা বলবে, সমস্যা ও বিপদ দূর হবে, সুদিন ফিরে আসবে।
- তারা বলবে, চাকুরীতে প্রমোশন হবে, স্বামী বশে থাকবে, সন্তান আয়ত্তে থাকবে।
- তারা বলবে, বিদেশে চাকুরী মিলবে, ভোটে নির্বাচিত হবে........

- পাঠক বলবেন কি, এখানে কোন চাওয়া পাওয়াটি আখেরাতের সাথে সম্পর্কিত! 
- মোটেও না! পুরাটাই দুনিয়ার সমস্যা ও চাওয়া পাওয়ার সাথেই সম্পর্কিত।

- তারা কখনও বলবে না, মাজারে গিয়েছি জান্নাতে যাবার জন্য।
- তারা কখনও বলবে না, মাজারে গিয়েছি ভাল মুসল্লি হবার জন্য।
- তারা কখনও বলবে না, মাজারে গিয়েছি আল্লাহর সন্ধানে।

- মূলত ইসলাম মানুষের ইহ-কালীন ও পর-কালীন মুক্তির কথা বলতেই এসেছিল।
- ইসলাম প্রথমেই ইহকাল তথা বৈষয়িকতাকে গুরুত্ব দেয়, তারপর পরকাল।
- ইহকালে কিভাবে মুক্তি মিলবে আমরা সে ব্যাপারে অনভিজ্ঞ কিংবা গাফেল।
- বৈয়ষিক সমস্যা সমাধানে আমরা অভিজ্ঞ নই কিংবা মানুষদের আস্তা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছি।
- যদি বৈয়ষিক সমস্যা সমাধানে আমরা অগ্রগণ্য হতাম তাহলে মানুষ, মাজারে যেত না।
- যদি বৈষয়িক সমস্যার সমাধান নিয়ে ভাবতাম, তাহলে মানুষ ইমান বিক্রি করত না, মোনাফেক হতনা।

- আল্লাহ বলেছেন, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা মানুষকে কুফুরীর কাছাকাছি নিয়ে যায়।
- অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার জন্য মানুষ কোরআন-হাদিসের তাবিজ বিক্রি করছে।
- অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আনতে অনেক আলেম, ঈমামতির নামে দাসত্ব করছে।
- অর্থনৈতিক সচ্ছলতা হারাবার ভয়ে, অনেক আলেম এডজাস্টেবল ওয়াজ করছেন।

- তাই অর্থনৈতিক সচ্ছলতা কিভাবে আসতে পারে সেটা নিয়ে মুসলমানদেরকে ভাবতে হবে।
- কিভাবে নিজেদের হাত গুলোকে কর্মীর হাত বানানো যায়, সেটা নিয়ে কাজ করতে হবে।
- কাজের মধ্যে লজ্জা নাই, বেকার থাকাই নির্লজ্জ-অকর্মার কাজ সেটা বুঝাতে হবে।
- কারিগরি বিদ্যার সৃষ্টি তখনই হয়, যখন কেউ কাজ করতে চায় এবং তার প্রতি মনোযোগী হয়।
- আলেমদের ওয়াজে শ্রম, শ্রমিক ও শ্রমজীবী নবীদের ইতিহাস বলে স্রোতাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
- মানুষ থেকে আলস্যতা হীনমন্যতা দূর করার জন্য নতুন গবেষক নতুন ওয়ায়েজীন সৃষ্টি হতে হবে।

- রাব্বানা আতিনা ফিদদুনিয়া... দোয়ায় আল্লাহ নিজেই দুনিয়ার স্বার্থকে আখেরাতের আগে প্রাধান্য দিয়েছেন।
- সুরা কুরাইশে মক্কার মানুষদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধতার সুযোগ আল্লাহই করে দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
- সুরা রোম নাজিলের মাধ্যমে আল্লাহ মক্কার মানুষদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রতি প্রলুব্ধ করেছেন।
- খায়বর যুদ্ধের গনিমতের মালে প্রায় সকল মুসলমান ধনী হয়ে যায়, আল্লাহ বলেছেন এটা তার স্পেশাল রহম।
- জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত সাহাবীদের কেউ কোটি অর্থের মালিক ছিলেন, তাঁরা সম্পদ কমানোর জন্য পরামর্শ চাইতেন।
- তাঁরা এত বেশী দান করতেন, দানের পরিমাণ শুনে প্রাপক বেহুঁশ হয়ে পড়তেন, নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারতেন না।
- যখন মুসলমানদের হাতে সমৃদ্ধি ছিল, ইসলাম সর্বত্র বিজয়ী হয়েছে, ওয়াজ-নসিহতের দরকার হত না।
- মানুষকে শুধু তৌহিদ ও আখেরাতের দাওয়াত দিয়েই পরিশুদ্ধ করার দরকার পড়ত।

তাই আজো,
- মুসলমান ছেলেরা কাজ বাছাই না করে যে কোন কাজ করার ইচ্ছা সৃষ্টি হলে সমাজ পরিবর্তন হবে।
- তাদের নিজেদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আসবে, অন্যের বেকার হাতে কাজ তুলে দিতে পারবে।
- অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা মানুষের মনে চিন্তার পরিবর্তন আনে এবং দান ও উপকারিতায় আগ্রহ বাড়ে।
- অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতায় সমাজ কাঠামো পরিবর্তন হয়, মানুষের মাঝে দয়া-মায়ার সৃষ্টি হয়।
- তখন এমনিতেই মানুষ আর সমস্যার জন্য মাজার মুখী হবেনা, লাভের জন্য পীরের কাছে যাবে না। 
- তাই ইসলামকে পরিপূর্ণ বিজয়ী করতে হলে আগে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার জন্য ভাবতে হবে।
- মানুষ কাজ পেলে, খাদ্য পেলে মাজার ছেড়ে এমনিতেই মানুষ জান্নাতের রাস্তায় দৌড়ে আসবে।


পঠিত : ১৩৪৮ বার

মন্তব্য: ০