তারিখঃ ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৪:১১
Photo Credit: colnect
মুঘল আমলে বাংলার বিভিন্ন অংশে বড় বড় অনেক ভূইয়া বা জমিদার স্বাধীনভাবে বাংলা শাসন করতেন। তারা নিজস্ব সেনাবাহিনী ও শক্তিশালী নৌবাহিনী নিয়ে একজোট হয়ে মুঘল বাহিনীকে প্রতিরোধ করে। এ জমিদারদের মাঝে ভাটির বারো ভূইয়ারা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এদের মাঝে সবচেয়ে প্রতাপশালী জমিদার ছিলেন সোনারগাঁও এর ঈসা খান। তিনি ভাটি অঞ্চলে ঢাকা, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহের অধিকাংশ অঞ্চল নিয়ে বিশাল একটি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। ঈসা খান প্রায় ২২টি পরাগণার শাসন পরিচালনা করতেন।
১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে সরাইলে ঈসা খান জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা কালিদাস গজদানী রাজপুতদের বাইশ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। কালিদাস পরবর্তীতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সোলায়মান খান নাম ধারণ করেন। তিনি সুলতানের দীওয়ান ও জামাতা হওয়ায় প্রচুর ভূসম্পত্তির জায়গীর লাভ করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। যা পরবর্তীতে জমিদারীতে পরিণত হয়। সোলায়মান খান ইসলাম শাহের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ পরিচালনা করার সময় নিহত হন। তারপর তার পুত্র ঈসা ও ইসমাঈলকে বন্দী করে বিক্রি করে দেয়া হয়। আনুমানিক ১৫৬৩-৬৪ খ্রিস্টাব্দে ঈসা খান ও ইসমাঈল তুরান থেকে স্বদেশে ফিরে আসেন। ঈসা বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে তার পিতার জমিদারীর মালিক হন।
ঈসা খান অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তার রাজ্যের পরিসীমা বৃদ্ধি করেন এবং রাজ্যের নিরাপত্তা সুদৃঢ় করেন। ঈসা খান দেওয়ান ও মসনদ-ই-আলা উপাধি ধারণ করেছিলেন। তিনি মুঘলদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেন এবং কখনোই তিনি মুঘলদের কাছে বশ্যতা স্বীকার করেননি। মুঘলদের বিরুদ্ধে প্রচুর আফগান বিদ্রোহীদেরও তিনি আশ্রয় দিয়েছিলেন। ধারণা করা হয় তিনি কাত্রাভু এবং সোনারগাঁ দুটি স্থানেই ঘাটি এবং রাজধানী স্থাপন করেন ঈসা খাঁ এগারসিন্ধু, খিজিরপুর ও ময়মনসিংহের জংগল বাড়িতে দূর্গ নির্মাণ করে। খিজিরপুর দূর্গ তাঁর প্রধান শক্তি কেন্দ্র ছিল। বর্তমানেও এ দূর্গগুলো ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে সুপরিচিত।
১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দে সেপ্টেম্বরে বর্তমান গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুরে ভাঁটি রাজ্যের রাজা মসনদ-ই-আলা ঈসা খাঁ মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল ৬৪ বা ৬৫ বছর। এখানেই তাকে কবর দেয়া হয়।
পঠিত : ১৯৪৪ বার
মন্তব্য: ০