Alapon

জহির রায়হানের যুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবোধ

জহির রায়হান তার "সময়ের প্রয়োজনে" গল্পে পাকিস্তানী সৈন্যদের প্রসঙ্গে এক জায়গায় লিখেছেন, 

"খবর এসেছে ওখানে ঘাঁটি পেতেছে ওরা। একদিন যারা আমাদের অংশ ছিল। একসঙ্গে থেকেছি। শুয়েছি। খেয়েছি। ঘুমিয়েছি। এক টেবিলে বসে গল্প করেছি। প্রয়োজনবোধে ঝগড়া করেছি। ভালবেসেছি। আজ তাদের দেখলে শরীর রক্ত গরম হয়ে যায়। চোখ জ্বালা করে ওঠে। হাত নিশপিশ করে। পাগলের মতো গুলি ছুঁড়ি। মারার জন্য মরিয়া হয়ে উঠি। একজনকে মারতে পারলে উল্লাসে ফেটে পড়ি।ঘৃণায় থুতু ছিটোই মৃতদেহের মুখে"

জহির রায়হান বোধহয় একালের চেতনাজীবীদের মত ছিলেন না। বায়ান্ন, একাত্তর তার কাছে অত মাহাত্মপূর্ণ ছিল না। তিনি এগুলোকে একটু ভিন্নভাবে বিবেচনা করতেন। অনেকেই হয়ত তার "সময়ের প্রয়োজনে" গল্পটা পড়েছেন। মূল গল্প থেকে কিছুটা বাদ দিয়ে এটা কোন ক্লাসের যেন পাঠ্য ছিলো। তারা হয়ত বিষয়টা টের পেয়েছেন। 
তিনি তার গল্পের ভেতর প্রকৃত তাৎপর্যটাই বোধ হয় তুলে ধরেছেন। লিখেছেন, 

"একদিন। বেশ কিছুদিন আগে। সেক্টর-কমান্ডার এসেছিলেন আমাদের ক্যাম্পে, দেখতে। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিলাম আমরা। অভিবাদন করেছিলাম তাঁকে।তিনি আমাদের একটি প্রশ্ন করেছিলেন।
কেন যুদ্ধ করছো বলতে পার ?
প্রায় এক ধরণের উত্তর দিয়েছিলাম আমরা।
বলেছিলাম,দেশের জন্যে। মাতৃভূমির জন্যে যুদ্ধ করছি। যুদ্ধ করছি দেশকে মুক্ত করার জন্যে। বাংলাদেশ।

নাহ।
পরে মনে হয়েছিল উত্তরটা বোধহয় ঠিক হয় নি। নিজেরা অনেকক্ষণ আলাপ করেছি আমরা। উত্তরটা ঠিক হল কি? দেশ তো হল ভূগোলের ব্যাপার। হাজার বছরে যার হাজারবার সীমারেখা পাল্টায়। পাল্টাচ্ছে। ভবিষ্যতেও পাল্টাবে। তাহলে কীসের জন্যে লড়ছি আমরা?
বন্ধুরা নানাজনে নানারকম উক্তি করেছিল"............

আমার কাছেও বায়ান্ন, সাতচল্লিশ, একাত্তর বিশেষ কোন মিনিং রাখে না। কোন চেতনা নেই, লালন করার কিছু নেই। আমার কাছে দুনিয়ার সকল যুদ্ধের ফিলসফি একটাই, "ইনজাস্টিস"।

মানুষকে তার যথার্থ অধিকার থেকে বঞ্চিত করার কারণেই যত প্রব্লেম। দেশ তো ভূগোলের ব্যাপার ! ইসলামের চিরন্তন যুদ্ধ এই ইনজাস্টিস এর বিরুদ্ধে। আমারও।

ক'জন মারা গিয়েছিলো ভাষার যুদ্ধে ? একজন শিশু মারা পড়েছিল ভাষার ডামাডোলে। ফিলিস্তিনে তো হাজারো শিশু মারা পরে। একটা "বিশ্ব শিশু শহীদ দিবস" করো না !

পঠিত : ১২৮৯ বার

মন্তব্য: ০