Alapon

নারী এবং নিমগাছ

খুব সম্ভবত নারীর  সাথে নিমগাছের যে তুলনা হতে পারে সেটা এমনভাবে বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের অাগে অন্য কেউ ভাবেন নি! বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের নিম গাছ সেরা,গল্পের চমকের জন্য।না শুধু তা নয় নিমগাছ পাঠক হৃদয়ে দাগ কাটে অন্য কারণে। গল্পকার সামান্য একটা গাছের সাথে নারীর তুলনা করে অাবহমান কাল থেকে চলে আসা নারীর মনস্তত্ত্ব নিয়ে বর্ণনা  করেছেন।অথচ গল্পের সূচনা হয়েছিল খুব সাধারণভাবে। এ যেমন নিমগাছের সাধারণ বর্ণনা নিমগাছের প্রয়োজনীয়তা।প্রত্যহ বিভিন্ন কাজে নিমগাছের ব্যাবহার করা হয়।ছাল, বাকল পাতা, ফল, ফুল নিমগাছের সব কিছুই উপকারী অথচ সে নিমগাছের কোন যত্ন নেওয়া হয় না।হাজারো অবাঞ্ছিত লতাপাতা নিমগাছের নিচে পরে থাকে সেগুলি কেউ সরায় না।নিমগাছ স্বাভাবিক বৃদ্ধি হয় না।অর্থাৎ বাড়িতে একরকম অনাদরে পরে থাকে  নিমগাছ। সেসময় বাড়িতে কবি অাসে সে নিমগাছ দেখে মুগ্ধ হয় এবং তার দিকে তাকিয়ে থাকে।নিমগাছের  তখন মন চায় সে কবির সাথে অনেক দূর চলে যেতে কিন্তু পারে না।কারণ শিকড় তার মাটির গভীরে প্রবেশ করেছে এখন এই বন্ধন ছেড়ে তার অন্যত্র চলে যাওয়া সম্ভব না।তাই অযত্নেই তাকে বাড়িতে পরে থাকতে হয়।এভাবে নিমগাছের উপকারিতা দিয়ে গল্পের সূচনা কিন্তু  গল্পের শেষ লাইন যদি না পড়ি তবে এটা কে আমাদের কাছে কোন গল্প মনে হয় না।পাঠক মনে উত্তেজনা বাড়ায় মূলত গল্পের শেষ লাইন, "এই বাড়ির নিপুণা বউটিরও নিমগাছের মতো দশা"। এই লাইন পড়ার পর অামাদের মনে হুহু করে কেঁপে উঠে সত্যিই তো! কত গভীর জীবনদর্শন অাছে এখানে।নিমগাছের মতো সংসারে  যে নারীকুল সেবা বিলায় তার যত্ন সংসারের মানুষগুলি কতটুকু নেয়?অামাদের নারী অাত্মীয়দের কি অামরা কখনো জিঙ্গেস করেছি অাপনারা সুখে অাছেন? অথবা অামাদের থেকে অাপনাদের কিছু চাওয়ার অাছে কি না? অথচ একটি নির্দিষ্ট ঘরানা,তিনবেলা রান্না করা, স্বামী সংসার করার নারীর মনেও অন্যকোন ভাবনা অাসে,একটু সুখী হওয়ার বাসনায় অন্য কোথাও চলে যেতে চায়।অামাদের মা খালারা সাংসারিক কলহে অনেকবার অনেকদূর চলে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে হয়তো কিন্তু সমাজবাস্তবতার  কারণে পারেনি।যেমনি পারেনি নিমগাছটা,মাটির গভীরে শিকড় থাকায় গাছটি বন্ধন ছিড়তে চাইলেও সফল হতে  পারে না।অামাদেন নারী স্বজনদেরও সেই দশা।মায়ার বন্ধন গভীর হওয়াতে শত অযত্ন অবহেলায় থেকেও অন্যত্র চলে যেতে পারে না।পারিবারিক কোলাহল ভালো না লাগলে পুরুষ চাইলে অনত্র চলে যেতে পারে,যৌন অাবেদন নিবারনের জন্য তাদের স্থানের অভাব হয় না।অথচ নারীকে  কষ্ট নিয়ে সারাটা জীবন ধরে  সংসারে  অযত্নে পরে থাকতে হয়,যেমনিভাবে অযত্নে বাড়ির পাশে থাকে নিমগাছ। যেনো নারী অার নিমগাছের জীবন একই সূত্রে গাঁথা! 

লেখক
জুয়েল মিয়াজি।
গল্পকার। 

পঠিত : ৮০৯ বার

মন্তব্য: ০