Alapon

ভারতের ভয়াল থাবায় যেভাবে নিশ্চিহ্ন হলো হায়দ্রাবাদ

ইতিহাসবিদ ফাহমিদ-উর-রহমান লিখেছেন, ‘ঊনিশ আর বিশ শতককে বলা যায় মুসলমানদের জন্য এক ক্ষয়িষ্ণুতার যুগ। একালে এসে মুসলমানরা যা পেয়েছে তার চেয়ে হারিয়েছে অনেক বেশী। সাম্রাজ্যবাদের রক্তাক্ত থাবা একালে মুসলমানদের যত বেশী রক্ত ঝরিয়েছে বোধহয় এর নজির ইতিহাসে খুব একটা পাওয়া যাবে না। দেখতে দেখতে মুসলমান দেশগুলো সাম্রাজ্যবাদের করতলগত হয়েছে। শত শত বছরের মুসলিম ঐক্যের প্রতীক খেলাফত খন্ড-বিখন্ড হয়ে গেছে আর সেই সাথে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন আর নিবর্তনের দীর্ঘ ট্রাজেডী রচিত হয়েছে। 

এরকম এক ট্রাজেডীর নাম হচ্ছে হায়দারাবাদ। সাম্রাজ্যবাদের প্রধান পুরোহিত বৃটেন শুধু মুসলিম দুনিয়ায় তার খবরদারি আর রক্তক্ষয় করেই ক্ষান্ত হয়নি। উপনিবেশগুলো থেকে বিদায় নেবার সময় তারা এমন সব সমস্যা জিইয়ে রেখে গেছে, যার মাশুল আজও মুসলমানদের গুণতে হচ্ছে। এর একটা বড় প্রমাণ হচ্ছে আজকের কাশ্মীর। কিন্তু কাশ্মীরের জনগণ অদ্যাবধি আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী জেহাদ জারি রেখেছে আর হায়দারাবাদের আজাদীপাগল মানুষের সংগ্রামকে অত্যাচার ও নিবর্তনের স্টীমরোলারের তলায় স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছে। স্বাধীন হায়দারাবাদের নাম পৃথিবী মনে রাখেনি। 

হায়দ্রাবাদ নামে একটা স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল, তার ছিল স্বাধীন প্রশাসন, প্রতিরক্ষাও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা-এসব আজ বিস্মৃতপ্রায় ইতিহাসের গর্ভে আশ্রয় পেয়েছে। মীর লায়েক আলীর লেখা গ্রন্থে হায়দারাবাদের আজাদীপাগল মানুষের সেই বেদনাঘন কাহিনীর বর্ণনা দেখতে পাওয়া যায়। মীর লায়েক আলী ছিলেন স্বাধীন হায়দারাবাদের শেষ প্রধানমন্ত্রী। আগ্রাসী ভারতের বিরুদ্ধে হায়দারাবাদের প্রতিরোধ যুদ্ধে এই লায়েক আলী তার দেশের স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখার জন্য শেষ অবধি লড়াই চালিয়েছিলেন। এই লড়াই যখন চলছিল ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারতের সুসজ্জিত সশস্ত্র বাহিনী স্বাধীন হায়দারাবাদের ওপর যখন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তখন বিশ্ব শান্তির মন্ত্র উচ্চারণকারী পুরোহিত দেশগুলো এ অবিচার ও জুলুমের বিরুদ্ধে টু শব্দটিও করেনি। এমনকি জাতিসংঘও না’।
(সূত্রঃ হায়দ্রাবাদ ট্রাডেডী, দৈনিক ইনকিলাব ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯)

হায়দারাবাদে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ত্রয়োদশশতকের শেষ দিকে। তখন থেকেই হায়দারাবাদকে কেন্দ্র করে মুসলিম শিল্প-সংস্কৃতির যে বিকাশ ঘটে তা পুরো দাক্ষিণাত্যকে প্রভাবিত করেছিল। ভারতের বৃটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরও হায়দ্রাবাদ পুরোপুরি স্বাধীনতা বিসর্জন দেয়নি। বৃটিশ সরকারের সাথে চুক্তি সাপেক্ষে এটি একটি দেশীয় রাজ্যে পরিণত হয়। ৮২,৬৯৮ বর্গমাইল এলাকা বিস্তৃত এবং বাংলাদেশের তুলনায়ও আয়তনে বড় দেশ হায়দারাবাদ। শুধু আয়তনে নয়, সম্পদ, সমৃদ্ধি এবং সামর্থ্যরে দিক থেকেও স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ঠিক থাকার সকল যোগ্যতাই হায়দারাবাদের ছিল।

হায়দারাবাদের খনিজ সম্পদের মধ্যে কয়লা, সোনা, লোহা, হীরক প্রভৃতির আকর ছিল। কৃষি সম্পদের মধ্যে চাল, গম, জওয়ার, বজরা, তিল, তিসি ভুট্টা, তামাকের প্রচুর ফলন ছিল। দেশটিতে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার ছিল। নিজস্ব আইন আদালত ছিল। বিচার ব্যবস্থা ছিল। নিজস্ব মুদ্রা ছিল, সেনাবাহিনী ছিল, হাইকোর্ট ছিল, ছিল শুল্ক বিভাগ। নিজস্ব বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। ভাষা ছিল; নিজস্ব পতাকা ছিল, জাতীয় সংগীত ছিল। দেশে দেশে রাষ্ট্রদূত ছিল, এমনকি জাতিসংঘে নিজস্ব প্রতিনিধিও ছিল। এছাড়া ১৯৩৫ সালের গভর্ণমেন্ট অব ইন্ডিয়া এ্যাক্টে হায়দারাবাদকে স্বাধীন মর্যাদা দান করে বলা হয়েছিল যে, দেশীয় রাজ্যগুলোর পদমর্যাদা এবং স্বাভাবিক কার্যাবলী স্বাধীন ভারতের কাছে রাজ্যগুলোর অনুমতি ব্যতিরেকে হস্তান্তর করা যাবে না।

১৯৪৭ সালের ১৬ জুলাই ইংল্যান্ডের ভারতীয় বিষয়ক সচিব লর্ড লিষ্টোয়েল লর্ড সভায় বলেছিলেন, এখন থেকে ভারতের দেশীয় রাজ্যগুলো হতে বৃটিশ রাজ প্রতিনিধি প্রত্যাহার এবং তাদের দাপ্তরিক কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘোষণা করা হল’। তিনি আরও বলেছিলেন, ‘দেশীয় রাজ্যগুলো ভারত অথবা পাকিস্তান ডোমিনিয়নের কোনটিতে যোগ দেবে, অথবা স্বাধীন সত্তা বজায় রাখবে তা সম্পূর্ণ তাদের ইচ্ছাধীন। বৃটিশ সরকার সে বিষয়ে কোন রকম প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে না’। ১৯৪৭ সালের ১০ জুলাই বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলী ও ‘হাউস অব কমন্স’ এ ভারত সচিবের অনুরূপ বক্তব্যই প্রদান করেছিলেন।
(সূত্রঃ হায়দারাবাদের শিক্ষণীয় ইতিহাস, আয়ার দানিশ, দৈনিক সংগ্রাম ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯)

ভারত বিভাগের প্রাক্কালে বৃটিশ শাসনের অধীনে ৫৬২টি করদ রাজ্য ছিল। যারা বৃটিশ সরকারকে কিছু কর বা রাজস্বদানের বিনিময়ে মোটামুটি স্বাধীনভাবেই রাজ্য শাসন করত। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা আইন পাস হওয়ার সাথে সাথেই হায়দারাবাদের উপর বৃটিশ খবরদারিত্বের অবসান ঘটে এবং ঐ দিন থেকেই হায়দ্রাবাদ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করে। ১৯৪৭ সালের ৯ জুলাই হায়দারাবাদের নিজাম বৃটিশ ভাইসরয় মাউন্টব্যাটেনকে এক পত্রে লিখেছিলেন, বৃটিশরাজ ও হায়দারাবাদের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি মোতাবেক হায়দ্রাবাদ তার স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখতে চায়। তিনি ভারত বা পাকিস্তান কোন রাষ্ট্রেই যোগ দেবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্ট পবিত্র রমযান মাসের শেষ শুক্রবার, জুমাতুল বিদার পূণ্যলগ্নে, ভারত উপমহাদেশে মাথা উঁচু করে জন্ম নিল একটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র। হিন্দুরা এবারেও শঙ্কিত হলেন। কারণ, তাদের জ্যোতিষ শাস্ত্রের মতে শুক্রবার এবং রবিবার অশুভ দিন। কলিকাতার জ্যোতিষ সম্রাট স্বামী মদনানন্দ আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠে বললেন-এ ওরা কি করল? ১৪ আগষ্টের মধ্যরাত থেকে ১৫ আগষ্টের সারা দিনটি শনি, বৃহষ্পতি এবং শুক্র গ্রহ তাদের স্বর্গীয় স্থান থেকে ভ্রষ্ট হয়ে কর্মস্থানের নবমে অর্থ্যাৎ সম্পূর্ণ পাপস্থানে অবস্থান করবে। সুতরাং ভারতের জন্য পার্টিশনের দিনটি সমূহ বিপর্যয়ের দিন। সুতরাং একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়-ভারতে মুসলমান রাষ্ট্রের অভ্যুদয় নেতা- নেত্রী, লেখক, সাহিত্যিক এমনকি জ্যোতিষীরাও মেনে নিতে পারেনি।

শ্রী বিমলানন্দ শাসমল লিখেছেন, ‘পাকিস্তান সৃষ্টি হিন্দুদের মনে এক অপ্রীতিকর প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল। যে ভারত মাতাকে হিন্দুরা দেবী সমান বলে পূঁজা করে, মুসলমানরা সেই মাতাকেই দ্বি-খন্ডিত করলো বলে হিন্দুরা ক্ষুব্ধ ছিল। 
(সূত্রঃ হায়দ্রাবাদ আমাদের পথ চলার দিক-নির্দেশনা, আরিফুল হক, দৈনিক ইনকিলাব ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯)

১৯৪৭ সালে বৃটিশের বিদায়ক্ষণেই হায়দারাবাদের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ই সাম্রাজ্যবাদী বৃটেন বুঝতে পেরেছিল, পৃথিবী জুড়ে তার কারবার করবার দিন শেষ হয়ে এসেছে। তাই তারা ভারত ত্যাগের এরকম প্রস্তুুতিও নিয়ে ফেলেছিল। ভারতে বৃটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল হিন্দুদের সহযোগিতায়। তাই বিদায়ের কালেও তারা পুরনো মিত্রকে অসন্তুুষ্ট করতে চায়নি। ভারত বিভক্ত হোক এবং ভারতের বুক জুড়ে মুসলিম লীগের দাবী মোতাবেক একটা মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হোক-মুসলিমবিদ্বেষী বৃটেন এটা কখনোই চায়নি।

ভারতের শেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন ছিলেন নেহেরুর ব্যক্তিগত বন্ধু। তিনিও চাননি ভারত বিভক্ত হোক। কেবলমাত্র কায়েদে আযমের প্রবল ব্যক্তিত্ব ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের সামনে বৃটিশ সরকার ও কংগ্রেসের হিন্দু নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানের দাবীকে অখন্ডনীয় বাস্তবতা বলে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন। পাকিস্তানের দাবীকে যখন ধূলিস্যাৎ করা গেল না, তখন নেহেরু ও তার সাম্রাজ্যবাদী বন্ধু মাউন্ট ব্যাটেন র‌্যাডক্লিফ রোয়েদাদের মাধ্যমে বিকলাঙ্গ পাকিস্তান দেয়ার ব্যবস্থা করেন।

মুসলমানদের ন্যায্য দাবি-দাওয়ার প্রতি উপক্ষো ও ষড়যন্ত্র করে তাদেরকে খর্বাকৃতির পাকিস্তান দেয়ার এসব গোপন পরামর্শের কথা পরবর্তীকালে ল্যারি কলিন্স ও ডোমিনিক লাফিয়ের কৃত গ্রন্থে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে। দেশ বিভাগের সময় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, দেশীয় রাজ্যগুলো তাদের ইচ্ছানুসারে ভারত অথবা পাকিস্তানে যোগ দিতে পারবে অথবা তাদের স্বাধীন সত্তা বজায় রাখতে পারবে।

মীর লায়েক আলী জানিয়েছেন, এ সিদ্ধান্ত অনুসারেই হায়দারাবাদের নিজাম মাউন্ট ব্যাটেনের কাছে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, হায়দ্রাবাদ ভারত বা পাকিস্তান কোন রাষ্ট্রেই যোগ দেবে না, সে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবেই থাকবে। মাউন্ট ব্যাটেন উত্তরে নিজামকে জানান যে, তিনি তার পত্র যথাযথভাবে ব্রিটিশ সরকারের কাছে প্রেরণ করেছেন এবং তিনি খুব শিগগিরই তার উত্তর আশা করছেন। মীর লায়েক আর লিখেছেন-উত্তরপত্রটি অবশ্য কখনোই আসেনি। কেননা, মাউন্ট ব্যাটেন পরবর্তীকালে স্বীকার করেছেন, তিনি নিজামের পত্রটি বৃটিশ সরকারের নিকট আদৌ প্রেরণ করেনি।

মাউন্ট ব্যাটেনের এই স্বীকৃতির সাথেই যোগ রয়েছে হায়দারাবাদকে নিয়ে বৃটিশ সরকার ও কংগ্রেস হিন্দু নেতৃবৃন্দের গভীর ষড়যন্ত্রের। ভারত বিভাগের পরেও কংগ্রেস ব্যাটেনকে স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্ণর জেনারেল নিয়োগ করেছিল। এ ছিল তার মুসলমানদের সাথে বেঈমানীর পুরস্কার। মাউন্ট ব্যাটেনকে কংগ্রেস কর্তৃক গভর্ণর জেনারেল নিয়োগের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল দেশীয় রাজ্যগুলোকে সুচতুর দক্ষতার সাথে ভারতভুক্ত করা। দেশীয় রাজ্য হিসেবে কাশ্মীর ও হায়দারাবাদের গুরুত্ব ছিল সর্বাধিক এবং নেহেরুর দৃষ্টি বেশী করে পড়েছিল এ দুটি রাজ্যের ওপর।

দেশ বিভাগের সাথে সাথে হায়দ্রাবাদ নিজেকে স্বাধীন হিসেবে ঘোষণা করে। সেখানে একটি স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং একটি স্বাধীন সরকারের জন্য যা যা প্রয়োজন তাও চালু করা হয়। কিন্তু অখন্ড ভারতের স্বপ্নদ্রষ্টা নেহরু এটা মেনে নিতে পারেননি-ভারতের হৃৎপিন্ডের মধ্যে পাকিস্তানের মতো আর একটা স্বাধীন রাষ্ট্র মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। তাই তিনি একে সামরিক আগ্রাসনের মাধ্যমে রাতারাতি দখল করে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। 

বাংলাদেশ যেমন তিনদিক থেকে ভারত এবং একদিক সমুদ্র পরিবেষ্টিত। জুনাগড়ও ছিল তিন দিকে দেশীয় রাজ্য, একদিকে সমুদ্র বেষ্টিত। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগষ্ট জুনাগড়ের নবাব পাকিস্তানে যোগদানের কথা ঘোষণার সাথে সাথেই কংগ্রেসের গোপন সংস্থা দেশটিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি শুরু করে দেয় এবং সেই অজুহাতে ভারতীয় সৈন্যরা জুনাগড় ঘেরাও করে ফেলে। নভেম্বরে ভারতীয় সৈন্যরা জুনাগড়ে প্রবেশ করে এবং সম্পূর্ণ পশুশক্তিবলে দেশটি দখল করে নেয়। জুনাগড় দখলের সময় ভারতীয় অজুহাত ছিল- সেখানকার জনগণের বেশীরভাগ হিন্দু, যারা ভারতে যোগদানের পক্ষপাতী। কিন্তু পরবর্তীতে কাশ্মীরের ক্ষেত্রে তারা এ যুক্তিটি আর মানতে রাজি হয়নি। জুনাগড়ের পর হায়দারাবাদ।

১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্ট স্বাধীন পাকিস্তানের ঘোষণা দেয়া হয়। ১৫ আগষ্ট মাউন্টব্যাটেনকেই ভারতের গভর্ণর জেনারেল করে স্বাধীন ভারত বা হিন্দুস্থান প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ঐ দিনেই হায়দারাবাদও স্বাধীনতা ঘোষণা করে। আগ্রাসী ভারত সেদিন হায়দারাবাদের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি, যেমন পারেনি জুনাগড় মানভদর কাশ্মীরের স্বাধীনতা মেনে নিতে। পন্ডিত নেহেরু প্রকাশ্যে হুঙ্কার দিয়ে বলেন, ‘যদি এবং যখন প্রয়োজন মনে করবো হায়দারাবাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান শুরু করা হবে’। 

নেহেরুর এই দাম্ভিক উক্তি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ১৯৪৮ সালের ৩০ জুলাই বৃটিশ কনজারভেটিভ পার্টির বিরোধী দলীয় নেতা উইনস্টাইন চার্চিল কমন্স সভায় বলেছিলেন, ‘নেহেরুর ভীতি প্রদর্শনের ভাষা অনেকটা হিটলারের ভাষার অনুরূপ, যা তিনি অস্ট্রিয় ধ্বংস করার সময় ব্যবহার করেছিলেন’। তিনি বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভাকে সতর্ক করে বলেছিলেন, তাদের পবিত্র দায়িত্ব এবং কর্তব্য হচ্ছে, যে সমস্ত রাজ্যকে সার্বভৌম মর্যাদা দান করা হয়েছে সেগুলোকে গ্রাস করা, শ্বাসরুদ্ধ করা কিংবা অনাহারে রেখে শক্তিহীন করে গ্রাস করার প্রক্রিয়াকে বৃটিশ সরকার যেন অনুমোদন না দেয়। 

মিঃ চার্চিলের সেই সতর্কবাণীকে আমল দেয়নি বৃটিশ সরকার, আমল দেয়নি মাউন্টব্যাটেন। নেহেরু, মাউন্টব্যাটেন, প্যাটেল চক্র ধূর্তামী, ছলনা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে যেমন উপমহাদেশের ৫৬২টি করদ রাজ্যের অধিকাংশই গ্রাস করে নিয়েছিল, তেমনিভাবে হায়দ্রাবাদ দখলেরও পরিকল্পনা আঁটতে লাগলো। তাদের চিরাচরিত অভ্যাস এবং ব্লু-প্রিন্ট অনুযায়ী প্রথমেই দেশের অভ্যন্তরে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অনুপ্রবেশকারী ঢুকিয়ে দিয়ে হায়দারাবাদের অভ্যন্তরে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হলো।

সত্যগ্রহের নামে হিন্দু-মুসলমানের শত শত বছর ধরে গড়ে ওঠা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংস করে দেয়া হলো। রামানন্দ তীর্থ নামক জনৈক কংগ্রেস নেতা ধর্মকে অবলম্বন করে দেশে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করলেন। হায়দ্রাবাদ সরকার ধর পাকড় শুরু করলে তিনি ভারতে পালিয়ে গিয়ে সেখানে বসে এ্যাকশন কমিটি তৈরি করলেন। সেই এ্যাকশন কমিটির লোকজন দলে দলে হায়দারাবাদে ঢুকে পড়ে মুসলমানদের হত্যা, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ এবং সীমান্তরক্ষীদের সাথে খন্ড যুদ্ধে লিপ্ত হলো।

১৯৪৮ সালের ২৯ নভেম্বর ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ পত্রিকায় লেখা হলো বিদ্রোহীরা হায়দারাবাদের ১৭৫টি পুলিশ ফাঁড়ির উপর আক্রমণ করেছে, ১২০টি স্থানে রেললাইন উপড়ে ফেলেছে, ৬১৫টি কাস্টমস এবং পুলিশ ঘাঁটি ধ্বংস করেছে। দেশের অভ্যন্তরে কিছু মানুষও বাইরের মদদপুষ্ট হয়ে সন্ত্রাসীদের সাহায্য করতে লাগলো। কংগ্রেস এবং কম্যুনিষ্টরা এক হয়ে রাজতন্ত্র উচ্ছেদের নামে দেশে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে দিল। যা ইতিহাসে তেলেঙ্গানা বিদ্রোহ নামে চিরকুখ্যাত হয়ে আছে।

পরিস্থিতি এমনই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল যে বিদ্রোহীরা পুলিশ দিয়ে ঠেকানো সম্ভব ছিল না, কারণ তাদের হাতে ছিল ভারী যুদ্ধাস্ত্র যা ভারত থেকে সরবরাহ করা হচ্ছিল। তারা একের পর এক গ্রাম দখল করে সেখান থেকে মুসলমানদের উচ্ছেদ করতে লাগলো, খাজনা আদায় করতে লাগলো। এরকম এক নাজুক পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকার সেনাবাহিনী তলব করলেন। সেখানেও দেখা গেল পুলিশের মতই অস্ত্র সংকট রয়েছে। কারণ বিদ্রোহীদের হাতে ছিল অনেক উন্নত যুদ্ধাস্ত্র।

এহেন পরিস্থিতিতে মুসলিম সংগঠনগুলোর বসে থাকার উপায় ছিল না। তারা আক্রান্ত মুসলিম জনগণকে সংগঠিত করে, আত্মরক্ষামূলক অস্ত্র ট্রেনিং দিয়ে তাদের প্রতিরোধ বাহিনী হিসেবে গড়ে তুললেন। বিখ্যাত কাসিম রিজভী কলেজ ছাত্রদের নিয়ে গড়ে তুললেন এক প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী, যাদের নাম রাখা হলো ‘রেজাকার’ অর্থ্যাৎ স্বেচ্ছাসেবক। দেখতে দেখতে ঝড়ের দ্রুততায় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীতে যোগ দেবার জন্য জনগণ এগিয়ে আসতে লাগলো। সীমান্ত এলাকায় তারা প্রতিরোধ বুহ্য রচনা করে ভারতীয় অনুপ্রবেশ স্তব্ধ করে দিতেও সক্ষম হলো। পৃথিবীব্যাপী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর নাম ছড়িয়ে পড়লো সেই সাথে কাসিম রিজভীরও সুনাম।

কিন্তু মিথ্যা কথা এবং প্রোপাগান্ডায় দক্ষ ভারত স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর নামে খুন, লুট আর কল্পিত অত্যাচারের গল্প তৈরি করে, রং ছড়িয়ে তাদের প্রচার মাধ্যমগুলোর মধ্যে প্রচার করে, দেশময় আতঙ্ক ছড়াতে লাগলেন। তারা প্রচার করতে লাগলো ভারত হায়দ্রাবাদ আক্রমণ করলে, স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী হিন্দুদের কচু কাটা করবে। তাদের প্রচারে আতঙ্কিত হয়ে হিন্দুরা দলে দলে ভারতে পালিয়ে যেতে লাগল। সেই সুযোগে ভারত তার স্বরে চিৎকার করতে লাগলো যে, হায়দারাবাদে হিন্দুদের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। এভাবেই সংগঠিত অপপ্রচারের মাধ্যমে হায়দারাবাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করে তারা ভারতে সেনা অভিযানের ক্ষেত্র প্রস্তুুত করতে লাগল।

এই সময় ভারত হায়দারাবাদের সাথে একটা ‘স্ট্যান্ড স্টীল’ চুক্তি করে। এই চুক্তির শর্তানুযায়ী পরিস্থিতির উপর নজর রাখার জন্য হায়দারাবাদের পক্ষে নিজাম মন্ত্রিসভার প্রাক্তন মন্ত্রী এবং প্রখ্যাত স্থপতি নওয়াব ইয়ার জংকে দিল্লীতে এবং অপর পক্ষে ভারতের গুজরাতি রাজনীতিবিদ, লেখক এবং এককালের বম্বের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, কে এস মুন্সীকে হায়দারাবাদে ভারতীয় প্রতিনিধি নিযুক্ত করা হলো। এই স্ট্যান্ড স্টীল চুক্তির সূত্র ধরেও বলা যায় যে, ভারত হায়দারাবাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নিয়েছিল। 

দুর্জনের ছলের অভাব হয় না। ভারতেরও হায়দ্রাবাদ আক্রমণ করার ছলছুতা আবিষ্কারে দেরী হলো না। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের অব্যবহিত পরে রিজার্ভ ব্যাংকের অংশ হিসাবে পাকিস্তানের প্রাপ্য ৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে ভারত যখন অস্বীকৃতি জানালো এবং এই টাকা না দেয়ার ফলে সদ্যজাত পাকিস্তান যখন নিদারুণ অর্থ সংকটে নিপতিত হয়ে অস্তিত্ব হারানোর উপক্রম হলো, পাকিস্তানের সেই দুঃসময়ে হায়দারাবাদের প্রধানমন্ত্রী মীর লায়েক আলী পাকিস্তানকে ২০ কোটি টাকা ঋণ দিয়ে সাহায্য করেন। দুর্জন ভারত পাকিস্তানকে ঋণ দেবার ঘটনাটিকে ভারত হায়দ্রাবাদ চুক্তির খেলাপ হিসেবে দেখিয়ে হায়দারাবাদের বিরুদ্ধে অবরোধ প্রথা আরোপ করলো। ভারতের সাথে টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হলো।

শুধু তাই নয়, হায়দারাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় প্রতিনিধি কে এমমুন্সী সকল কূটনৈতিক ভব্যতা ও শিষ্টাচার লংঘন করে হায়দারাবাদের সীমান্ত শহরগুলো নিয়মিত সফরের মাধ্যমে জনগণকে বোঝাতে লাগলেন যে হায়দ্রাবাদ রক্তে মাংসে ভারতের সাথে মিশে আছে। দুই দেশের জনগণ এক ও অভিন্ন। ভারত বিশ্বের তৃতীয় সামরিক শক্তি। সুতরাং সে অচিরেই সামরিক অভিযান চালিয়ে হায়দ্রাবাদ দখল করে নেবে। ১৯৪৭ সালের ফেব্র“য়ারী মাসের প্রথম দিকে নতুন দিল্লীর সেনা ছাউনীতে সভা ডেকে হায়দ্রাবাদ দখলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

এরকম একটা দুর্বল শক্তির বিরুদ্ধে বিপুল সেনা সমাবেশ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুর কংগ্রেসের বম্বে অধিবেশনে সদম্ভে ঘোষণা করলেন-‘হায়দারাবাদের সামনে এখন দু’টি পথ খোলা আছে-হয় পথে ফিরে আসা, নয়তো যুদ্ধ।’ নেহেরুর এই উক্তি শুনে তার দলের অনেকে উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন, নেহেরুর এই উক্তির ফলে বিশ্ববাসী জেনে যাবে যে ভারত সেনাশক্তি বলে হায়দ্রাবাদ দখলের চেষ্টা করছে। তারা নেহেরুকে বোঝালেন যে হায়দ্রাবাদ দখল সম্পর্কে তাদের নীতি হওয়া উচিত সেনা অভিযানের বিষয়টি চাপা দিয়ে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য সেখানে পুলিশী অভিযান চালানো হচ্ছে বলে প্রচার করা। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম দিকে নতুন দিল্লীর সেনা ছাউনীতে বসে হায়দারাবাদে সেনা অভিযানের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হল।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল স্যার ই-এম গোর্দাদ, জিএসও সাউদার্ন কমান্ডের উপর হায়দ্রাবাদ আক্রমণের প্ল্যান তৈরির ভারত দেয়া হল। তার অধীন দেয়া হলঃ
১। একটি আর্মড ব্রিগেড।
২। ১৭ ডোগরা রেজিমেন্টের থার্ড ক্যাভালরি ও ৯ম ব্যাটেলিয়ান।
৩। ৯ম ইনফ্যানট্রি ব্যাটেলিয়ানসহ আরও ৩টি ইনফ্যানট্রি ব্যাটেলিয়ান।
৪। ৩টি অতিরিক্ত ইনফ্যানট্রি ব্যাটেলিয়ান।
৫। ৩ রেজিমেন্ট ফিল্ড আর্টিলারী ও ১টি এন্টি ট্যাংক রেজিমেন্ট।
৬। ১৮ ক্যাভলরি সার্ভিস মেইটিনেন্স ট্রুপস।
৭। বিপুলসংখ্যক ‘শেরম্যান’ ও স্টুয়ার্ট ট্যাংক।
৮। রয়্যাল ইন্ডিয়ান বিমান বাহিনী। ‘মশা মারতে কামান দাগা’ বলে প্রচলিত একটা কথা আছে।

ভারতীয়দের ধারণা অনুযায়ী হায়দারাবাদের সামরিক শক্তি ছিল নিম্নরূপঃ
১। ২২ হাজার সেনা।
২। ৮টি ২৫ পাউন্ডের কামান।
৩। ৩ রেজিমেন্ট যানবাহন।
৪। ১০ হাজার পুলিশ ও কাস্টমস বাহিনী এবং কিছু বেসরকারী ‘রেজাকার’ বাহিনী। তাদের সেনাবাহিনীতে কোন ট্যাংক বা বিমান বিধ্বংসী কামান ছিল না এবং বিমান বাহিনী ছিল না।

১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকেই ভারত হায়দ্রাবাদ আক্রমণের সকল পরিকল্পনা, প্রস্তুুতি এবং অনুশীলন চূড়ান্ত করে ফেলে। সিদ্ধান্ত হয় ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাউদার্ণ কমান্ড, হায়দ্রাবাদে দ্বিমুখী সাঁড়াশি আক্রমণ পরিচালনা করবে। পরিকল্পিত অভিযান পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত হয় ডিভিশন কমান্ডার হিসেবে জয়ন্তনাথ চৌধুরী এবং আর্মড ব্রিগেড কমান্ডার হিসেবে ব্রিগেডিয়ার এসডি বর্মার উপর। ১৯৪৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ভারতীয় বাহিনী হায়দ্রাবাদ অভিযান শুরু করে। ভারতীয় বাহিনী হায়দ্রাবাদে সেনা অভিযানের নামকরণ করেছিল ‘অপারেশন পোলো’। হায়দারাবাদের পক্ষে সেনা পরিচালনা করেন সাঈদ আহমেদ আল ইদরুস।

সিরাজদ্দৌলার সেনাপতি মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতার জন্য ভারত থেকে হাজার বছরের মুসলিম শাসন উচ্ছেদ হয়েছিলো। মহিশূর রাষ্ট্র টিপু সুলতানের সেনাপতি মীর সাদিকের বিশ্বাসঘাতকতার ফলে বীর যোদ্ধা টিপুকে সাধারণ যোদ্ধার মাঝে লাশ হয়ে পড়ে থাকতে হয়েছিলো। মুসলমানদের দুর্ভাগ্যের কারণ হলো, তাদের মধ্যে মোয়াবিয়া, এজিদের সংখ্যা বেশী দেখা যায়। হায়দ্রাবাদ থেকেও নিজামশাহী নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিলো সেনাপতি আল ইদরুসের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে।

দেশপ্রেমিকদের সকল চেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে গেল। ১৯৪৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর হায়দ্রাবাদ বাহিনীর প্রধান সেনাপতি আল ইদরুস রাজধানী হায়দ্রাবাদের বাইরে গিয়ে ভারতীয় সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জেএন চৌধুরীর কাছে আত্মসমর্পণ করলেন। অস্ত্র সমর্পণের সেই অনুষ্ঠানে আল ইদরুস ছাড়া হায়দ্রাবাদের আর কোন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিল না। ১৯৪৮ সালে স্বাধীন হায়দ্রাবাদ দখল করার পর ভারতীয় রাজনীতিবিদরা বিশ্বের দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে রাখার কৌশল হিসেবে মহামান্য নিজামকে কিছুদিনের জন্য রাজপ্রমুখ মর্যাদায় ভূষিত করলেও নিজাম মীর ওসমান আলী খান, আসফজাই রাজবংশের ৭ম এবং শেষ প্রদীপ হিসেবে একদিন নিভে গেলেন।

জন্মভূমির প্রতি প্রগাঢ় ভালবাসা নিয়ে ৭ম ও শেষ নিজাম মীর ওসমান আলী খান ১৯৬৭ সালের ২৪ ফেব্র“য়ারী দুপুর ১টা ২২ মিনিটে এই নশ্বর পৃথিবীর ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু তার অতৃপ্ত আত্মা হয়ত আজও সেই সাধের হায়দ্রাবাদ রাজ্যকে খুঁজে ফিরছে। স্বাধীনতা গ্রাস করার সাথে সাথে আগ্রাসী ভারতীয় শক্তি যে তার প্রিয় হায়দ্রাবাদের নামটুকুও মুছে ফেলেছে সে কথা আজ তাকে কে বলে দেবে? 

পঠিত : ১৬৯৬ বার

মন্তব্য: ০