Alapon

অধ্যাপক গোলাম আযমঃ যাকে চিনতে পারিনি আমরা

রাজু সিলেট শাবিতে পড়ালেখা করে, বন্ধুদের সঙ্গে টংয়ের দোকানে আড্ডা দেয়ার সময় টিভি স্কিনের ব্রেকিং নিউজ দেখলো হঠাৎ, দেখেই লাফ দিয়ে উঠলো ইয়াহু বলে, কারন খবরটা হলো রাজাকার, আলবদর নেতা অধ্যাপক গোলাম আযম মারা গেছে।

সে বাড়ির দিকে ছুটলো খবরটা সবাইকে দিতে, আর মনে মনে হিসাব কষতে লাগলো চৌহাট্রা পয়েন্টে আজ যাবে, ওখানে সিলেট কেন্দ্রিয় শহিদ মিনারে মুক্তিযোদ্ধের  স্বপক্ষের শক্তিদের সাথে স্লোগান তুলবে। রাজাকারের বিরোধে স্লোগান দিবে।

এই চিন্তা করে মহাখুশিতে সে বাষায় ঢুকলো, ঢুকেই তার প্রানের প্রিয় দাদু মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা সৈনিক রহিম মিয়াকে খবরটা দিলো, রহিম মিয়া তার প্রানের চেয়েও প্রিয়, কারন একেতো তার দাদা, তার উপর মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষাসৈনিক। ওনি যা বলেন তাই শুনে সে।

সে রহিম মিয়াকে খবরটা দিয়ে লাফাচ্ছে, হঠাৎ চোখ পড়লো ওনার দিকে, দেখলো ওনি বিষন্নমনে বসে আছেন জিম ধরে। চোখ ছলছল করছে তার, কাছে গিয়ে হাটুগেড়ে বসে প্রশ্ন করলো কি হলো দাদু! খুশিতে কেদে ফেললে? ওনি বললেন তুই জানস কিছু ওনার সম্পর্কে?
রাজু বললো হা, ও তো রাজাকার।
আর কি জানস,?
আর কি আবার?
তাহলে শোন......

১৯৫০ সাল। মাতৃ ভাষা বাংলার জন্য ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ হরতাল ডেকেছে। স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে। টান টান উত্তেজনা। ডাকসুর জিএস তখন ব্যস্ত। কে কোথায় পিকেটিং করবে তা নিয়ে সবাইকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। নিজেও তেজগাঁও পুরনো এয়ারপোর্টেরকাছে পিকেটিংয়ে নামলেন। সফলভাবে হরতাল পালনকালে গ্রেফতার হলেন। এরই মাঝে এই হরতাল এবং তারগ্রেফতার ছাত্রসমাজে ছড়িয়ে দিলো এক উত্তেজনা।

তিনি আর কেউ নন। প্রথমবাংলা ভাষার দাবি উত্থাপনকারী ডাকসুর জিএস ভাষা সৈনিকঅধ্যাপক গোলাম আযম। আমিও ছিলামরে তখন তার দলে ।

রাজু হতবাক! প্রানের প্রিয় দাদু তাকে কি শুনালেন আজ। সে গোলাম আযমের বিষয়ে জানতে আরও আগ্রহী হয়ে উঠলো, সে প্রশ্ন করলো, ভাষা আন্দোলনে তার উল্লেখ্য যোগ্য ভুমিকাগুলা কি?
তার দাদু বললেন...

ভাষা আন্দোলনে তার উল্লেখযোগ্য ভুমিকা হলোঃ
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ একদল ছাত্র নিয়ে ভাষা আন্দোলনের পক্ষে পিকেটিং করার সময় সদলবলে গ্রেফতার হন এবং তেজগাঁও থানায় বেড়া-বিহীন টিনের ঘরে সাত দিন রোদ বৃষ্টিতে অসহনীয় যন্ত্রণায় ভুগেছেন।

১৯৪৮ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকায় সফররত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে গোলাম আযম রাষ্ট্রভাষা ও পূর্ব পাকিস্তানের সামগ্রিক দাবী সম্বলিত ঐতিহাসিক ‘অভ্যর্থনা স্মারকলিপি’ প্রদান করেন। উল্লেখ্য, ১৯৪৭ থেকে ১৯৪৯ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ঢাকসু) জি.এস. ছিলেন।

১৯৫২ সালে মার্চের ৬ তারিখে রংপুরে ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অপরাধে গ্রেফতার হয়ে একমাস রংপুর জেলে অন্তরীণ ছিলেন।

২১ফেব্রুয়ারী যাতে পালন করতে না পারেন তার জন্য ১৯৫৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং দু মাস পরে হাইকোর্টের নির্দেশে মুক্তি লাভ করেন। রাজুর যেনো আগ্রহের শেষ নেই,প্রশ্ন করলো ওনার শিক্ষা-দীক্ষা কেমন,??? তার দাদু বললেন যতটুকু আমি জানি তা হলো,,

১৯৩৭ সালে  জুনিয়র মাদ্রাসা পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। এস. এস. সি. পরীক্ষায় মেধা তালিকায় গোলাম আযম ত্রয়োদশ স্থান লাভ করেন।

১৯৪৪ সালে ইসলামিক ইন্টারভিউ কলেজ থেকে আই এ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে ঢাকা বোর্ডে দশম স্থান অধিকার করেন।

১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের কাজে জড়িয়ে পড়ায় গোলাম আযম পরীক্ষা দিতে পারেননি এবং ১৯৪৯ সালে দাঙ্গাজনিত উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে তিনি ১৯৫০ সালে এম. এ. পরীক্ষা দেন এবং দ্বিতীয় বিভাগ
পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

রাজু হা করে শুনছিলো,,আবার বললো সবার তো উক্তি থাকে, উনার কোন উক্তি মনে আছে?

তার দাদু এবার বললেন হু, ওনি তো অনেক উক্তি দিছেন বইও লিখছেন, তবে একটা উক্তি আজ বড়ই মনে পড়ছে,,তা হলো

"আমি জেল, জুলুম, নির্যাতন, এমনকি মৃত্যুকেও ভয় পাই না। মৃত্যু অত্যন্ত স্বাভাবিক, অনিবার্য। একদিন সবাইকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। আমি দৃঢ়ভাবে আল্লাহকে বিশ্বাস করি, আখিরাতে বিশ্বাস করি, তাক্বদির বিশ্বাস করি।  আরও বিশ্বাস করি যে, আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কোন কিছুই হয় না এবং তিনি যা করেন তা বান্দাহর কল্যাণের জন্যই করেন। সুতরাং, আমি আমার মৃত্যু নিয়ে সামান্যও শঙ্কিত নই"।
-অধ্যাপক গোলাম আযম

রাজুর মাথাটা যেনো চক্কর দিয়ে উঠলো,, আর কোন কথা মুখ দিয়ে এলো না। সে রাস্তায় হাটছে আর চিন্তা করছে একি করলাম  আমি এতোদিন, এতোদিন কার বিরোদ্ধে স্লোগান দিলাম? তাহলে কি ভালো মানুষেরা এভাবেই অপপ্রচারের স্বীকার?

সে রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলো, এরই মধ্য দেখলো তার পাশ দিয়ে মিছিল যাচ্ছে, "নারায়ে তাকবীর স্লোগানে " ভাবতে ভাবতে মিছিলের শেষ অংশে ঢুকে পড়লো সত্যের পক্ষে লড়াইয়ে, অজানা পথে ছুটলো...............

পঠিত : ১৯০৩ বার

মন্তব্য: ০