Alapon

ধর্যশীল (পর্ব-১)

মোহিত একজন নাটকের ডিরেক্টর,চৈতি মোহিতের দ্বিতীয় প্রেমিকা,যাকে সে,প্রেমিকা বলে শিকার করেনি মাত্র কয়েকজন বন্ধু ও ভাইবোন এবং অফিসের কেউ কেউ,জানতো,ওর নতুন প্রেমের সম্পর্কর কথা ।সবাই জানে মোহিতের শুধু একটাই প্রেমিকা,তার নাম সুজানা, কলেজ থেকে মেয়েটিকে সে চিনে ।
সুজানার সাথে প্রেমের সম্পর্কে ফাটল ধরে,এর মাঝে সুজানা আমেরিকা চলে যায় । তারপর কয়েক মাস পর মোহিতের জীবনে চৈতির আগমন ঘটে। চলতে থাকে তাদের নতুন প্রেমের সম্পর্ক তারপর এক সময়ে সুজানা আবার মোহিতের জীবনে ফিরে আসলে মোহিত চৈতিকে কোনো কিছু না বলে ছেড়ে দেয়, চৈতি ও মোহিত প্রেমের সম্পর্কটা অন্ধকার ঢাকা পরে যায়,হঠাৎ করে প্রেমের সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার কারণে চৈতির জীবনে
অনেক দুঃখ মেনে আসে,  একটি বছর সে পড়াশোনা থেকে বিরত থাকে, কিন্তু তবুও চৈতি কেউকে কোনো অভিযোগ করেনি, নীরবে সব কিছু সহ্য করে গেছে তার শোবার বালিশটা সাক্ষী হয়ে রইলো চোখের পানি দিয়ে,সুজানার কাছে পুরো ব্যাপারটাই,অজানা রয়ে যায় ।
সুজানা জানে তার বিদেশে চলে যাবার পর মোহিত সাথে কোন মেয়ের প্রেম সম্পর্কে জড়াইনি ।মোহিতের বেশির ভাগ নাটক সুজানাকে উদ্দেশ্য করে আবার কোন নাটকের নায়িকার নাম থাকে সুজানা ।
চৈতি সব জানে,সবই দেখে যখন টিভিতে নাটকগুলো প্রচার হতো,সুজানাকে উদ্দেশ্য করে কিছু সংলাপ ও থাকতো আর তা দেখে চৈতির খুব কষ্ট পেতো । তারপরও মোহিতের নির্মিত নাটক দেখা থেকে বাদ যায় না । প্রেম সম্পর্ক শেষ হয়ে গেলো কিন্তু ভালো লাগাটা রয়েই গেলো।
(কয়েক মাস আগের)
মোহিতের নির্মিত নাটক টিভিতে দেখাবে,চৈতি নাটক দেখবার জন্য প্রায় বিশ মিনিট আগে টিভি খুলে রেখেছে ।
নাটক শুরু হলো মুদ্ধ হয়ে চৈতি নাটক দেখলো প্রথম থেকে
একদম শেষ পর্যন্ত । বরাবরে মতো মোহিতের নাটকে একই ভাবে আগের প্রেমিকার  নাম অনুসরণ করে নাটকের চরিত্রে নাম রাখা হয়েছিল ।
চৈতির চোখে পানি চলে আসলো,মন খারাপ হয়ে গেল হঠাৎ করে মুখের হাসিটা যেন কোথায় হারিয়ে গেলো ।
চৈতির খালাতো বোন চৈতিকে পাশ থেকে দেখল এবং সে চৈতিকে বললো ।
রুবি: চৈতি তুমি কেন ওর নাটক দেখ?
চৈতি তার চোখ ভেজা অবস্থায় তাকে জড়িয়ে ধরলো।
চৈতি: কেন আমার এতো কষ্ট ও আমাকে
এখনো সবার কাছে লুকিয়ে রেখেছে ।
রুবি চৈতির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো ।
রুবি:মোহিত নিজেকে নিজেই ধোকা দিয়েছে,একটা মিথ্যের সাইনবোর্ডে ওই মেয়েটির নাম জুলিয়ে রেখেছে সবার চোখের সামনে ও সবাইকে ফাঁকি দিচ্ছে,ফাঁকি দিচ্ছে সমাজকে এবং ওই মেয়েটা একদিন ঠিকই বুঝবে।
উপরে একজন বসে আছেন তিনি সব দেখছেন,সবার নজর থেকে লুকিয়ে রাখলেও ওনার কাছে থেকে লুকিয়ে রাখতে পারবে না ।
এই দুনিয়াতে কোন ঘটনা বা লুকায়িত ভালোবাসা বেশি দিন লুকানো অবস্থায় থাকে না তা একদিন না একদিন সবার সম্মুখে চলে আসে ।
সে তোমাকে মনে করে না,তাতে তোমার কষ্ট পাওয়া উচিত না ।
"Life is so beautiful and small."
চৈতি তুমি খুব ভালো,ওই মেয়েটিকে তুমি কিছুই বলনি,অন্য মেয়ে হলে ওই মেয়েটাকে খুঁজে বের করে সব কিছু বলতো ।চৈতি:ভালোবাসার ফলাফল যে এতটা অসহনীয় কষ্টের সেটা আজ বুঝতে পারছি ।
রুবি:আল্লাহ্পাক, তাদের সাথেই আছেন,যারা ধর্যশীল । 
একদিন দেখবে মোহিত তোমাকে মনে করবে,ঠিকি তোমার প্রেমের সম্পর্কর কথা সবার কাছে প্রকাশ করবে এবং জানবে সুজানাকেও । তোমাকে নিয়ে কিছু না কিছু থাকবে ওর নাটক জুড়ে ।
সেদিন হয়তো তুমি তাকে আর মনে করবেন না,তোমার জীবনে অন্য কারো আবির্ভাব ঘটবে,যে তোমাকে তোমার সব কষ্ট মুছে দিব ।
চৈতি:আর কোন কারো দরকার আমার নেই ।
রুবি:জীবনে বেঁচে থাকবার জন্য অন্য কারো  প্রয়োজন আছে ।    
তোমাকে অনেক বড় হতে হবে,বাবা মার কথা মেনে চলো,অনেক কাজ আছে তোমার করবার আছে ।
চৈতি:কিভাবে সবকিছু করবো,আমার কিছুই করবার মতো আর মন নেই ।
রুবি একটু হেসে বললো উঠলো আরে বোকা মেয়ে মোহিতকে অন্তত দেখিয়ে দাও,ওর থেকে ভালো কিছু তুমি পারো,নানী মারা যাওয়া আগে তোমাকে যা বলেছিলো মনে আছে?
চৈতি:এই কথা ।
চৈতি মুখে হাসি ফুটলো রুবি চৈতির চোখের পানি মুছিয়ে দিলো
রুবি তাহলে আর কান্না নয়,আর ওই নাটক দেখা হবে ?
চৈতি :না ।
বর্তমান
চৈতি মোহিতের কথা খুব একটা মনে করে না,মন ভাল থাকে সব সময়ে ।
রেজাল্ট ভালো করেছে, ফ্রেন্ডস জন্য খাবার দোকানে পার্টি দিয়েছে পার্টি,শেষে যখন বেরিয়ে,ভুল করে তার ছোট ব্যাগটি টেবিল পাশে রেখে এসে পরলো ।
পিছন থেকে একটি ছেলের কণ্ঠ Excuse Me একটু দাঁড়ান আপনার ব্যাগ ।
চৈতি সাথে সাথে দাঁড়ালো এবং ব্যাগটি খুঁজতে থাকলো, দেখলো ব্যাগ নেই ।
ছেলে:আপনি আপনার ব্যাগ ফেলে এসেছিলেন ।
চৈতি:আপনি যে আমার কি উপকার করলেন,এতে  আমার ইডেন্টি কার্ড ছিল By the way thankyou.
ছেলে:Welcome but next time এরকম ভুল করবেন না ।
ছেলেটি বন্ধু,ছেলেটিকে পাশে থেকে ডাক দিও,আরিফ,আমার
দেরি হয়ে যাচ্ছে ।
ছেলেটি তার বন্ধুর দিকে তাকালো ।
ছেলে:চলি Bye
চৈতি:বললো Bye ।

পঠিত : ৬১২ বার

মন্তব্য: ০