Alapon

কবি আল মাহমুদ এর ‘উপমহাদেশ’।

এক টান দিয়ে শাড়িটা খুলে ফেলল। তারপর সেই শাড়ি দিয়ে আমাকে বেঁধে ফেলল। নন্দিনীর দিকে তাকিয়ে দাঁত গুলো বের করে বলল, শাড়ি তুমি নিজেই খুলবে নাকি তোর বোনের মত করে খুলে নিতে হবে?

নন্দিনী আপন হাতে শাড়িটা খুলে মাঝবয়স্ক রাজাকার কমান্ডারের হাতে তুলে দিল। নন্দিনীর শাড়ি দিয়ে নন্দিনী আর সীমা দিদিকে বেঁধে ফেলা হল। এরপর আমাদেরকে নিয়ে যাওয়া হল একটি গ্রামে। গ্রামটাকে দেখে মনে হল এখানে তেমন কেউ নেই। সম্ভবত ঐ গ্রামের কোনো এক সভ্রান্ত ব্যক্তির বাড়িতে আমাদেরকে নেওয়া হল। চোখ বেঁধে রাখায় কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না; সবই অনুমান। বাড়ির একটা ঘরে আমাকে বন্দি করে রাখা হল আর ঠিক পাশের ঘরেই নন্দিনী আর তার বোন সীমা দিকে বন্দি রাখা হল।

সারাদিনের ক্লান্তি আর রাজাকারদের নির্যাতনের হঠাৎ করে মেঝেতে শোয়ার কারণে আমার শরীরে কাপন শুরু হল। ঠিক সেইসময় পাশের ঘর থেকে নন্দিনী আর সীমা দিদির চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম। নন্দিনী চিৎকার করে বলছিল, ভগবানের দোহাই লাগে আমাদের ক্ষতি করো না...

এতোটুকু শোনার পরই আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। যখন জ্ঞান ফিরে তখন মেশিনগানের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। আচমকা ঘরের দরজাটা খুলে গেল এবং অল্প বয়সী দুজন যুবক প্রবেশ করে আমার পানে চেয়ে বলে, কবি সাহেব! ভয় পাবেন না। আমরা মুক্তিযোদ্ধা। আনিস ভাইয়ের গ্রুপের লোক।

উক্ত ঘটনাটি মূলত কবি আল মাহমুদ-এর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ‘উপমহাদেশ’-এর কাহিনি অংশ মাত্র। গল্পের নায়ক হামিদ মীর। পেশায় সরকারি চাকুরেজীবি এবং দেশের নামকরা কবি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে কবি হামিদ মীর আনিস নামক এক মুক্তিযোদ্ধার বর্ডার পাড়ি দেবার জন্য বের হন। তারা নৌকা নিয়ে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে দুজন মেয়ে খুবই অনুরোধ করে তাদের নৌকায় উঠে বসে। আর সেই দুই মেয়েই হল নন্দিনী ও সীমা।

ঘটনাবশত কবি এবং মুক্তিযোদ্ধা আনিস বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আর এই বিচ্ছিন্নতার কারণে রাস্তা ভুলে কবি হামিদ মীর এবং নন্দিনীরা রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ে যায়। এবং পরবর্তিতে আনিস তার দলবল নিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে।

অন্যদিকে কবি হামিদ মীরের স্ত্রীও একজন মুক্তিযোদ্ধা। আর বাংলাদেশ বর্ডার পাড়ি দেওয়ার সময় নানা ঘটনার সাথে সাথে নন্দিনী এবং কবির ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। পথিমধ্যে নন্দিনীর বোন হানাদারদের গুলিতে নিহত হলে নন্দিনী কবির উপর আরও বেশি নির্ভর হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে নন্দিনী এবং কবি উভয়ই দুজন দুজনকে ভালোবেসে ফেলে। অন্যদিকে কবি হামিদ মীর বুঝতে পারেন, তিনি এখনো তার স্ত্রীকে ভালোবাসেন। এক পর্যায়ে কবির মুক্তিযোদ্ধা স্ত্রী নন্দিনী এবং কবির মধ্যকার প্রননয়ের কথা জানতে পারেন। তারপর? তারপর কী...?

কবি আল মাহমুদ- এর প্রতি আমার এমনিতেই একটু বেশি মুগ্ধতা কাজ করে। আমার কাছে বইটি অসাধারণ লেগেছে। একদিকে ছিল প্রেম, অন্যদিকে ছিল যুদ্ধের ময়দান। আরও ছিল মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রিক কিছু চরম সত্য তথ্য!

কবি হামিদ মীর, নন্দিনী এবং কবির মুক্তিযোদ্ধা স্ত্রীর ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কী ঘটেছিল, জানতে হলে পড়ুন- ‘উপমহাদেশ’।

পঠিত : ১১২১ বার

মন্তব্য: ০