Alapon

বেনামি চিঠি

১.
ঘড়ির কাঁটা অনবরত ঘুরে চলছে। বৃষ্টি বাদলের সাথে দক্ষিণা হাওয়া। ঘুমের জন্য আদর্শ পরিবেশ তা একবাক্যে বলা চলে। নিজ বিছানায় একবার ডান পাশে তো আরেকবার বাম পাশে কখনও বা উপুর হয়ে দু’চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর প্রচন্ড চেষ্টা করে যাচ্ছে “শাকিল”। শাকিল ওয়াদুদ। তেতুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর বিজ্ঞানের ছাত্র। এই তো মাস ছয়েক পরেই বোর্ড পরীক্ষা দিবে। বন্ধুরা যখন ক্লাস-কোচিং পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত, ঠিক তখন নিজ মনে কি আজগুবি চিন্তায় ধ্যানেমগ্ন শাকিল। গোল-গাল চেহারা শ্যামলা বর্ণের অধিকারী শাকিলকে দেখে বোঝার উপায় নেই কিশোর বয়সী এই ছেলের মাথায় প্রতি সেকেন্ডে কত অসংখ্য চিন্তার ঝড় ঘুরপাক খাচ্ছে। জানালা দিয়ে মৃদু হাওয়ার তালে তালে এক পর্যায়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল শাকিল। 

শেষ রাত আকাশ থেকে ধীরে ধীরে অন্ধকার দূরীভূত হয়ে সুবহে সাদিকের দিকে অগ্রসরমান সময়। চৌকিদারের বাঁশির আওয়াজে তটস্থ ঘুমের পাড়া। বারবার বাঁশি কর্কশ আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে চৌচির শাকিলের। মুঠোফোন হাতে নিয়ে দেখল রাত ৪:৩৪ মিনিট। সকালে স্কুল আছে তাই মুঠোফোন বালিশের পাশে রেখে আবার ঘুমের দিকে নজর শাকিলের। ঠিক তখনই একটি অপরিচিত নম্বর থেকে বার্তা জমা পড়ল ইনবক্সে। এক হাতে চোখ মুছতে মুছতে মুঠো ফোনের পর্দায় অপর চোখ পড়তে হতবিহবল শাকিল। 

নিখুঁত বাংলা ভাষায় লেখা, এক লাইনের বার্তা। “যা চিন্তা করো, তা জমিয়ে না রেখে করে দেখাও, আশা করি সফল হবে।” নাম ঠিকানা বিহীন অপরিচিত নম্বরের এই বার্তা পেয়ে শাকিলের দু’চোখে জমে থাকা রাজ্যের সকল ঘুম মুর্হুতে বিলিন। শাকিল ভাবছে, যেই কথা কোন দিন সে কারও সাথে আলাপ-ই করল না, তা এই আগন্তুক ব্যক্তি জানল কিভাবে। কি করে তার নম্বর পেয়েছে এই ভেবে কূল পাচ্ছে না শাকিল। 

এরই মধ্যে গ্রামের মসজিদ থেকে ফজরের আযান ভেসে আসতে লাগল। হদিস ফিরে পেল শাকিল। বিছানা ছেড়ে অযু করে সোজা মসজিদের দিকে পা বাড়াল। নামাজ শেষে এক পা দু পা করে মসজিদ থেকে বাসায় ফিরছে সে। অন্য দশ দিনের মতো আজকের ফেরার পথটা চেনা লাগছে না তার। পথ যেন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। অবশেষে বাসায় পৌছে সোজা বসে পড়ল টেবিলে। বালিশের নিচ হতে মুঠো ফোনটি হাতে নিয়ে বার্তাটি পুনরায় কয়েকবার পড়ল। 

হঠাৎ তার মনে হলো, অপরিচিত নম্বরে ফোন দিয়ে অচেনা ব্যক্তির পরিচয় অন্তত জানতে পারি। যেই চিন্তা, সেই কাজ তার। নম্বরটিতে কল দিয়ে বাম কানে মুঠো ফোনটি চেপে ধরল। কয়েক সেকেন্ড পর, ওপাশ থেকে মহিলার কন্ঠস্বর। “দুঃখিত, আপনি ভুল নম্বরে ডায়াল করেছেন।” কয়েকবার চেষ্টা করে দেখল শাকিল। কিন্তু ফলাফল তার পক্ষে এলো না। প্রতিবারই একই কথা জানান দিলো মহিলাটি। 

এরই মধ্যে কেটে গেছে আরও কিছু সময়। ঘড়ির ঘন্টা টং টং ৭টি আওয়াজ করে জানাল দিলো এখন সকাল সাতটা বাজে। খাবারের টেবিল থেকে শাকিলের আম্মার ডাক, বাবা শাকিল নাস্তা কনতে আসো, তোমার স্কুলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। দ্রুত সকল প্রস্তুতী সম্পন্ন করে নাস্তার টেবিলে গিয়ে বসল শাকিল। কোন মতে ডিম দিয়ে একটি রুটি ও এক ঢোঁক পানি পান করে নাস্তা সম্পন্ন করল সে। টিফিন বক্স ব্যাগে নিয়ে স্কুলের পথে রওয়ানা দিলো শাকিল। 

২.
সকাল আট ঘটিকা হতে দুপুর একটা পর্যন্ত ক্লাস চলে শাকিলের। বাংলা দিয়ে শুরু রসায়নে সমাপ্তি। মাঝে মিনেট বিশের টিফিন বিরতি। আজ যেন সকল ক্লাসে উদাসী ছাত্র হয়ে গেছে শাকিল। বন্ধুরা মাঝে মধ্যে চিমটি দিয়ে মনযোগ আকর্ষনের চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু ক্লাসে অল্প সময় মনযোগ দিয়ে পরক্ষণে গভীর চিন্তায় ডুবে যাচ্ছে সে। বিষয়টি শিক্ষকদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি। মালেক স্যার তো বাংলা ক্লাসে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কোন সমস্যা কিনা ? শাকিলের উত্তর-না স্যার সেরকম কিছু না। স্যার পুনরায় বললেন তাহলে শরীর খারাপ ? একই উত্তর স্যারকে ফিরিয়ে দিলো শাকিল। 

ঘড়ির কাঁটায় ঠিক দশটার ঘরে। স্কুলের ঘন্টি বাজিয়ে দফতরি জানান দিলেন, টিফিনের সময় হয়েছে। এতক্ষণ শাকিলের সব গতিধারা পর্যবেক্ষণ করছিল, তারাই কাছের বন্ধু ইবরাহিম । পুরো নাম ইবরাহিম খলিল। ক্লাসের “ফার্স্ট বয়” এর পাশাপাশি ক্লাস ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পালন করে আসছে ইবরাহিম। টিফিন বক্সটি নিয়ে শেষ বেঞ্চে বসা শাকিলের দিকে এগিয়ে গেল সে। জানতে চাইল কি হয়েছে শাকিলের। শাকিল নিরুত্তর। ইবরাহিম একের পর এক প্রশ্নবাণে জর্জরিত করছে শাকিলকে, অপরদিকে নির্বাক দৃষ্টিতে শাকিল তাকিয়ে আছে স্কুলের লিচু গাছের দিকে। 

টিফিনের সময় শেষ। যথারীতি ক্লাস শুরু হলো। এক এক করে শেষ ক্লাস উপনিত। অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন মিলে কিভাবে পানি সৃষ্টি হয় তা সুন্দর করে বুঝিয়ে দিচ্ছেন রসায়নের রসকোষ বিহীন শিক্ষক মোহাম্মদ শাজাহান। ছোট্ট একটি অধ্যায় পড়ানো শেষে স্যার টেবিলে বসে পড়লেন। পড়ন্ত দুপুর চারিদিকে নিঃস্তব্ধতা নেমে পড়ছে। হঠাৎ আকাশ হতে নেমে পড়ল অসময়ের বৃষ্টি। টিনের চালে বৃষ্টির পড়ার আওয়াজে সবার ঘুম ঘুম ভাব চলে আসছে। এরই মধ্যে শেষ ঘন্টা বাজিয়ে স্কুল ছুটির ঘোষণা দিলেন দফতরি বেলাল কাকা। 

আবার দৃশ্যপটে হাজির ইবরাহিম, শাকিল ছাতা নিয়ে আসছিস? শাকিলের জবাব, না ছাতা চুরি হয়ে গেছে। 
ইবরাহিমঃ তাহলে কিভাবে বাসায় যাবি ?
  শাকিলঃ বৃষ্টি থেমে যাবে একটু পরেই, তারপর যাবো। 
ইবরাহিমঃ আমি ছাতা নিয়ে আসছি, চল এক সাথে যাবো।
  শাকিলঃ এক ছাতায় দুজন যাওয়া যায় নাকি? তুই তো ভিজে যাবি, তার চেয়ে তুই চলে যা, আমি পরেই আসবো। 
ইবরাহিমঃ না, বলছি না এক সাথেই যাবো, ভিজলে ভিজবো, তুই চল আমার সাথে। আজ কতদিন বৃষ্টিতে ভিজি না।
এই কথা বলেই, এক প্রকার জোর করে শাকিলকে নিয়ে রওয়ানা দিলো ইবরাহিম। হাঁটতে হাঁটতে শাকিলের বাড়ীর কাছে চলে আসছে তারা দুজন। হঠাৎ করে থমকে গেল ইবরাহিম। শাকিলের উদ্দেশ্যে দীর্ঘ প্রশ্ন, তুই মনে মনে কি চিন্তা করিস, তা জানার উপায় আমার নেই। যদি আমাকে ভালো বন্ধু ভাবিস, যেকোন কথা মন খুলে বলতে পারিস। আশা করি তোকে নিরাশ করবো না, যেকোন বিষয়ে সহযোগিতা কিংবা অন্য প্রয়োজনে আমাকে তোর পাশে পাবি। 
  শাকিলঃ তেমন কিছু না, বন্ধু!
ইবরাহিমঃ ওকে। 

আবার পথ যাত্রা শুরু দুজনের। বাড়ীর দরজার কাছাকাছি চলে আসছে দুজন। শাকিল কে বিদায় দিয়ে নিজ বাসার দিকে ইবরাহিম হাঁটছে। হঠাৎ পিছন থেকে শাকিলের চিৎকার করে ডাক। ইবরাহিম! পেছনে ফিরে তাকিয়ে ইবরাহিম দেখল শাকিল ব্যাগ রেখে দৌড়িয়ে আসছে তার দিকে। 

  শাকিলঃ বন্ধু! একটা উপকার করবি ?
ইবরাহিমঃ বল! আমি কি করতে পারি তোর জন্য । 
  শাকিলঃ আমাকে কয়েক রংয়ের পেপার যোগাড় করে দিতে পারবি?
ইবরাহিমঃ তা পারব। কিন্তু রঙ্গিন পেপার দিয়ে তুই কি করবি?
  শাকিলঃ কিছু একটা করব। তুই তাহলে একটা আঠা ও পেপার নিয়ে বিকালে কোচিংয়ে চলে আছিস।
ইবরাহিমঃ আচ্ছা ঠিক আছে।  কিন্তু কি করবি তা তো বললি না!
  শাকিলঃ বলব, সব বলব। কোচিং শেষে নদীর পাড়ে গিয়ে সব বলব।
ইবরাহিমঃ আচ্ছা তাহলে এখন যাই?
  শাকিলঃ ঠিক আছে, আসার সময় মনে করে নিয়ে আছিস।

৩.
আজ কোচিংয়ে শাকিল ও ইবরাহিমের দুজনেরই মন ছিলো না। থাকবেই কিভাবে? শাকিল ভাবছে, ইবরাহিমের কাছে কিভাবে কথা গুলো খুলে বলবে। আর ইবরাহিম ভাবছে, শাকিল কি বলতে পারে, তার সাথে রঙ্গিন পেপারের কি সম্পর্ক। যোগ-বিয়োগ মেলানোর চেষ্টা করে দেখল উত্তর মিলছে না। এরই মধ্যে কোচিং শেষ। শাকিল ও ইবরাহিম কাঁধে স্কুল ব্যাগ নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নদীর পাড়ে চলে আসছে। 

শাকিল এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখে একটি নির্জন স্থানে বসে পড়ল। শাকিলকে বসতে দেখে ইবরাহিমও বসে পড়ল। দুজন বসে পড়ে নিরবতার পরিবেশ ঘনিয়ে আনল। ইবরাহিম নিরবতা ভেঙ্গে শাকিলকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো

ইবরাহিমঃ কিরে তুই কি যেন আমাকে বলবি? আর রঙ্গিন পেপার নিয়ে আসছি। এগুলো দিয়ে কি হবে?
(শাকিল বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। কয়েকবার এদিক সেদিক হাঁটল।তারপর ইবরাহিমকে বলল)
  শাকিলঃ তুই কি জানিস, আমাদের গ্রামে অনেকে অসৎ কাজের সাথে জড়িত ?
ইবরাহিমঃ হ্যাঁ জানি তো। 
(শাকিল আবার নিশ্চুপ! অতপর আবার শুরু করল)
  শাকিলঃ তাদের জন্য এই গ্রামের অনেকে ধোঁকাবাজী, কিংবা অন্যায়ের শিকার অথবা অসৎ পথে পা বাড়াচ্ছে!
ইবরাহিমঃ হ্যাঁ, তাও জানি। কিন্তু তাতে কি হয়েছে? আমরা কি করতে পারি?
  শাকিলঃ হ্যাঁ, আমরা কি করতে পারি, তাই ভাবছি। কিছু একটা করা উচিত।
ইবরাহিমঃ তুই তাদের কে চিনিস ? যারা অসৎ কাজ করে ?
  শাকিলঃ হ্যাঁ, চিনি। ভালো মতো চিনি। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান গফুর চাচা সরকারি রাস্তা নিমার্ণের টাকা মেরে দিছে, মেম্বার গম চুরি করে বিক্রি করে বাজারে। আবুল কোম্পানী মাদক বিক্রি করে তরুণ সমাজকে বিপথে ঠেলে দিচ্ছে। ইয়াকুব স্যার নিজ ছাত্রদের পরীক্ষার আগে প্রশ্ন ফাঁস করে দেয়। পুলিশ-চৌকিদাররা ঘুষ নিয়ে অপরাধীদের থানা থেকে ছেড়ে দেয়। মুদি দোকানদার বাবুল, ওজনে কম দেয়, বাকি যারা নেয়, তাদের নামে বেশী টাকা লিখে রাখে। হাটের দিন চায়ের দোকান গুলোতে অশ্লীল ছবি ছেড়ে মানুষের বিকৃত রুচির মন তৈরী করছে তারা। বিদেশে লোক পাঠানোর নাম করে টাকা মেরে খাচ্ছে ওমর ইমরান। অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে সরকারি টাকা লুটপাট করছে এক শ্রেণীর দালাল গোষ্ঠী। প্রতি বছর যাকাতের লুঙ্গি-শাড়ী দেওয়ার নাম করে দু-একজন করে পিষে মারছে বিস্কুট কোম্পানী। এগুলো কি সহ্য হয়? একদমে বলে গেল শাকিল। 

ইবরাহিমঃ তুই, সত্যি বলছিস। আমিও মাঝে মাঝে চিন্তা করি। পরে দেখি এসব কাজে যারা জড়িত তারা সবাই প্রভাবশালী ও ক্ষমতার কেন্দ্রে আছে। আমরা ছোট মানুষ তাদের কি করতে পারি?
  শাকিলঃ কিছুতো করতে হবেই! তা না হলে....
ইবরাহিমঃ তা না হলে কি ? বল বল ....
(শাকিল নিরব হয়ে গেল। অতপর তার এই চিন্তা ধারা ও সেই অচেনা বার্তার কথা জানালো ইবরাহিমকে।)
  শাকিলঃ তাই আমি ভাবছি যেভাবে হউক, এই অসৎ লোক গুলোকে সঠিক পথে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে।
ইবরাহিমঃ কিন্তু কিভাবে ? তা কিছু ভাবছিস ?
  শাকিলঃ হ্যাঁ। 
ইবরাহিমঃ কি সেটা। 
  শাকিলঃ আমরা এইসব অসৎ লোকদের কাছে বেনামি চিঠি পাঠাবো। তাও আবার রঙিন চিঠি ও রঙিন খামে করে। 
ইবরাহিমঃ তাতে কি কোন লাভ হবে ?
  শাকিলঃ হবে, আশা করি হবে। চিঠির ভাষা প্রথম লাইনগুলো নমনীয় কিন্তু পরের লাইন গুলো ভাষাগত এতটাই কঠিন করব যেন, তাদের হৃদয় নাড়া দিয়ে যায়। 
ইবরাহিমঃ  আমারও মনে হয় কাজ কিছুটা হলেও হবে। 
  শাকিলঃ কিছুটা কাজ হলেও আমরা সফল বলে ধরে নিবো। তাছাড়া সে বলেছিল “সফল হবো”।
ইবরাহিমঃ কাজ কবে থেকে শুরু করা যায় ?
  শাকিলঃ আগামী ৩দিন স্কুল ছুটি। এর মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। 
ইবরাহিমঃ হ্যাঁ ঠিক বলেছিস। এই মিশনের একটা নাম দেওয়া লাগবে। “বেনামি চিঠি” এই নামটা কেমন ?
  শাকিলঃ হ্যাঁ ভালো। 
ইবরাহিমঃ চল তাহলে আজ খাম গুলো তৈরী করে ফেলি। 
  শাকিলঃ হ্যাঁ, আজকে খাম তৈরী করে ফেলি। তারপর কালকে সারাদিন চিঠি লিখবো। পরের দিন বিলি করে দিবো। 
ইবরাহিমঃ চল তাহলে শুরু করি। 
  শাকিলঃ চল।

৪.
৮ তারিখ দিবাগত রাত। ঠিক একই সময়। শাকিল ও ইবরাহিমের মুঠোফোনে সেই নম্বর আবার বার্তা আসল। “তোমাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য অভিনন্দন ও ধন্যবাদ। আশাকরি তোমরা সফল হয়েছে। তোমাদের উজ্জল ভবিষৎত কামনা করি।” ইতি-বেনামি বন্ধু। ফিরতি বার্তা দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। ইবরাহিম-শাকিল দু’জন পড়ল। মনে কেমন জানি একটা প্রশান্তির হিমেল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। তারপর শাকিল ফোন দিল ইবরাহিমকে....

  শাকিলঃ হ্যালো ! ইবরাহিম, আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে আবার বার্তা দিয়েছে!
ইবরাহিমঃ আমাকেও তো দিয়েছে! তোর ঐ নাম্বার থেকে। 
  শাকিলঃ তাই নাকি?
ইবরাহিমঃ হ্যাঁ। আচ্ছা ঠিক আছে ঘুমা। সকালে স্কুলে দেখা হবে। 
  শাকিলঃ ওকে। 

প্রশান্তির টানে বিছানায় এলিয়ে পড়ল ইবরাহিম-শাকিল। মুর্হুতে দু’চোখ ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেল। পূর্বদিকে একটি রক্তিম সূর্য জানান দিচ্ছে আজকের সকালটি তেতুলিয়া গ্রামবাসীর জন্য ঐতিহাসিক দিন। ফজরের পর যথারীতি নিয়মিত কাজ শেষ করে স্কুলের দিকে রওয়ানা দিলো তারা দু’জন। সকালে স্কুলে গিয়ে ইবরাহিম-শাকিল প্রথমে শুনতে পেল, তাদের ইয়াকুব স্যার তার অতীতের সকল অপরাধের জন্য ক্ষমা চেয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটিকে চিঠি দিয়েছে। সংবাদটা ইবরাহিম-শাকিলের মনে এক ধরনের চাঁপা উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করল। কিন্তু কাউকেই কিছু বুঝতে না দিয়ে সোজা ক্লাসে রুমে গিয়ে প্রথম বেঞ্চে বসে পড়ল।

পড়ন্ত বিকেল। তেতুলিয়া নদীর পাড়ে বসা দুই কিশোর। ইবরাহিম খলিল ও শাকিল ওয়াদুদ। মৃদু বাতাসের মিষ্টি দোল আজ তাদের কাছে অন্য রকম লাগছে। দু’জনের মুখে বিজয়ের তৃপ্তির হাসি। দিনভর চারিদিক থেকে একে একে খবর আসতেছিল তারা যাদের চিঠি পাঠিয়েছে, তারা সবাই অপরাধ স্বীকার করে ভবিষৎতে অসৎ পথে না চলার শপথ নিয়েছে। এমনকি যাদের তারা চিঠি পাঠায়নি তারাও স্বেচ্ছায় একই ভাবে অপরাধ স্বীকার পূর্বক অসৎ পথ ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। 

দু’জনে একই সাথে আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করল। যেন দু’জন এক সাথে তাদের বেনামি বন্ধু কে খুঁজে বেড়াচ্ছে। আর মনে মনে বলছে বন্ধু! এই বিজয় তোমার। মাগরিবের আযানে হুশ ফিরে আসল ইবরাহিম-শাকিলের। বিজয়ের আনন্দ নিয়ে বাড়ী ফিরল দুই কিশোর ও তাদের সঙ্গী “বেনামি বন্ধু ও তার বেনামি চিঠি”।

পঠিত : ৯২১ বার

মন্তব্য: ০