Alapon

বাংলাদেশের জনগণ ও একজন হাসমতের গল্প

অনেক আগে একটি গল্প শুনেছিলাম। গল্পের মূল চরিত্রের নাম হাসমত আলী। হাসমত আলী গিয়েছে গ্রামের যাত্রাপালা দেখতে। সবার আগে প্রস্তুতি নিয়ে যাত্রা মঞ্চের একদম সামনে গিয়ে সে নিজের স্থান করে নিয়েছে। হাসমতের মাথায় ছিল বিশাল টাক। চুল বলতে মাথার চারপাশে যা ছিল তা যৎসামান্য। মঞ্চে যখন আলো জ্বলে উঠেছে তখন চক চক করে উঠেছে হাসমতের টেকো মাথা।

হাসমতের পেছনেই ছিল দুই ব্যক্তি। তারা পরস্পর বন্ধু। যাদের একজন খুব ধনী। অনেক বড় ব্যবসায়ী। মঞ্চের ঝলমলে আলোতে হাসমতের টাক মাথা জ্বল জ্বল করে উঠতেই পেছনে থাকা ওই দুই বন্ধুর একজন অর্থাৎ ধনী বন্ধুটি বাজি ধরে বসলো। ধনী বন্ধুটি তার সাথে থাকা অপর বন্ধুকে বললো- যদি তুই ওই টাকু মিয়ার মাথায় একটা সজোরে থাপ্পর মারতে পারিস তাহলে ১০ হাজার টাকা দেব।

বলতে দেরী অপর বন্ধুর থাপ্পর চালাতে দেরী হলো না। থাপ্পর মেরেই সে বলে উঠলো ওরে বজলু তুই! তোর বউ কেমন আছে? ছেলেটার শরীর ভালো তো? এখন কোথায় থাকিস? কি করিস! এভাবে একনাগাড়ে প্রশ্ন করে চললো। 

টেকো মাথায় থাপ্পর খেয়ে তো হাসমতের মেজাজ খারাপ। সে চিৎকার করে বলে উঠলো- আরে মিয়া কে বজলু? আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি? জানা নাই শোনা নাই মাথায় থাপ্পর মারলেন!

থাপ্পর যে মেরেছে এবার সে খুব ভদ্রভাবে বলে উঠলো- আহা! দুঃখিত ভাই। আমার ছোটবেলার বন্ধু বজলুকে ভেবে আপনাকে মেরে বসেছি। ছিঃ ছিঃ এটা একদমই ঠিক হয়নি। আমাকে মাফ করবেন ভাই।

যাত্রাপালার বিরতি। বিরতির সময়ে ওই দুই বন্ধুর মধ্যে ধনী বন্ধু আবারও চ্যালেঞ্জ দিয়ে বসলো। এবার সে বললো যদি এবার থাপ্পর মারতে পারিস তাহলে ৩০ হাজার দেব। বলতে দেরী মাথায় থাপ্পর চালাতে দেরী হলো না অপর বন্ধুর। থাপ্পর মেরেই সে চিৎকার করে বলে উঠলো হায়রে বজলু তুই এত চালাক হয়েছিস! তুই আমার সাথে এরকম মশকরা করতে পারলি! আমি তো প্রথমে ভেবেছিলাম অন্য কেউ। কেমন আছিস? তোর বউ কেমন আছে? ছেলেটার শরীর ভালো তো? 

এবার আর হাসমত নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। সে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে তেড়ে আসলো। বাজখাই গলায় চিৎকার করে বললো - আরে মিয়া আপনি কি শুরু করছেন? আমি কিন্তু আপনার খবর করে ছাড়বো বলে দিলাম। বারবার আপনি মশকরা করছেন আমার সাথে। আপনার চৌদ্দগোষ্ঠী.....

খুব নরম হয়ে থাপ্পর মারা ব্যক্তিটি বললো- ভাই আসলে দোষ আপনার আমার কারোই না। আল্লাহ আপনাকে আর আমার বন্ধু বজলুকে একদম একই চেহারায় বানিয়েছেন। আমাদের কি করার আছে বলুন! আমার খুব কাছের বন্ধু বজলু। অনেকদিন পর দেখে নিজেকে সামলাতে পারিনি। বিশ্বাসই হতে চাচ্ছিল না যে, আপনি বজলু নন!

যাত্রা শেষ। সবাই বের হচ্ছে। ওই দুই বন্ধুও বের হচ্ছে। এমন সময় তারা খেয়াল করলো তাদের সামনেই হেঁটে বের হচ্ছে সেই টাকমাথার লোকটা। এবার ধনী লোকটা আর নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারে না। এবার সে বাজি হেঁকে বসলো ৫০ হাজার। দাম হাঁকতে দেরী। অপর বন্ধুর থাপ্পর চালাতে দেরী হয়না এবারও। টাকে সজোরে থাপ্পর মেরেই এবার সে বলে উঠলো ওরে বজলু- তোকে মনে করে আজ অন্য একটা লোককে দুই দুইবার থাপ্পর মেরেছি...

বাংলাদেশের জনগণের অবস্থা হয়েছে হাসমত আলী থেকে কল্পিত বজলুতে পরিণত হওয়া লোকটির মত। নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য যে যখন খুশি এ দেশের মানুষের চুলহীন মাথায় সজোরে থাপ্পর হাঁকাচ্ছে। আর আমরা জনগণ মেজাজের চরম পর্যায়ে গিয়ে দাঁত মুখ খিঁচে মরছি। এদেশের মানুষকে পুজি করে যে যখন যা খুশি তাই করে যাচ্ছে। কিন্তু জনগণ সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে হাসমত আলীর মতই কার্যত: কিছুই করতে পারছে না।

পঠিত : ১৪০৩ বার

মন্তব্য: ০