Alapon

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ইনসাফ কায়েম ও জাতি গঠনের

[কৈফিয়তঃ মেলা দিন আগে একবার একটি সাময়িকীর স্বত্বাধিকারী এক ভাই কইলো, ভাই এবারের ম্যাগাজিনের সম্পাদকীয় আপ্নেরে লেইখ্যা দিতে অইবো।  আর হ্যাঁ যেহেতু বিজয়ের মাস সেহেতু  দেশপ্রেম আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার তেলে ভাজা হলে ভালো হয়।  বিনয়ের সুরে কইলাম, ভাই আমি আনাড়িরে কি রুখসত দেওন যায়না? আর তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধ দেশপ্রেম টেম নিয়ে  আমার চিন্তা-দর্শন তো সমাজের অন্য দশজনের থেকে আলাদা এবং প্রায় বিপরীত।  কিন্তু এতসব অজুহাতে কাম না হওয়ায় বাধ্য হয়েই ইহা উগলিয়ে দিলাম।  তৈলে বাজলাম ঠিকই কিন্তু পরক্ষণে জানিতে পারিলাম ইহাতে ব্যবহৃত তৈলখানা ছিল কেরোসিনের] 

বাঙ্গালি  জাতি এমন এক কঠিন তরীর নাম যে হাজার বছর ধরে কাল সমুদ্রের বুক  চিরে ছুটে চলছে নিরন্তর।  সাম্রাজ্যবাদীদের আগ্রাসন নামক ঝড় হাওয়া , দখলদারদের দখল নামক টর্নেডো- সাইক্লোন কিংবা আঁচড়ে পড়া সর্বগ্রাসী ঢেউয়ের পাহাড় পারেনি গ্রাস বাঙ্গালি  জাতির নামক এই তরীকে।  আমাদের রয়েছে জালিমের জুলুমাতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে মুক্ত ও সম্মানজনক জীবনযাপনের অধিকারের জন্য বহু শতাব্দী ধরে সংগ্রাম চালিয়ে আসার গৌরবােজ্জ্বল ইতিহাস । আমাদের চিত্তের দৃঢ়তা ও বাহুবলের সুখ্যাতি ইতিহাস সেই সুপ্রাচীন কাল থেকেই।

আমরা মানুষের মানবিক মূল্যবােধ এবং সমাজে সুবিচার কায়েমের প্রশ্নে কোন কালেই কোন জালিমের সাথে আপােষ করিনি, পরােয়া করিনি কারাে রক্তচক্ষু ।  সেই ব্রিটিশ বেনিয়াদের গােলামির জিঞ্জীর থেকে মুক্ত করতে সংগ্রাম করেছি প্রায় দুইশ বছর।  বায়ান্নতে মাতৃভাষা রক্ষায় জীবন কোরবান করেছি।  ১৯৭১ সালে শাসকরূপে আমাদের ঘাড়ে চেপেবসা পাকিস্তানি প্রভুদের শােষণ-নির্যাতন, নিষ্পেষণের যাঁতাকল থেকে মানবতাকে মুক্তি দিয়ে ন্যায়, ইনসাফ, সাম্যের লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মুক্তি ও আজাদি নামক বৃক্ষের গােড়ায় দীর্ঘ নয় মাস ধরে রক্ত তরল সিঞ্চন করে অর্জন লাল-সবুজের একটি পতাকা, পেয়েছি নতুন একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। 


কিন্তু দীর্ঘ সংগ্রাম আর রক্তের বিনিময়ে পাওয়া ছােট্ট মানচিত্রটি দুষ্ট শকুনের কালাে থাবায় মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শ ভুলুণ্ঠিত হয়ে আসছে সংগ্রামের ঠিক পর থেকেই। লাঞ্ছিত হচ্ছে জাতির জাতীয় বীরেরা।  দেশের ভাবমূর্তির প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে অসংখ্যবার, দেশকে সারাদুনিয়ার কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে 'তলাবিহীন রুটির ঝুড়ি' হিসেবে।  গণতন্ত্র হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। বারংবার। তাই বলা যায়, যে জাতি তার আজাদির জন্য নিজের ইজ্জত, সন্ত্রম, জীবনসম্পদ সব অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছিলাে তাদের স্বপ্ন আজ অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বপ্নই রয়ে গেছে।


প্রায় একই সময়ে জন্ম নেয়া মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশ কোথায় আর আমরা কোথায় ।  যেই তিমিরে ছিলাম সেই তিমিরেই আছি ।  অথচ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা ছিল, গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, ইনসাফ, সুষমবণ্টন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গঠন, মূল্যবােধের মূল্যায়ন, সকল ধর্মের মানুষের সহবস্থান ও স্বকীয় পররাষ্ট্রনীতি। কিন্তু উপরােক্ত প্রায় সবই আজ রুগ্নবস্থায় বিছানায় কাতরাচ্ছে কিংবা অরণ্যে রােদন করে বেড়াচ্ছে।
তাই আজ তলা বিহীন ঝুড়িতে তলা লাগাতে এবং মুক্তিযােদ্ধাদের আজন্ম লালিত স্বপ্ন সুবিচার, ইনসাফ ও আর এই সমৃদ্ধির বাংলাদেশকে গড়তে এগিয়ে আসতে হবে তরুণদের ।  অন্যায় ও অসত্যের বিরুদ্ধে যুবকদেরকে আবারাে’৭১ এর ন্যায় আবার পুনরায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে।


বাঁশের ঝাড়ের ন্যায় পতিত জাতিকে, কাল বৈশাখীর প্রচণ্ড ঝড় তুলে আবারাে জাগিয়ে তুলতে চাই আরেকটি বিপ্লবী সিদ্ধান্ত ও কার্যকর পদক্ষেপ।

পঠিত : ২৩২০ বার

মন্তব্য: ০