Alapon

মহিলারা তাদের সৌন্দর্য কাদের দেখাবেন...?

- ভাবী কোথাও কি যাচ্ছেন? ভুল সময়ে এসে পরলাম?
- না, ভাবী! কোথাও তো যাচ্ছি না। কেন?
- না মানে ইয়ে! ঘরের ভিতর সাজুগুজু করে বসে আছেন তাই জিজ্ঞাসা করলাম।
- ও আচ্ছা। জি ভাবী। আমি প্রতিদিনই এরকম করে সেজে থাকি আমার স্বামী কাজ থেকে ফেরার আগে। 
- আপনি তো পর্দা করে বের হোন। কই কখনও তো বাইরে এভাবে বের হন না?
- জি। আমার সৌন্দর্য শুধু আমার স্বামীরই দেখার অধিকার আছে। আর কারও নয়। বাইরের কোনো পুরুষ মাহরাম ছাড়া আর কাউকে ইসলাম পারমিশন দেয় নি মেয়েদের সৌন্দর্য দেখার। তাই আমি আমার স্বামীর জন্যই সাজুগুজু করে থাকি। উনি অনেক খুশি হন। 
- ও আচ্ছা।
- ভাবী! কি যেন বলবেন আমাকে? কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
- বাসায় কাচা মরিচ নেই তাই এসেছিলাম আপনার কাছে। এই মুহূর্তে তো বাজারেও যেতে পারছি না আর আপনার ভাইয়েরও আসার সময় হয় নি। তাই আসা। 
- আমি এক্ষুনি দিচ্ছি। 

আচ্ছা মহিলারা তাদের সৌন্দর্য কাদের দেখাবে? বাইরের মানুষদের? গায়ের মাহরাম দের? বর্তমান যুগে এমনটি হয়েছে যে, মহিলারা ঘরে স্বামীর সামনে বিধবার সাজে থাকে, আর বাহিরে যায় এমন ভাবে যেন তাদের দেখে চোখ ফিরানো দায়। স্বামীজি ঘরের বউকে দেখে বলে, কই আমার বউয়ের তো কোনো সৌন্দর্যই নেই। স্বামীর চোখ পরে বাহিরের সাজুগুজুওয়ালী মেয়েদের উপর। এরপর কি? যা হওয়ার তাই হয়। স্ত্রীকে মনে হয় সাদাকালোর দুনিয়া আর ওদেরকে মনে হয় চাকচিক্যময় দুনিয়া । চোখের জিনা, মনের জিনা তো আছেই। 

মেয়েরা আজ তাদের সৌন্দর্য বাহিরের লোকদের দেখাতেই ব্যস্ত। তাদের কিভাবে নিজের দিকে দৃষ্টি ফেরাবে তাই মনে হয় তাদের উদ্দেশ্য। আমার সৌন্দর্য দেখে মানুষ ভূয়সী প্রসংশা করবে এটাই মূল টার্গেট করে নিজের সর্বচ্চ সৌন্দর্য প্রকাশ করতে নিজের সবটুকু উজার করে দেয়। টাইট ফিটিং জামা, চুল ছেরে, মুখে কয়েক স্তরের মেক আপ লাগিয়ে, গায়ে সুগন্ধি মেখে বাইরের পরপুরুষকে অাকর্ষণ করাই তাদের ব্যস্ততা। 

আপনাকে যদি বলা হয় কেন আপনি বাহিরে এত সাজুগুজু করে বের হন? উত্তরে আপনি কি বলবেন? কাদের আপনি আপনার সৌন্দর্য দেখাতে বের হন? আপনার স্বামী ছাড়া তো এরকম সৌন্দর্য দেখার আর কারও অধিকার নেই। তবে কি বলবেন- আমি আমার ইচ্ছা মত চলব পুরুষরা তাদের দৃষ্টি নিচে রাখবে। তবে শুনুন কেন মেয়ের পর্দার আড়ালে থাকতে বলেছেন স্বয়ং আল্লাহ-

" মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গ এর হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা রয়েছে। নিশ্চয় তারা যা করে, আল্লাহ তা অবহিত আছেন। আর ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গ এর হিফাজত করে। তারা যেন সাধারনত যা প্রকাশ্যমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের ওড়না বক্ষদেশে দিয়ে রাখে এবং তারা যেন স্বামী, পিতা, শশুড়, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতৃষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক, অধিকারভুক্তবাদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ লোক ও বালক যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পকে অজ্ঞ তাদের ব্যতিত কারও কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের গোপন সাজ সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণ না করে। ( সুরা নুর: ৩০-৩১)

পুরুষদের বলা হয়েছে তাদের দৃষ্টি নত রাখতে এবং যৌনাঙ্গের হেফাজত করতে। আপনাকেও কি বলা হয়নি আপনারও দৃষ্টি নত রাখতে এবং আপনারও যৌনাঙ্গ হেফাজতে রাখতে? আপনাকে বলেই দেওয়া হয়েছে আপনার সৌন্দর্য আপনি কাকে কাকে দেখাতে পারবেন। তার পরও যদি কোনো মুমিন পুরুষদের চোখের সামনে পরেন তাহলে সেই মুমিন পুরুষ আপনার দিকে একটিবার তাকানোর সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নেবেন এবং আল্লাহ চাইলে একটি বার দেখার গোনাহ মাফও করতে পারেন। কিন্তু যারা অসুস্থ? তারা আপনার সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত হবে সাথে সাথে জিনার পাপ টাও আপনি সহ অংশীদার হবেন। 

আপনি ঘরে স্বামীর সামনে এমনভাবে থাকেন যে, স্বামীজি আপনার মাঝে কোনো সৌন্দর্যই খুজে পায় না, বা তার আপনার প্রতি আগ্রহও আসে না। ( এখানে সৌন্দর্য বলতে ফর্সা বা সুন্দর মুখের কথা বলা হচ্ছে না, পরিপাটি এবং আল্লাহর যেরকম বানিয়েছেন তার যত্নের কথা বলা হচ্ছে)। কিন্তু সেই আপনি যখন বাইরে বের হচ্ছেন ঠিক তখনি পর্দা লংঘন করে বেপর্দায় সর্বোচচ সৌন্দর্য প্রকাশ করে বের হচ্ছে। আপনি কি আপনার স্বামীর হক নষ্ট করছেন না? যা আপনার স্বামীর একান্ত হক ছিল তা আপনি পরপুরুষদের বিলিয়ে দিচ্ছেন। 

আল্লাহ তা'য়ালা ইরশাদ করেন- হে নারী গন! তোমরা তোমাদের ঘরের ভিতর অবস্থান কর এবং বাহিরে বের হয়োনা - যেমন ইসলামপূর্ব জাহিলি যুগের মেয়েরা বের হত। ( সুরা আহযাব: ৪৩)

ভেবে দেখুন তো! কিভাবে আপনাকে থাকতে বলা হয়ে আর কিভাবে আপনি চলছেন? এটা ভেবেন না যে তাহলে ইসলাম কি মেয়েদের ঘর থেকে কি ওকদমই বের হতে দেয় না? তাহলে আসুন আল্লাহ কি বলেন-

হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগনকে ও কন্যাগনকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগনকে বলুন! যখন কোনো প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হয়, তখন যেন তারা তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। ( যেন পর্দার ফরজ লংঘন না করে। এমনকি চেহারাও যেন খোলা না রাখে। তারা যেন বড় চাদরের ঘোমটা দ্বারা নিজেদের চেহারাকে অাবৃত করে রাখে)। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু ( সুরা আহযাব : ৬০)

প্রয়োজনে আপনি বাইরেও বের হতে পারবেন। কিন্তু কিভাবে বের হবেন তা আল্লাহ বলে দিয়েছেন। পর্দা মেনে বের হবেন। আর আপনার স্বামীর জন্য যেটা একমাত্র নির্ধারিত তার হেফাজত করুন। আল্লাহ আপনাকে আপনার স্বামীর জন্য সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তারই অধিকার আছে আপনার সৌন্দর্য দেখার। আপনার মাঝেই আপনার স্বামী শান্তি খুজে পাবে অন্য পরপুরুষ শুধু আপনার সৌন্দর্য দেখে খুবলে খাবে আর। নিজের স্বামীর থেকে কি পরপুরুষ আপনার কাছে দামী হল? আপনি শুধুই আপনার স্বামীর জন্য। আর কারও নন। আপনার স্বামীইই আপনার মাঝে শান্তি খুজে পাবে যদি আপনি আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলেন।

"তার নির্দেশনাবলীর মধ্য আর এক নিদর্শন : তিনি তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের সঙ্গীনীদের সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমনা ওদের নিকট শান্তি পাও এবং তিনি তোমাদের মধ্য ভালবাসা ও সহানুভূতি সৃষ্টি করেছেন; নিশ্চয় চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে নিদর্শন আছে। ( সুরা আর- রুম: ৩০:২১)"।

লিখেছেন: সানজিদা

পঠিত : ২৮০১ বার

মন্তব্য: ০