Alapon

হায় শৈশব! যদি তোমাকে ফিরে পাওয়া যেত।

মাঝরাত পেরিয়ে যাচ্ছে। তারপরও ঘুমের দেখা নেই। চোখ বন্ধ করলেই ঘুরেফিরে সেই হারানো দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়। মন চায় আহা যদি সেই দিনগুলো ফিরে পাওয়া যেত। যদি সেই মুহুর্তগুলো ফিরে পাওয়া যেত।


ছোটবেলাটা কেটেছে কিছুটা বিরক্তি নিয়েই। আমার বন্ধু বলতে তেমন কেউ ছিল না। আমার সমবয়সীদের সঙ্গে খেলতে পারতাম না। খেলা বলতে ঐ ক্রিকেট ছাড়া আমি আর কিছুই পারতাম না। কিন্তু বন্ধুগোছের কিংবা সমবয়সীরা আমাকে তাদের সঙ্গে খেলায় নিতো না। আর নিলেও অসম নীতিতে আমার সঙ্গে তারা খেলতো। এরপর বাধ্য হয়েই ঐ ছোট বয়সে বড়ভাইদের সঙ্গে খেলা শুরু করলাম। তারা আমার চেয়ে ৫-৬ বছরের বড় আবার হাইটের দিক থেকেও বড়। তাদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে কতবার যে আঘাত পেয়েছি তার কোন ইয়াত্তা নেই। তারপরও তাদের সঙ্গেই খেলেছি। একসময় তাদের দলের আমি দ্বাদশ খেলোয়াড় হবার সুযোগ লাভ করলাম। মাঝে মাঝে কেউ খেলতে না পারলে একাদশতম খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামতাম। ফিল্ডিং করতে পারলেও কখনো ব্যাটিং করতে পারতাম না। এরপর কেটে গেল অনেক সময়। এই সময়ের মাঝে দলে আমার অবস্থান দ্বাদশ খেলোয়াড় থেকে ষ্ট্রাইক খেলোয়াড় পর্যায়ে চলে আসলাম। সেই সাথে আমি হয়ে গেলাম দলের ওপেনিং ব্যাটসম্যান। ভাবতেও অবাক লাগে, আমি যেদিন খেলতে চাইতাম না টিম ম্যানেজমেন্টও সেইদিন খেলা নিতো না। ম্যানেজমেন্ট বলত, তুমি না খেললে আমরাও দল মাঠে নামাবো না। এসবই আমার কাছে কেমন স্বপ্নের মত লাগত।


খুব জেদি মানুষ ছিলাম। আর হয়তো প্রচন্ড বদমেজাজি। আউট হলেই মেজাজটা প্রচন্ড খারাপ হয়ে যেত। নিজের ব্যাটটা দিয়ে কতবার যে নিজের পায়ে আঘাত করেছি তার সঠিক সংখ্যা আমার জানা নেই। নিজেই আঘাত করে দিন শেষে খুুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বাড়ি ফিরতাম। খেলতে না পারলে আমার ব্যাট ভাঙ্গারও খুব খারাপ ধরনের রেকর্ড রয়েছে। একসময় দলের ক্যাপ্টেনসির দায়িত্ব পেলাম। ক্যাপ্টেনসি করতে গিয়ে মেজাজটা আরো খিটমিটে হয়ে গেল। বোলাররা বাজে বল করলে কিংবা ফিল্ডাররা ক্যাচ মিস করলেই রেগে যেতাম। আমরা যখন ঘরোয়া ভাবে খেলতাম তখন নিজেদের খেলোয়াড়ের মধ্য থেকে আম্পায়ার রাখতাম। সেই আম্পায়ারও আউট হলে সহজে আউট দিতে চাইতো। 


একসময় মনে হল, এসব বেকার। সবার উপর রাগ হওয়া কটু কথা বলা বন্ধ করে দিলাম। কিপিংও ছেড়ে দিয়ে লং অফ এ ফিল্ডিং করতে শুরু করলাম। নিজের মত চুপচাপ হতে থাকলাম। আউট হলে নিজেই বেরিয় আসতাম। যদিও অনেকসময় আম্পায়ার নট আউট দিতো। কিন্তু নিজের বিবেকে বাধতো বিধায় বেরিয়ে আসতাম। তারপর একসময় মাঠেও অনিয়মিত হতে শুরু করলাম। গেম গুলো মিস করতে শুরু করলাম। এরপর একবছর পুরো একবছর মাঠে যাই নি। কত্তো টুর্নামেন্ট হল ডাক পেলাম কিন্তু যাওয়ার ইচ্ছেটাই হল না।


এরপর একদিন আবারো খেলতে গেলাম। ততোদিনে আমার ছোটভাই আমার জায়গাটি দখল করে নিয়েছে। সেই এখন ওপেনিং ব্যাটসম্যান কাম মিডিয়াম ফাষ্ট বলার। ওর সঙ্গে ওপেনিং এ ব্যাট করতে নামলাম। ওর ব্যাটিং দেখে আমি নিজেই থ হয়ে গেলাম। সে যাষ্ট ফ্লিক করেই লেগ সাইডে বিশাল ছক্কা হাকায়। আর আমি লেগ সাইটে খুবই দুর্বল। আমার ফেবারেট শর্ট ছিল কাভার ড্রাইভ। আর অফ সাইডে খেলতেই বেশি পছন্দ করতাম। আমার যখন ব্যক্তিগত ৩০ রান তখন আমার ছোট ভাই ৭০ রানে পৌছে গেছে। এরপর লং অফ ক্যাচ দিয়ে দাঁত ক্যালাতে ক্যালাতে আউট হয়ে আসলাম। খেলা শেষে ছোটভাইকে বললাম,‘আমি আর আগের মতো পারি না কেন?’ ্ও তখন বলেছিল, ‘আউট হলে তোমার কি আগের মত মেজাজ খারাপ হয়? আগের মত ব্যাট ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে হয়? আগের মত পায়ে আঘাত করতে ইচ্ছে হয়?’ আমার জবাব ছিল ‘কোনটাই না’। তখন সে বলেছিল, একারণেই তুমি আর পারো না। তোমার আর ভালো খেলার জন্য জেদ কাজ করে না বিধায় আর আগের মতো খেলতে পারো না। তাই হবে হয়তো।


সেই দিনগুলোর কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম বুঝতেই পারলাম না। মনীষীরা বলে থাকেন, ‘যে দিনটি চলে যায় মানুষ সেই দিনটির জন্যই একদিন আফসোস করে। এটাই নাকি মানুষের স্বভাব।’ সেই স্বভাবের মধ্যে হয়তো আজ আমিও ঘুরপাক খাচ্ছি। হায় শৈশব! যদি তোমাকে ফিরে পাওয়া যেত।

পঠিত : ৮২২ বার

মন্তব্য: ০