Alapon

আর্টিজানের ক্যাফে বনাম সোয়াত, চিতা আর কোবরারা।

সময়-মত গুয়ানয়মান প্লাজাই পোছাতে না পারলে চাকরীর ইন্টারভিউটা মিস হয়ে যাবে।লাক্সজারী ভালো বেতনের জব সবখানেই কমপেটিটিভ। জব সোনার হরিনী হলেও কোরিয়াতে পসকো কোম্পানি এবার ফরেইনারদের জন্য লুক্রেটিভ জব অফার করেছে। ঘন্টা দুয়েক এর পথ আমার থেকে গুয়ানয়মানের।ময়লাযুক্ত কাপড় পরেই ভাইবা ফেস করতে হবে ভেবে অসুস্থ মনের বিশ্রি যন্ত্রনা নাড়া দিচ্ছিলো। করবো-ই-বা কি! ইদানিং লাইব্রেরী আর ল্যাবে হাতুড়িভাংগা খাটাখাটুনী করতে হয়। কাপড় কাচাকুচি করার সময় পেয়ে উঠা হয় না। উড়ালচন্ডির মন নিয়ে সিউলের গন্তব্যে রেড এক্সপ্রেস কোম্পানির গ্রীন কোডের বাসে উঠে রৌওয়ানা হলাম।


আমার সিটটা জানালার পাশেই ছিল। সাথে তেমন কিছুই ছিল না। স্যামসাং ব্র্যান্ডের মোবাইল আর পিঠে ব্লাক ক্যানভাস ম্যাসেঞ্জার ব্যাগ।কানে হেডফোন লাগিয়ে পুরান দিনের চিনা সুরের সংগীতের কথার মাঝে কিছু অমলীন স্মৃতি খুজার ব্যর্থ চেস্টা। এরই মাঝে হঠাৎ মাঝ পথের গাড়ি চলন্ত সময়কেই যেন থামিয়ে দিচ্ছিলো।
ক্ষনিকের মধ্যেই সব উলোট পালট হয়ে গেলো। হাংগুল এন্টি-টেরোরিজম স্কোয়াড পুলিশ টিম সদস্যরা গাড়িটিকে ঘিরে ফেললো, মৌমাছির মত সাংবাদিক সমাজ হুড়মুড়ি খেয়ে পড়ল। গাড়ি ঘিরে পিটপাট করে ক্যামেরার মহড়া দিয়ে পরিবেশ কে আরো সাংঘাতিক রকম অশান্ত করে তুলল। পাশের যাত্রীদের ফিসফাস শব্দে বুঝতে অসুবিধে হচ্ছিল না-যে গাড়ির মধ্যে নিশ্চয় বড়সড় গর্জিয়াস জংগী আবির্ভাব ঘটেছে।


আনুমানিক দুপুর গড়িয়েছে হয়ত। ভাইবা দিবো এমন চিন্তা তখন ধ্বংসের দরিয়াই ঝাপ দিচ্ছিলো, মস্তিস্কও তখন ব্লাড প্রেসারের সাথে পাল্লা দিয়ে বিপদ সংকেত জানাচ্ছিলো। ভাগ্যে রাহুর শনী গ্রহ লেগেই আছে কিছুদিন যাবদ, নইলে মোবাইলের আযানের এলার্নটাও তখনই বা বাজবে -ইবা- কেন। আল্লাহ আকবর ধ্বনির রিংটোন বেজে উঠার সাথে সাথে বিষাক্ত আক্রমনযুক্ত নির্দয় তীর আমার দিকেই অবতীর্ন হতে লাগলো।রীতিমত আমাকে গোটা শ-খানেক পুলিশ ঘিরে আধুনিক নব্য আবিষ্কৃত ব্যাগ্র সমরাস্ত্রের নিশান বন্দি করে ফেললো, হয়ত আত্তঘাতী হামলা করার প্লান আছে -ভাবলো ওরা আমার ব্যাপারে।


আমার আইডি কার্ড আগেই হাতিয়ে নিয়েছিল। আমার নাম দেখে রীতিমত হচ-কচিয়ে উঠলো। বিশ্বাস আরো গভিরতর হলো- নিশ্চয় এ বড় সড় জংগী হবে। কি করব বুঝতেছিলাম না।হয়ত বড়জোর কান্না করতে পারব। কান্না সব মানুষের একই রকমের হয়। ভাষা জানবারো ও দরকার পড়ে না। তবে চোখের পানি শুকিয়ে রীতিমত তিস্তা হয়ে গেছে অনেক আগেই। হার্পিস রোগীর মত কাপতেছিলাম। হঠাৎ পিছন থেকে একজন নিষ্ঠরভাবে আঘাত করলো, সাথে সাথে ধরফর করে ঘুম ভেঙ্গে গেল । ঠাণ্ডার দিনেও ঘেমে গোসল হয়ে গেছে রীতিমত। বিছানা থেকে উঠে টেবিলের উপর বসে এসিটা অন করলাম। হো হো করে এসির ঠান্ডা বাতাস বের হচ্ছে।


টি শার্ট টা খুলে দিয়ে শরীর ঠান্ডা করার চেষ্টা করছি। সকালও হয়ে গেছে দেখছি। স্বপ্নের মতই বাস্তবে কোন ফাহিমকে হয়ত জংগীর ভয়ংকর দিন বরন করতে হয়। জংগী-জংগী নাটকে তাকে অনিচ্ছুক মন নিয়ে অভিনয় করতে হয় দাগি ভিলেন হিসেবে। নাটকের সমাপ্তি হয় তার আত্তাবলিদানের মধ্য দিয়ে। ইতিহাস স্থানান্তর হয় হলি আর্টিজানের ক্যাফেতে যেখানে চির অমর থাকে সোয়াত, চিতা আর কোবরারা।

পঠিত : ৭৯২ বার

মন্তব্য: ০