Alapon

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির দালালি কর্মসুচি

 


কাজের মধ্যে নিকৃষ্ট কাজ হলো দালালি। সেরকমই ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি একটা দালালি সংগঠন। মিথ্যার একটা শেষ আর শুরু আছে। কিন্তু এদের কাছে মিথ্যার কোন শেষ নাই। বামপন্থি নামে এরা পরিচিত। বামতো বামই এরা কখনও ডান হতে পারবে না। বাম হাতকে মানুষ তো ডান হাতের চেয়ে খারাপ হিসাবেই জানে। আমার কষ্ট লাগে তখন, যখন এদের লেখা পাঠ্য পুস্তকে থাকে আর সেখান থেকে নৈতিকতা সম্পান্ন মানুষ খোজতে বলে।


আজ পত্রিকায় দেখলাম যে, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবার হাতে নিয়েছে ব্যতিক্রমী এক কর্মসূচী। ‘৩০ লাখ শহীদের স্মরণে ৩০ লাখ বৃক্ষ রোপণ’ করবে। রিপোর্টেতে বলা হয়েছে যে-


“বিশ্বে তাপ ও উষ্ণতা বাড়ছে। এতে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। ৪০ বছরের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ মানুষের গৃহহীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে একমাত্র প্রতিষেধক বেশি করে গাছ লাগানো। বাংলাদেশের আয়তনের ২৬ ভাগ বনভূমি প্রয়োজন। কিন্তু আছে ১১ ভাগেরও কম। ভারতে ২২ ভাগ, মিয়ানমারে ৪৮ ভাগ এবং ভুটানে ৬৯ ভাগ বনভূমি রয়েছে। বাংলাদেশের বনভূমির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এ প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেই ৩০ লাখ শহীদের স্মরণে ৩০ লাখ গাছ রোপণের কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। গাছগুলো হবে শহীদদের নামে। মানুষ এর রক্ষণাবেক্ষণে যত্নবান হবে। যার জমিতে গাছ রোপিত হবে তিনিই হবেন সে গাছের মালিক। তবে শর্ত থাকবে যে, ২০-৩০ বছরের আগে এগুলো কাটা যাবে না”।


১। বিশ্বে তাপ ও উষ্ণতা বাড়ছে। এতে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। ভালো কথা বুদ্ধিজীবি! সুন্দরবন যে শত শত গাছ ধবংস করে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে। সেই কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বাংলাদেশের বর্তমান গড় বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের তুলনায় ৬২% বেশী।


সাধারন মানুষকে পথে বসিয়ে প্রায় ৮০০ বিঘা জমি দখল করে ভারাট করেছে। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে এবং সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটোর বাপার জোন (পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা) থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। যা সুন্দরবনের পরিবেশ বিনষ্ট হবে।


আরও আছে, বছরে প্রায় অতিরিক্ত পাঁচশত কয়লাবাহী জাহাজ সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে চলাচল করবে। প্রতিনিয়ত সাধারণ শ্রমিকদের কয়লা উঠানো নামানোর জন্য মংলা বন্দর দিয়ে মাছ রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্থ হাওয়ার আশংকা রয়েছে।


২৪ ঘন্টা সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে জাহাজ চলাচলে নদীতে কয়লা, তেল-মবিল ও বর্জ্য পড়বে, হর্ণের শব্দ, রাতে সার্চ লাইটের আলো প্রাণীকুলের অভয় অরন্য নষ্ট করবে।


গত দু’বছরে অনেক গুলো জাহাজ (ক্লিংকার, তেল, সার ও কয়লা) ডুবেছে সুন্দরবন এলাকায়। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে কয়লাবাহী জাহাজ ডুবির ঘটনা বেড়ে যাওয়ার শংকা রয়েছে।


কয়লাবাহী জাহাজ ডুবলে কি ক্ষতি হবে তা সহজেই আমরা বুঝতে পারি। এই বুদ্ধিজীবিরা বুঝে না।


বাংলাদেশ তখন ঝুঁকির মধ্যে পরে না?
পরবে কেন?
তখন দালালি করলে খাবার বন্ধ হয়ে যাবে যে ।


দ্বিতীয় কথা হলো- তারা বলেছে “৩০ লাখ শহীদের স্মরণে ৩০ লাখ গাছ রোপণের কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। গাছগুলো হবে শহীদদের নামে” । 
শহীদদের তালিকার ব্যাপারে আমি কেমনে বলি ? এক আইনজীবি এই প্রশ্ন করে সে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করেন না উপাধি পেয়েছিলেন।


সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর আইনজীবী আহসানুল হক তদন্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলামকে প্রশ্ন করেছিলেন, “‘মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ যে শহীদ হলো, তার কোনো তালিকা আছে?’


এ প্রশ্নের জোরালো বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সুলতান মাহ্মুদ বলেন, ‘এটা কোন ধরনের প্রশ্ন ? 
উনি কীভাবে এ প্রশ্ন করেন?
উনি তো মনে হয় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করেন না।
এটা আদালত! 
ঠাট্টা-তামাশার জায়গা নয়”। সুত্রঃ প্রথম আলো


নাস্তিক এই বুদ্ধিজীবিরা আল্লাহকে দেখেনা বলে বিশ্বাস করে না কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ যে শহীদ হলো, তার কোনো তালিকা করা যাবে না কিন্তু জোড় করে বিশ্বাস করাবে (Double Stand) ।


শাহরিয়ার কবির বলেন, “শহীদদের স্মরণে দেশ ও দেশের বাইরে এ বৃক্ষরোপন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। এ নিয়ে বিভিন্ন দেশের সাথে আমাদের কথা হচ্ছে।”


আচ্ছা, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নামে বিভিন্ন দেশে কর্মসুচি দিয়েছে এ মাসে। কোন দেশে তো বৃক্ষরোপন কর্মসূচির ঘোষনা করেনি তাহলে কি অন্য দেশ কেন্দ্রিয় কমিটির কথা শুনে না?


আরে মশাই, ৩০ লাখ শহীদের স্মরণে, ৩০ লাখ গাছ রোপণের আগে, শহীদের ৩০ লাখের তালিকাটা করুন না ?
মিথ্যাকে সত্যে পরিনত করবেন না।


৩০ লাখ না ১০ লাখ শহীদের তালিকা করে গাছ লাগান। তা না পারলে ৫ লাখ তালিকা করেন। তাও না পারলে ৩ লাখ শহীদের তালিকা করে শহীদের নামে গাছ লাগান। আমরা সাধারন মানুষ ওয়াদা করছি যে এর রক্ষণাবেক্ষণ ও তার যত্ন নিবো।


আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি আপনারা তা পারবেন না।


তালিকা করা হয়ত অনেক কঠিন কাজ। কিন্তু বর্তমান উন্নত তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাবহার করে এটা করা একদম অসম্ভব হবে বলে মনে হয় না। যুদ্ধ পরবর্তী যে কোন আদমশুমারীর সাথে ট্যাগ করে গণনার মাধ্যমে এটা করা যেতো। এখনো বিশেষ আদমশুমারীর মাধ্যমে এটা করা সম্ভব।


প্রত্যেক বাড়িতে যেয়ে তথ্য সংগ্রহ করে তা নিকটজন (ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী, ভাই, বোন কিম্বা প্রতিবেশী/প্রত্যক্ষদর্শী) এর মাধ্যমে এটা সংগ্রহ করে তা ইঊনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/ কমিশনার দিয়ে ভেরিফিকেশন করা। তারপর তা ডিজিটালি সংরক্ষন করা যেতে পারে।


মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অধীনে শহীদদের ডাটাবেজ করে ওয়েব সাইটের মাধ্যমে সাধারন মানুষ তা দেখতে পারবে। নাম, পিতার নাম ও ঠিকানার সাথে কখন কিভাবে শহীদ হলেন সেটা রাখা , তার কবর কোথায় কিভাবে দেয়া হয়েছে সেটা থাকবে। এর সাথে সম্পর্কিত কোন বিশেষ ঘটনা থাকলে সেটাও থাকবে।


জেলা/থানা/ইউনিয়ন হিসাবে ফিল্টার করে দেখার সুযোগ করে রাখা। আর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন গবেষনার কাজে এটা ব্যাপকভাবে ব্যাবহার হবে।


নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা তাদের নাম জানতে পারবে এবং তাদের বিভিন্ন উদ্যোগের বাস্তবায়নে এটা সহায়ক ভুমিকা পালন করতে পারবে। কেয়ারটেকার সরকার যদি দুই বছরে ছবি সম্বলিত ভোটার তালিকা ও ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ব্যাবস্থা করতে পারে।


তাহলে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দাবী করা এই সরকার কেন মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের তালিকা তৈরী করতে পারবেনা ? এখনো উদ্যেগ নিলে এ সরকার তার মেয়াদেই এই কাজ সম্পন্ন করতে পারবে বলে আমরা আশা করতে পারি । শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিরোধীদের বিভিন্ন রকম সংশয় তৈরীর চেষ্টায়ও বন্ধ হবে।


আপনারা আগে শহীদের তালিকা তৈরি করুন এরপর শহীদের নামে গাছ লাগান। না হয় সাধারন মানুষ মনে করবে ৩০ লাখ বৃক্ষরোপনের কথা বলে নিজেরা টাঁকা লুট করে খাবেন।


মনে রাখবেন, এই দেশে একাত্তরের নির্মম দিনগুলি যারা দেখেছেন। তাঁরা কালক্রমে হয়ত থাকবেন না। কিন্তু যারা নির্মম ভাবে নিহত হয়ছেন তাদের রক্তের দাগ বাংলার মাটি থেকে মুছে যাবে না। এই নির্মমতা নিয়ে, শহিদের রক্ত নিয়ে যারা দালালি করে,বিদ্রুপ করে, মিথ্যা বলে তাদের অলঙ্কিত বক্তব্য নিয়ে তারাও যুক্ত হবেন ইতিহাসের কালো অধ্যায়ে।


আমরা এই জাতিয় বেঈমান ও ঘৃনিত ব্যক্তিদের ধিক্কার জানাই। আর তাদের মিথ্যা দালালি বন্ধের দাবী জানাই। 
এই ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রত্যেকের ইতিহাস দেখেন। এরা একাত্তরে দালালি করছে পাকিস্থানের, আর এখন করে ভারতের দালালি। এরা দালালিজীবি । দালালির কারনেই বেচে আছে আর দালালি করেই খায়। এদের সর্ব্বচ্চো যোগতা এটা।


যে বুদ্ধিজীবীরা এই দেশের তরুণ প্রজন্মকে দিকনির্দেশনা দিবেন তারাই যদি উল্টো তাদেরকে বিভ্রান্ত করতে শুরু করেন তাহলে আমার / আমাদের হতাশা অনুভব করা উচিত ছিলো। কিন্তু আমি বিন্দুমাত্র হতাশ নই।


তার কারণ, একদিকে আমি যে রকম বিভ্রান্ত খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবীদের দেখছি, ঠিক সে রকম অন্যদিক দিয়ে নূতন প্রজন্মের কিছু তরুণদের দেখছি যাদের ভেতর নিজের দেশ ও স্বাধীনতা নিয়ে কোনো বিভ্রান্তিতে পরে না।


মা-মাথা মাতৃভূমির জন্যে তাদের ভালোবাসায় কণামাত্র খাদ নেই। তারা তরুণ কিন্তু অন্য অনেক তরুণদের মতো তারা শুধু আবেগ পুঁজি করে কথা বলে না। তারা সত্যকে বের করে ।


তারা তাদের আগ্রহের বিষয় নিয়ে লেখাপড়া করে। ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করে। যারা মুক্তিযুদ্ধকে নিজের চোখে না দেখেও সেটাকে শুধু মস্তিষ্কে নয় হৃদয়েও ধারণ করে। আগামীর বাংলাদেশ তাদেরই হবে। আজ থেকে সে দিনের গননা শুরু করুন।

পঠিত : ৭০১৬৩ বার

মন্তব্য: ০