তারিখঃ ৫ মে, ২০১৯, ০৬:৩০
এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ranking দেখছিলাম। ওখানে ১ থেকে ৪০০ এশিয়ার শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের লিস্ট দেওয়া আছে। আবার search by country অপসনও আছে। তো আমি প্রথমেই বাংলাদেশ লিখতে চাইলাম। দেখি শূন্য। নেপাল লিখতে শুরু করার সময় Ne লেখা মাত্রই ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এসে গেছে। আবার শ্রীলংকার নাম লিখতে গিয়েও পেয়ে যাই ইউনিভার্সিটি অফ কলম্বোর নাম এসে যায়।
আর পাকিস্তান নাম লিখতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য হয়ে দেখি ওদের ৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ওই লিস্টে জায়গা করে নিয়েছে। আর ভারত লিখে লিস্ট দেখে একটু আশাহত হয়েছি। তাদের মোট ৪৯ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ওই লিস্টে জায়গা করে নিয়েছে কিন্তু আমি আশা করেছিলাম আরো বেশি। ওদের সবচেয়ে ভালো প্রতিষ্ঠান হলো ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সাইন্স যার অবস্থান হলো ২৯!”
ঢাকা, বুয়েট,জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ- কেউই নাই। আমরা আছি আমাদের ঘোরে। এফসিপিএস, এমডি, বিসিএস…… কিন্তু শিক্ষার মান যে তলানিতে, সেই হুশ নেই।
আমাদের কি লজ্জা সরম জীবনেও হবে না? এশিয়ার সেরা ৪১৭ টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আমাদের একটি প্রতিষ্ঠানের নামও নেই। যেখানে শ্রীলংকা ও নেপালের নাম আছে। আর পাকিস্তানেরতো আছে ৯টি। আমাদের অহমবোধে এইসব শুনে বা জেনে কেন আঘাত লাগে না? উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যার দিক থেকেতো আমরা নেপাল, শ্রীলংকা আর পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যাব। প্রথম কথা হলো আমরা কি এই অবস্থান থেকে উন্নতি করতে চাই কিনা? আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন এই লিস্টে নেই। কেমনে থাকবে? আমাদের শিক্ষক নিয়োগ ব্যবস্থা কেমন? সেই ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে যারা নিয়োগ পান তারা আবার সপ্তাহের অনেকটা সময় খেপ মারায় ব্যয় করেন।
এর মধ্যে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৭টি কলেজ, যাদের প্রত্যেকটির ছাত্র সংখ্যা ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যার থেকে হয় বেশি না হয় কাছাকাছি, তার নিজের করে নিয়েছে। কথায় আছে না "এমনি যায় না আবার তেনা পেঁচায়"! এর মাধ্যমে ওই একই সংখ্যক শিক্ষক এখন ওই কলেজ সামলাতে দৌড়ের উপরে থাকে। এখন এক কাজ করা যাক শুধু ডিইউ কেন? বাকি যেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে যেমন বুয়েট, জাহাঙ্গীরনগর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এদেরকেও ঢাকা ও আশপাশের কলেজগুলোর দায়িত্ব বন্টন করে দেওয়া হউক। তাহলেই শিক্ষার ২৪টা বাজিয়ে ষোলকলা পূর্ন হয়ে যাবে। তাছাড়া যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বস্তির চেয়েও অধম জীবন যাপন করে সেই বিশ্ববিদ্যালয় ranking-এ স্থান পাবে কিভাবে? যেই দেশের শিক্ষক গবেষকরা অসম্মানিত হন প্রতি পদে সেই দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন ranking-এ থাকবে?
আমরা কি ভালোর দিক আগাবো নাকি খারাপের দিকে পেছাব? মানে আমাদের চেতনা কখন জাগবে? না না আমি দলীয় চেতনার কথা বলছি না? ওটা আমাদের টনটনে সেটা আমরা সবাই জানি। আমি বলছি অহমবোধের চেতনা। এইটা এত ভোঁতা কেন? আমাদের আগে বুঝতে হবে শিক্ষকদের খেপ আর অন্য কাউকে উদ্ধারের কাজে লাগালে এরা গবেষণা না করার excuse পেয়ে যাবে। যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজের ভারই বইতে পারছিল না তাকে কোন কারণে তার উপর আরো বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হলো? সরকার কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে গাধা ভেবেছে যে যতই বোঝা দিক collapse না হওয়া পর্যন্ত বোঝা নিতে অস্বীকৃতি জানাবে না। গোটা বাংলাদেশকে উদ্ধারের দায় কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের? এর মাধ্যমে ৭টি কলেজের মান হয়ত সামান্য উন্নতি হবে কিন্তু সেই সামান্য অর্জন করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজের মানের যে ধস নামছে এটা কি কেউ ভেবে দেখছে? আসলে আমাদের শিক্ষকদের এইসব ভাবার সময়ও নাই। কত কাজ আমাদের? খেপ মারা, নিজ বিশবিদ্যালয়ের দায়িত্ব সাত কলেজের দায়িত্ব, টক্ শোতে যাওয়ার দায়িত্ব আরো কত কি? সময় কোথায় আমাদের ছাত্রছাত্রীদের মঙ্গলের কথা ভাবার? সময় কোথায় গবেষণার কথা ভাবার? Ranking কি আসমান থেকে নাজিল হবে? এটা অর্জনের জন্য গোল ঠিক করে সেই অনুযায়ী সুদপ্রসারী অ্যাকশন প্ল্যান অনুসারে কাজ করতে হবে।
এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ranking এর লিস্টের ১-১০ এর মধ্যে যারা আছে তাদের একনম্বরে চীন। এর আগের বছরে ছিল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুর। সেটা এবার দুই নম্বরে চলে গেছে। চীনের মোট ৭২টি প্রতিষ্ঠান এই লিস্টে স্থান পেয়েছে। Tsinghua University হলো এশিয়ার শ্রেষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর পিকিং ইউনিভার্সিটি হলো পঞ্চম। আর হংকং এর আছে ৬টি। এশিয়ার তৃতীয় শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হংকং-এ। হংকং-কে চীনের অংশ ধরলে চীনের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৮। ছোট দেশ তাইওয়ানের আছে মোট ৩২টি প্রতিষ্ঠান এই লিস্টে। আর ওদের শ্রেষ্ট প্রতিষ্ঠান National Taiwan University! যার অবস্থান ২৫ নম্বরে।
এই লিস্টের সাথে একটি দেশের সত্যিকারের উন্নয়ন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অর্থনীতির উন্নতি একটি ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার মত। এই প্রতিযোগিতায় বর্তমানে চীন অনেক এগিয়ে। অর্থনীতির সাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মানও একই সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। Actually এইদুটো একটির সাথে অন্যটি intertwined! কেউ একা আগাতে পারে না। আমরা কি এটা বুঝি? বুঝলে বিশ্ববিদ্যালয় তথা শিক্ষার মানের অধঃপতন সত্বেও এত উন্নয়ন উন্নয়ন করতাম না।
জাগো বাহে কুন্ঠে সবে! বলো এই উন্নয়ন উন্নয়ন নামক ঘুম পারানিয়া গান আর নয়। আমরা সত্যিকারের sustainable উন্নয়ন চাই যার মুলে রয়েছে শিক্ষায় উন্নয়ন। আর শিক্ষায় উন্নয়ন আসমান ফাইরা আসবে না। তার জন্য প্রয়োজন বিনিয়োগ।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে নেপালের বরাদ্দ ৩.৭%। বাংলাদেশের চেয়ে ১.৭% বেশি। পাকিস্তানের বরাদ্দও বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ২.৬ %। মালদ্বীপ শিক্ষা খাতে ব্যয় করে ৫.২%, ভারত ৩.৮%, শ্রীলঙ্কা ২.২%, ভিয়েতনাম ৫.৭%। দক্ষিণ এশিয়ায় শিক্ষা খাতে বাংলাদেশের বরাদ্দই সবচেয়ে কম। ২০১৬ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে বাজেট কমানো হয়েছে। উল্লেখ্য, জিডিপির অনুপাতে শিক্ষা খাতে বাংলাদেশের বাজেট বরাদ্দ ২%।
আমাদের সব কিছু(উন্নয়ন) শুধু কথায়-বক্তৃতায়।
পঠিত : ১৭৬১ বার
মন্তব্য: ০