Alapon

কালো টাকাধারীদের জন্য বাজেট বরাবরই আর্শীবাদ স্বরূপ!

কালো টাকা কাকে বলে?

ছোটবেলায় পত্রিকা পড়তে গিয়ে যখন ‘কালো টাকা’ বিষয়টা চোখে পড়ত, তখন বিরাট ভাবনায় পড়ে যেতাম। আব্বার ড্রয়ারে তো বেশ ভালোই টাকা দেখতাম। মাঝে মাঝে কিছুটা লাল রংয়ের ১০ টাকার নোটও দেখেছিলাম। কিন্তু কালো রংয়ের কোনো টাকা তো দেখিনি। যখন অনেক ভাবনা-চিন্তা করেও কোনো কুল-কিনারা খুঁজে পেলাম না, তখন নিজেই নিজেকে বোঝালাম, এটা সম্ভবত কোটি কোটি টাকা-পয়সার মালিকদের ব্যাপার! এগুলোতে আমাদের মত মধ্যবিত্তদের মাথা না ঘামানোই ভালো...

নিজেকে বুঝ দেওয়ার জন্য যে কথাগুলো বলেছিলাম তা যে একবারেই অমূলক ছিল না তা বড় হওয়ার পর বুঝলাম।

কালো টাকা বলা হয় সেসব টাকাকে, যে টাকার উৎস বৈধ নয় । অর্থাৎ ঘুষ, দূর্নীতি, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ইত্যাদির মাধ্যমে যে টাকা উপার্জিত হয় তাকে কালো টাকা বলে।

আবার বৈধ উপায়ে উপার্জিত টাকাও কালো টাকা হতে পারে। কেউ যদি বৈধ উপায়ে উপার্জন করার পরও সেই টাকা আয়কর বিবরণীতে উল্লেখ না করে, তবে সেই টাকা কালো টাকা হয়ে যাবে।

অবৈধ উপায়ে উপার্জন এবং আয়কর বিবরণীতে আয়কৃত টাকার উল্লেখ না করাটা বড় বড় কোটিপতিদেরই কর্ম।

আর এই কালো টাকাকে সাদা করার সুযোগ প্রতি বাজেটই থাকছে। এক জরিপে দেখা গেছে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আজ অবধি প্রায় ১৩৮০৮ হাজার কোটি কালো টাকা সাদা করা হয়েছে।

এই বাজেটেও কালো টাকা সাদা করার বিরাট সুযোগ রয়েছে। কেউ যদি কালো টাকা দিয়ে হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ করে, তবে তার কালো টাকা সাদা হয়ে যাবে। কেউ যদি কালো টাকা দিয়ে প্লট এবং ফ্ল্যাট ক্রয় করে, তবে তার কালো টাকাও সাদা হয়ে যাবে।

যতো সুযোগ সুবিধা এইসব চোর-বাটপার কালো টাকাধারীদের জন্যই। আর তাদের এইসব সুযোগ সুবিধার বাহার দেখে আমার একখানা গল্প মনে পড়ে গেল।

এক গ্রামে এক মাতব্বর ছিল। সেই মাতব্বরের ছিল একটাই ছেলে। ছেলেটা ছিল কিছুটা বাউন্ডুলে। সারাদিন টই টই করে ঘুরে বেড়াতো, পাশের বাড়ির জরিনার সাথে প্রেম করতো আর মাঝে মাঝে বাপের সুপারি বাগানের সুপারি চুরি করে বিক্রি করে দিতো।

তার বাউন্ডুলেপনা নিয়ে বাপের কোনোই আপত্তি ছিল না। আপত্তি ছিল একটা জায়গাতেই; চুরি করে সুপারি বিক্রি করা। তারা সুপারি চুরির মাত্রাটা যখন বেড়ে গেল, তখন একদিন মাতব্বর রাগ করে বললেন, ‘তুই যদি আর একবার সুপারি চুরি করিস, তাহলে কিন্তু পাশের বাড়ির জরিনার সাথেই তোর বিয়া দিয়া দিমু। এই কথা শুনে মাতব্বরের ছেলে বলল, আমি তো জরিনার জন্য স্নো, পাউডার, আলতা, শাড়ি, চুরি কেনার জন্যই চুরি করতাম!’

কালো টাকা সাদা করার ব্যাপারে, সরকার আর কালো টাকাধারীদের সম্পর্কটা অনেকটা মাতব্বর আর তার ছেলের মত হয়ে গেছে। সরকারের ভাবসাব বলছে, আপনারা যদি কালো টাকার পাহাড় গড়া বন্ধ না করেন, তবে কিন্তু এই টাকা বিনিয়োগ করার সুযোগ করে দিবো! আর তারাও নিশ্চয়ই বলছে, সুবিধামত বিনিয়োগ করার জন্যইতো এই কালো টাকার পাহাড়!

যতো সুযোগ সুবিধা সব চোর বাটপারদের জন্য! কালো টাকাধারীদের জন্য বাজেট বরাবরই আর্শীবাদ। আর সাদা টাকাধারীদের জন্য অভিশাপই বৈকি...

পঠিত : ১১১৯ বার

মন্তব্য: ০