Alapon

বাবা দিবসের ইতিহাস এবং কিছু কথা...

আজ বিশ্ব বাবা দিবস! সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে এই তথ্যটি জানতে পারলাম। যদিও আমার দিবস কেন্দ্রীক আগ্রহ নিতান্তই কম। তারপরও কোনো দিবস সামনে চলে আসলে সেই দিবসের ইতিহাস জানার প্রতি আমি বাড়তি আগ্রহ অনুভব করি। সেই আগ্রহ থেকে বাবা দিবসের ইতিহাস আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।

সভ্য পৃথিবীতে বহু আগে থেকেই মা দিবস পালন করা হলেও বাবা দিবস বলে কোনো দিবস ছিল না। বিংশ শতাব্দির শুরুর দিকে কতক মানুষ বাবা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। প্রথম অবস্থায় তাদের সেই দিবস কেন্দ্রিক সাধারণ মানুষের খুব একটা আগ্রহ দেখা যায়নি। তারপরও তারা থেমে যায়নি।

ধারণা করা হয় ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই আমেরিকার পশ্চিম ভার্জেনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় প্রথম বাবা দিবস পালন করা হয়। এছাড়াও বাবা দিবসের কথা আসলে সনোরা স্মার্ট ডড নামের এক আমেরিকান মহিলার কথা আলোচনায় চলে আসে। একদিন এই মহিলা গির্জায় যান এবং ফাদারের মুখে মায়ের মর্যাদা ও সম্মান নিয়ে বেশ ভালো ভালো কথা শুনতে পান। তখন সনোরা স্মার্ট ডড ভাবেন তাহলে বাবাদের নিয়েও তো কিছু করা যায়। সনোরা আবার তার বাবাকে ভীষণ ভালোবাসতেন। বাবার প্রতি ভালোবাসা থেকেই তিনি বাবা দিবস পালনের চিন্তা করেন। এরপর তিনি ১৯১০ সালের ১৯ জুন বেশ ঘটা করে বাবা দিবস পালন করেন। তিনি এই দিন বাবা দিবস পালন করলেও ভার্জিনিয়ার বাবা দিবস পালনের কিছুই জানতেন না।

প্রথমদিকে এই দিবস সাধারণ মানুষের মাঝে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারেনি। বরঞ্জ বেশ হাস্যরসের সৃষ্টি করে। এরপর ১৯১৩ সালে আমেরিকার সংসদে বাবা দিবসকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণার প্রস্তাব করা হয়। সেই সময় বিলটি পাশ না হলেও ১৯২৩ সালে আমেরিকার তৎকালীণ প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ বিলটিতে পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করেন। এরপর ১৯৬৬ সালে প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন বাবা দিবসকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। এর পর থেকে সারাবিশ্বে জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বাবা দিবস পালিত হতে থাকে। সেই ইতিহাসের টানে আজ বাংলাদেশেও বাবা দিবস পালিত হচ্ছে।

বাংলাদেশে মা দিবস বেশ ঘটা করে পালিত হলেও বাবা দিবস সেভাবে পালিত হয় না। তবে এই দিবস পালনের প্রবনতা ইদানিং কিছুটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

এই দিবসের যৌক্তিকতা আদৌ আছে কি?

ইউরোপে শিল্পবিপ্লবের পর সে দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার রাতারাতি পরিবর্তন ঘটে। পরিবার প্রথার মাঝে বিরাট পরিবর্তন আসে। সেই পরিবর্তনের প্রভাব আজও ইউরোপের দেশের সমাজব্যবস্থায় লক্ষ্য করা যায়। শিল্প বিপ্লবের সময় নারীরা কাজ করতে এবং উপার্জন করতে শুরু করে। কাজের প্রয়োজনে একান্নবর্তি পরিবারগুলো ভেঙ্গে ছোট ছোট পরিবার হতে থাকে। সে পরিবারে সন্তানদের জায়গা থাকলেও বুড়ো বাবা মায়েদের স্থান হয়নি।

ফলে এই বৃদ্ধ বাবা মায়েদের জন্য ইউরোপের বুকে রাতারাতি শতশত বৃদ্ধাশ্রম গড়ে ওঠতে থাকে। বিশ্বায়ান যতো এগিয়ে যাচ্ছে মানুষ তত ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। কথিত আছে, ব্যস্ততার কারণে ইউরোপের মানুষরা তাদের বাবা মায়েদের সাথে সাক্ষাৎ করারও সময় পেত না। আর সেকারণেই নাকি এমন কিছু বাবা দিবস, মা দিবস ও ভালোবাসা দিবস নামক দিবস রাখা হয়েছে যাতে করে তারা এই দিনটিকে সেইসকল মানুষদের সাথে কাটাতে পারেন।

উপরোক্ত কথার কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি না থাকলেও এ কথাগুলো বহুদিন ধরেই লোক মুখে এবং কথা সাহিত্যের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে।

বাবা, মা এমন সম্পদ যে সম্পদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন কখনো দিবস কেন্দ্রিক হওয়া সম্ভব নয়। আর এগুলো যদি দিবস নির্ভর হয়ে পড়ে তবে সমাজ কাঠামো ভেঙে পড়বে। যেমন করে ইউরোপের দেশগুলোতে ভেঙে পড়েছে। আর যে দেশের সমাজ কাঠামো ভেঙে পড়ে সে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানসিক বিকাশই হুমকির মুখে পড়ে যায়। এসকল দিবস পালনে বাধা নেই, কিন্তু ভালোবাসা যেন দিবস কেন্দ্রিক হয়ে না পড়ে!

পঠিত : ৭৮০ বার

মন্তব্য: ০