Alapon

নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশে সালাফী ইসলামের উজ্জ্বল সম্ভাবনা...

যে কোন ধর্ম, মতবাদ বা আদর্শের মতোই ইসলামের অনেক ভার্সন আছে। এদের মাঝে সালাফী ইসলাম হলো তরুণ তুর্কী ভার্সন। আমার ধারণা আগামী এক দশক বা এক যুগ সময়কাল বাংলাদেশে সালাফী ইসলাম তুমুল বিকশিত হবে। সুতরাং যারা দুধমধু খেয়ে আরামে আয়েশে থাকতে পছন্দ করেন তাদের জন্য সালাফী তাঁবুতে ঢুকে যাওয়াই হবে উত্তম কাজ।

এই ধারণাটি বাতাস থেকে পাওয়া কোন অনুমান না। বরং সালাফীদের বৈশিষ্ট্য এবং বিশ্বব্যাপী নানা দেশে তাদের পারফরম্যান্সের উপর ভিত্তি করে নিরাপদভাবেই এমন ধারণা করা যায়।

সাদাচোখে হয়তো মনে হতে পারে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের ধর্মীয় দালাল হিসেবে কওমীরা ভূমিকা রাখতেছে সুতরাং সালাফীরা ওখানে সুবিধা করতে পারবে না। কিন্তু তাতে আমি সন্দিহান।

কওমীরা বেশিরভাগ ঐতিহ্যগতভাবে আওয়ামী-সমর্থনকারী হলেও কওমী দর্শনের মূলে শাসকের সাথে অসহযোগিতার একটা চিন্তা সবসময় প্রোথিত আছে। আওয়ামী লীগ কূটবুদ্ধিতে দক্ষ হওয়াতে বাছাইকৃত মাথাদেরকে কিনে নিয়ে আপাতত কওমী জননী হয়ে গেছে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তারা এই সেবা যথার্থমাত্রায় পাবে কি না তা নিশ্চিত বলা যায় না। আজকে হেফাজতের নেতা মাওলানা বাবুনগরী মুরসির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। সুতরাং কওমীদের মাঝে একাধিক ধারার অস্তিত্ব পরিস্কারভাবে প্রমাণিত। তাদের মাঝে টানাপোড়ন আছে। কালাম বা যুক্তিবিদ্যার প্রচ্ছন্ন প্রভাবে এটা স্বাভাবিক। অন্যদিকে সালাফিরা আক্ষরিক অনুসরণবাদী, ইউমিফর্মড সোলজার্স। ডেভিয়েন্টসদের নিয়ে তাদের অনেক মাথাব্যথা।

তাই শাসকদেরকে চাটার ক্ষেত্রে সালাফীরা ঐক্যবদ্ধ এবং নিবেদিতপ্রাণ। তারা শুধু একটু সুযোগ চায়।

ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো, মিশরের সাথে আসলে বাংলাদেশের অনেক কিছুতে অনেক মিল আছে। আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু দীর্ঘদিন মিশরে ছিলো। মিশর নিয়ে তার দুইটা মূল্যবান থিওরি আছে। প্রথম থিওরিটা নারীবিষয়ক সুতরাং তা উল্লেখ করে আজকের গুরুগম্ভীর আলোচনার ছন্দপতন করা যাবে না। তার দ্বিতীয় থিওরি হলো, মিশরীরা হলো আরব-আফ্রিকা অঞ্চলের বাঙালি। অথবা আমরা হলাম উপমহাদেশের মাসরী। অর্থ্যাৎ বিভিন্ন জাতিগত ও সামষ্টিক বৈশিষ্টাবলী বিবেচনা করলে আমরা আমরা জাতভাই। আমরা মোবাঙালি তারা মোমিশরী।

মিশরে স্বৈরাচারী মোবারকের আমলে সবচেয়ে বিকশিত ধর্মীয় ধারা ছিলো সালাফিরা। তারা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মিডিয়া এবং টিভিতে সমানতালে তাদের ধর্মপ্রচার করে গেছে। আরববসন্তের শুরুর দিকে তারা চেটে যাচ্ছিলো কিন্তু পরে অবস্থা বেগতিক দেখে ভোল পাল্টায়। আবার সময় সুযোগ পাওয়া মাত্রই নতুন স্বৈরাচারীর দালালে পরিণত হয়। জাতভাইদের সাথে আমাদের ইতিহাস, কাজকর্ম, ঘটনাচক্রের মিল হওয়ারই কথা। যদিও হয়তো কোয়ালিটিতে ঊনিশ/নয় এরকম হেরফের হবে আর কি।

স্বৈরাচারের এধরণের ধর্মীয় দালালের খুবই প্রয়োজন আছে। বাংলাদেশের অতীতের অভিজ্ঞতা এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা বিবেচনা করলে পরিস্কার দেখা যায় এটা একটা উর্বর কর্মক্ষেত্র হবে বড় বড় জ্ঞানী আল্লামা, তাদের ছোট ছোট মিনিয়ন সোলজার এবং অনলাইন প্রপাগান্ডা বাহিনীর জন্য। আধুনিকতার সংকটে ভোগা শিক্ষিত মানুষদেরকে সারশুন্য জ্ঞান দিয়ে এপ্রোচ করার সালাফি সুবিধা তো আছেই। সর্বোপরি আছে ব্রেইনওয়াশড ফ্যানবয়েজ বেইজ, টেকনলজির ব্যবহার, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ফান্ডিং সহ নানা লজিস্টিকাল বিষয়ে সুবিধাজনক অবস্থা। এমতাবস্থায় বর্তমানের উপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশে কেন তাদের নিকট ভবিষ্যত জমজমাট হবে না তার কোন কারণ আমি আপাতত খুঁজে পাচ্ছি না।

লিখেছেন: আমান আব্দুহু

পঠিত : ৩২১৩ বার

মন্তব্য: ০