Alapon

বাঙালির মানবতার ‘মা’ বহু আগেই মরে গেছে...

বরগুনায় প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ আর এমন কি ঘটনা! বাংলাদেশে এমন ঘটনা প্রায়শ ঘটছে।

এই ঘটনার পোস্টমর্টেম নিয়ে আমি লিখতে বসিনি। আমি লিখতে বসেছি আমার এক পরিচিত ব্যক্তিকে নিয়ে। সে ফেসবুকে লিখেছে, ‘কোপাকুপির সময় আশেপাশে এতোগুলো মানুষ দাড়ায় ছিল, অথচ একটা মানুষও এগিয়ে আসল না! ধিক্কার! এই মানুষগুলারে ধিক্কার জানাই।’

তার এই স্ট্যাটাস দেখে আমি হাতে গুনে তিন মিনিট ধরে হেসেছি। সেই ব্যক্তি আর আমি একই কলেজে পড়তাম। একদিন কলেজে কী নিয়ে যেন ঝামেলা হয়েছিল, সেই ঘটনার কারণে সে পরবর্তি ৭ দিন আর কলেজে আসেনি। আজ সেই ব্যক্তি মানুষের মানবতা নিয়ে ধিক্কার জানায়। পরে সে বলেছিল, ‘মারামারি দেখলে আমার মাথা ঘুরায়। আর রক্ত দেখলে আমি দাঁতি লেগে পড়ে যাই!’ হা...হা...হা...

যে বাঙাল রক্ত দেখলে অজ্ঞান হয়ে যায়, সেই বাঙাল আজ সাধারণ জনতার মানবিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। 
বাস্তবতা বড়ই কঠিন রে ভাই। মন চাইলো আর মানবতাকে ধিক্কার জানিয়ে একখানা স্ট্যাটাস লিখলেন, দ্বায় মিটে গেল?

এই দেশে মানবতার মা সেদিনই মরে গেছে, যেদিন পল্টন ময়দানে প্রকাশ্য দিবালোকে আওয়ামীলীগের হায়েনারা লাশের উপর নৃত্য করেছিল; যেদিন বরগুনার মত কোনো মফস্বল শহরে নয়, খোদ রাজধানীতেই আওয়ামীলীগের গুন্ডারা দিনে দুপুরে সাপের মত পিটিয়ে জসিম ভাইকে হত্যা করেছিল। সেদিন আপনি কোনো প্রতিবাদ করেননি। সেদিন আপনার মানবতা কোথায় ছিল?

আপনি বলবেন, সেগুলোতো রাজনৈতিক হত্যাকান্ড! হত্যাকান্ডের কোনো রাজনৈতিক আর অরাজনৈতিক ব্যাপার নেই। হত্যা হত্যাই।

একজন মানবিক মানুষ হিসেবে সকল হত্যার প্রতিবাদ এবং বিচার দাবি করা প্রত্যেকের অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু এখানে এসেও আপনি স্বার্থ খুঁজেন। আপনি দেখেন, ‘আমারতো কেউ মারা যায়নি! আমার ছেলে মেয়েকে তো কেউ আঘাত করেনি। অতএব আমি কেন প্রতিবাদ করতে যাবো! বাবারে... আমি এইসব ঝামেলার মধ্যে নেই।’

আপনার এই মানসিকতাই আজকে এরকম একটি নারকীয় হত্যাকান্ডের জন্য দ্বায়ী। আমাদের এই চরম স্বার্থবাদি চিন্তার কারণে বাংলাদেশ এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। আমাদের মাঝে অন্যায়ের প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধের প্রাকটিস নেই। আছে শুধু ফেসবুকে বড় বড় বুলি আওড়ানোর প্রাকটিস।

হায়রে বাঙাল...মানুষ আর হইলি না!


পঠিত : ৯৮১ বার

মন্তব্য: ০