Alapon

মুনাফিক ও ফাসিকদের নামাজে জানাজার ব্যাপারে বিধান কী?

এই ব্যাপারে কথা এসেছে সূরা তাওবার ৮৪ নং আয়াতে, আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেন, "আর আগামীতে তাদের মধ্য থেকে কেউ মারা গেলে তার জানাযার নামায তুমি কখ্খনো পড়বে না৷ এবং কখনো তার কবরের পাশে দাঁড়াবে না৷ কারণ তারা আল্লাহ ও তার রসূলকে অস্বীকার করেছে এবং তাদের মৃত্যু হয়েছে ফাসেক অবস্থায়৷।"

এ আয়াতের তাফসির প্রসঙ্গে মাওলানা সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী রহ. তাফহীমুল কুরআনে লিখেছেন :"তাবুক থেকে ফিরে আসার অল্প দিনের মধ্যেই মুনাফিকদের সরদার আব্দুল্লাহ বিন উবাই মারা যান। তার ছেলে আবদুল্লাহ বিন আব্দুল্লাহ ছিলেন একজন নিষ্ঠাবান মুসলমান। তিনি রসূল সা.-এর কাছে উপস্থিত হলেন এবং কাফনের সাথে যুক্ত করার জন্য রসূল সা.-এর জামা চাইলেন। তিনি পরম মহানুভবতার সাথে তা দিয়ে দিলেন। হযরত আব্দুল্লাহ রসূল সা.-কে পিতার জানাযা পড়াতেও অনুরোধ করলেন। রসূল সা. সে জন্যও প্রস্তুত হয়ে গেলেন।

হযরত ওমর বললেন : ইয়া রসূলুল্লাহ! যে ব্যক্তি অমুক অমুজ কাজ করেছিল, আপনি কি তার জানাযা পড়াবেন? কিন্তু তিনি এসব কথা শুনে মুচকি হাসতে লাগলেন এবং শত্রু ও বন্ধু সবার জন্য তিনি যে সর্বব্যাপী সহৃদয়তা ও মহানুভবতা পোষণ করতেন, তার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ইসলামের এই নিকৃষ্টতম দুশমনের জন্যেও মাগফিরাতের দোয়া করতে কুন্ঠিত হলেনন। অবশেষে তিনি যখন নামাযের জন্য দাঁড়িয়েই গেলেন, তৎক্ষণাত এই আয়াত নাযিল হলো এবং সরাসরি আল্লাহর নির্দেশে তাঁকে নিবৃত্ত করা হলো। কেননা এসময় চিরস্থায়ী নীতি নির্ধারণ করা হয়ে গিয়েছিল যে, মুসলমানদের সমাজ ও সংগঠনে মুনাফিকদেরকে কিছুতেই টিকে থাকতে দেয়া হবেনা এবং মুনাফিকদের উৎসাহ বাড়ে এমন কোনো কাজ করা যাবেনা।"

কিন্তু মাওলানা শাববীর আহমদ উসমানীর তাফসীরে বলা হয়েছে : "রসূল সা. আব্দুল্লাহ বিন উবাইর জানাযাও পড়িয়েছিলেন, তাঁর মুখে নিজের পবিত্র লালাও দিয়েছিলেন এবং তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করেছিলেন।"

অনুরূপভাবে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ স্বীয় তাফসীর তরজমানুল কুরআনে লিখেছেন : "যখন আব্দুল্লাহ বিন উবাই মারা গেলো, তখন তার ছেলে কাফনের জন্য রসূল সা.-এর জামা চাইলেন ও জানাযা পড়ানোর আবেদন জানালেন। রসূল সা. তার আবেদন মঞ্জুর করেন।"

তবে এখানে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি যে, রসূল সা. শুধু আবেদন মঞ্জুর করলেন, না জানাযার নামাযও পড়ালেন। পক্ষান্তরে মাওলানা শাববীর আহমদ উসমানী লিখেছেন যে, তিনি জানাযা নামায পড়ান, নিজের পবিত্র লালা তার মুখে দেন এবং মাগফিরাতের দোয়াও করেন। আর মাওলানা মওদূদী বলেন, নামায পড়ানোর জন্য তিনি দাঁড়িয়ে যান, কিন্তু আল্লাহর প্রত্যক্ষ নির্দেশ দ্বারা তাকে নিবৃত্ত করে রাখা হয়।

কিছু বিশুদ্ধ ও বলিষ্ঠ সনদ হাদিসসমূহ থেকে এ কথাই প্রতিপন্ন হয় যে, রসূল সা. আব্দুল্লাহ বিন উবাইর জানাযা পড়িয়েছিলেন। কিন্তু পরে তাঁকে সূরা তওবার ৮৪ নং আয়াতের মাধ্যমে মুনাফিকদের জানাযা নামায পড়াতে বারণ করা হয়। ফলে রসূল সা. পরবর্তীকালে আর কখনো এমন কোনো লোকের জানাযা নামায পড়াননি, যার মুনাফিক হওয়া একেবারেই স্পষ্ট ছিলো এবং তা রসূল সা.-এর জানা ছিলো।

কিন্তু কিছু কিছু হাদিস থেকে এ কথাও জানা যায় যে, তিনি আব্দুল্লাহ বিন উবাইর জানাযা পড়াননি। তিনি পড়াতে ইচ্ছুক ছিলেন, কিন্তু ওহী দ্বারা তাঁকে নিষেধ করা হয়। যেসব হাদিসে রসূল সা. কর্তৃক জানাযা পড়ানোর উল্লেখ রয়েছে, সেগুলো বুখারি, মুসলিম ও অন্য ছয়টি সহীহ হাদিসগ্রন্থে লিপিবদ্ধ রয়েছে। বুখারিতে 'জামা দ্বারা কাফন দেয়া' শিরোনামে হযরত ইবনে ওমর বর্ণিত প্রথম হাদিসের বক্তব্য এই যে, আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইর ছেলে পিতা মারা যাওয়ার পর রসূল সা.-এর নিকট আবেদন জানালেন, "আপনার জামাটা দিন এবং জানাযা পড়িয়ে দিন।" তিনি রাজি হয়ে গেলে হযরত ওমর রা. বললেন : "আল্লাহ তায়ালা কি আপনাকে মুনাফিকদের জানাযা পড়াতে নিষেধ করেননি।" রসূল সা. বললেন : "আমাকে এখতিয়ার দেয়া হয়েছে, পড়াতেও পারি, নাও পড়াতে পারি।" অবশেষে তিনি জানাযা পড়ালেন। পড়ানোর পর এ আয়াত নাযিল হয়।

যাই হোক, আল্লাহর রাসূল সা. আব্দুল্লাহ বিন উবাই-এর নামাজে জানাজা পড়েছেন অথবা পড়েননি যাই হোক না কেন আল্লাহ্‌ তায়ালা তাঁকে নিষেধ করে দেয়ার মাধ্যমে সমগ্র মুসলিম জাতিকে সতর্ক করে দিয়েছেন মুনাফিক, ফাসিক এই জাতীয় লোকদের জন্য দোয়া ও জানাজার ব্যাপারে। 
যারা 
ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবে, 
মানুষের উপর জুলুম করবে, 
ইসলাম বিরুদ্ধ কোনো রসম রেওয়াজ প্রচলন করবে (যেমন সুদ, ঘুষ, পর্দাহীনতা, জেনা-ব্যাভিচার ইত্যাদি), 
মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে রাখবে, 
মুসলিম সমাজ/দেশবিরোধী হয়ে মুশরিক/নাসারা/ইয়াহুদীদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী হবে 
মুসলিম রাষ্ট্রের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে,

এরা দৃশ্যত মুসলিম হলেও, নিয়মিত নামাজ রোজা করলেও, বিভিন্ন সময়ে ইসলামের পক্ষে কথা বললেও পূর্বের কাজের জন্য যদি তওবা না করে, না ফিরে এসে পূর্বের উপরোক্ত কাজ চালিয়ে যায় তাহলে তারা সূরা তাওবার ঘোষণা অনুসারে ফাসিক। তাদের নামাজে জানাজা, তাদের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করা ও তাদের কবর জিয়ারত করা বৈধ নয়। 

আব্দুল্লাহ বিন উবাই নিয়মিত রোজা রাখতেন, নামাজ পড়তেন, পর্দা মেইন্টেইন করতেন, সুদ-ঘুষ খেতেন না, শিরক করতেন না, আল্লাহ্‌কে প্রভু মানতেন। তার অপরাধ ছিলো তিনি আল্লাহর রাসূল সা. কে শাসক হিসেবে মানতে পারেন নি, তিনি আল্লাহর রাসূলের নির্দেশ অমান্য করে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে গেছেন, তিনি মক্কার মুশরিকদের সহায়তা করেছেন মদিনা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। আজ যারা নিজেদের মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিবে একইসাথে হিন্দুস্তানের মুশরিকদের স্বার্থ দেখবে তারা সবাই আব্দুল্লাহ বিন উবাই-এর অনুসারি বলেই বিবেচিত হবে। তাদের নামাজে জানাজা, দোয়া করা ও কবর জিয়ারত নিষেধ। আল্লাহ্‌ তায়ালা আমাদের বুঝার তাওফিক দান করুন। আমীন।

পঠিত : ২২০৩ বার

মন্তব্য: ০