Alapon

বাংলাদেশের রাজনীতির সৌভাগ্যের বরপুত্র...

সিপাহী বিপ্লবের পর জেনারেল জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতা দখল করেন, তখন এরশাদ বিশেষ ট্রেনিং নেওয়ার জন্য ভারতে অবস্থান করছিলেন।

তাকে ভারত থেকে জরুরী ভিত্তিতে দেশে ফেরার জন্য সংবাদ পাঠানো হয়। এরশাদ ফিরলে তাকে কমিশন প্রদান করে জেনারেল পদমর্যাদা প্রদান করা হয়। সেইসাথে তাকে সেনাবাহিনীর সেকেন্ড চীফ অব স্ট্যাফ করা হয়। এর তিন মাস পর তাকে সেনাবাহিনীর চিফ অব স্ট্যাফ করা হয়। এতো দ্রুত কমিশন প্রদান করে চীফ স্ট্যাফ করার ইতিহাস পৃথিবীতে বিরল!

এরপর আসে এরশাদের ক্ষমতা দখলের সুযোগ। এরশাদ তার অনুগত সেনা সদস্যদের সাথে মিটিং করে অভ্যুত্থান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। তারপর একটি টিমকে জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গ্রেফতার করার দায়িত্ব দিলেন। সেই টিমকে তিনি বলেছিলেন, জেনারেল জিয়া যেন অক্ষত থাকে।

খুব সম্ভবত জেনারেল এরশাদ জানতেন না ঐ টিমের সাথে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর যোগসাজস আছে। ‘র’ ঐ টিমের দ্বারা জেনারেল জিয়াকে হত্যা করে। জেনারেল এরশাদ এই বিষয়টি অনেক পরে জানতে পারেন।

‘তিনটি সেনা অভ্যুত্থান এবং কিছু না বলা কথা’ এমনই তথ্য রয়েছে। খুব সম্ভবত জেনারেল এরশাদ জিয়াউর রহমানকে প্রতিদ্বন্দি ভাবলেও, শত্রু ভাবতেন না। শত্রু ভাবলে জেনারেল এরশাদের আমলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনারেল জিয়াউর রহমানের নামে হল নির্মিত হতো না!

মূল আলোচনায় ফিরে আসি। জেনারেল এরশাদ ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দেশ শাসন করেন। এরপর গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। পদত্যাগ করার পর জেনারেল এরশাদের স্থান হয়, কারাগারে। আর তাকে কারাগারে বন্দি করার ব্যাপারে ভূমিকা রাখেন, জেনারেল জিয়ার সহধর্মীনি এবং তৎকালীণ প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

জেনারেল এরশাদকে প্রায় ৬ বছর অন্ধকার কারাগারে বন্দি জীবন পার করতে হয়। এরশাদের জীবনের ব্যর্থতা অথবা দূর্ভাগ্য যদি কিছু থেকে থাকে, তবে এই ৬ টি বছরই ছিল তার ব্যর্থতার বছর।

এরপর জেনারেল এরশাদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘ক্ষমতা নির্ধারক’ হিসেবে আর্বিভাব লাভ করেন। ১৯৯৬ এর নির্বাচনে যখন আওয়ামীলীগ ও বিএনপির কোনো দলই নিরঙ্কুশ বিজয় পেল না, তখনই এরশাদের ভাগ্য খুলে গেল। এরশাদ যেদিকে, দেশের ক্ষমতাও সেদিকে। সেইবার জেনারেল এরশাদ সমর্থন দিলেন আওয়ামীলীগকে, আর আওয়ামীলীগ তার সমর্থনে সরকার গঠন করল। তারপর থেকে আজ অবধি জেনারেল এরশাদ ছিলেন বাংলাদেশের রাজনীতির ‘ভাগ্য বিধাতা’! দেশের ক্ষমতায় সরাসরি না থেকেও, পরোক্ষভাবে ক্ষমতা ভোগ করতেন।

জেনারেল এরশাদের আগে এবং পরে, পৃথিবীর ইতিহাসে বহু স্বৈরশাসক এসেছে; অনেকের পতনও হয়েছে। আবার কাউকে কাউকে গদি হারানোর পর করুন মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে এমন একজন স্বৈরশাসকও পাওয়া যাবে না, যে কিনা দেশের রাজনীতিতে নিজেকে ‘ভাগ্য বিধাতা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে।

সেই সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, তিনি সত্যিই সৌভাগ্যবান ছিলেন। কাউকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সৌভাগ্যের বরপুত্র বলতে হলে, তা জেনারেল এরশাদকেই বলতে হয়!

পঠিত : ৮১১ বার

মন্তব্য: ০