Alapon

প্রিয়া সাহার অভিযোগ এবং প্রকৃত বাস্তবতা...

২০১৩ সালের কথা! তখন সারাদেশব্যাপী সরকার বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে। আমাদের এলাকাতেও শক্ত আন্দোলন চলছিল। সেসময় সন্ধ্যার পর তরুণ যুবকরা একসাথে আড্ডা দিতে বা ঘুরতে যেতে ভয় করত। কারণ, তরুণদের আড্ডা দেখলেই পুলিশ তাদের চ্যালেঞ্জ করত। নানারূপ হয়রানি করত। তাই ঝামেলা এড়াতে এইসময় আমরাও আড্ডা কম দিতাম।

ইন্টারের টেষ্ট পরীক্ষার পর আমরা বন্ধুরা একদিন সন্ধ্যায় বের হলাম। যদিও সবাইকে সতর্ক করে বলেছিলাম, পুলিশ ধরতে পারে কিন্তু। তখন বিরাট ঝামেলা হয়ে যাবে। তখন আমাদের সাথে থাকা হিন্দু ধর্মালম্বী এক বন্ধু বলল, ‘তোরা তোদের চিন্তা কর। আমি হিন্দু মানুষ। পুলিশ আসার সাথে সাথে প্যান্ট খুলে দিবো। পুলিশ দেখবে আমি মুসলমান নই। তখন আর আমাকে ধরবে না।’

বাংলাদেশে হিন্দুরা কতটা নিরাপদ আশা করি উপরের ঘটনার মধ্য দিয়ে কিছুটা উপলবদ্ধি করতে পারছেন। দ্বিতীয় আর একটি ঘটনা বলি। বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ডের কথা নিশ্চয়ই সকলেরই স্মরণে রয়েছে। সেই হত্যাকান্ডে জড়িত ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ। তাদের কেউ কেউ এখনো কাশিমপুর কারাগারে বন্দি।

ছাত্রলীগের সেই নেতারা বলেন, ‘আমরা যাকে কুপিয়ে হত্যা করেছি, তার নাম যদি ‘শ্রী বিশ্বজিৎ’ না হয়ে ‘মো. বিশ্বজিৎও’ হতো তারপরও আমরা বেঁচে যেতাম। সেই খুন দেখিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদ পেতাম। কিন্তু বিশ্বজিৎ হিন্দু হওয়াতেই আমরা আটকা পড়ে গেছি। এই কথাগুলো তাদেরই জেলমেট এক ভাইয়ের কাছে শুনেছিলাম।

আসলেও তাই। গত ১০ বছরে ছাত্রলীগ বহু হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। কিন্তু সেই হত্যাকান্ডের বিচার হওয়াতো দূরের কথা আজ অবধি কেউ গ্রেফতারই হয়নি। এমনকি ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে ছাত্রলীগ এবং আওয়ামীলীগ প্রকাশ্য দিবালোকে জামায়াত কর্মী জসিমকে পিটিয়ে হত্যা করল, সেই হত্যাকান্ডের আজ অবধি কোনো তদন্ত হয়নি। চার্জশীট তো দূর কি বাত!

কিন্তু বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় ছাত্রলীগ নেতারা গ্রেফতার থাকার কারণ একটাই, সে হিন্দু! এই দেশে আর কারও বিচার পাওয়ার অধিকার থাকুক আর নাই থাকুক, হিন্দুরা বিচার পাবেই।

তাদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি সরকার সবসময়ই নিশ্চিত করে আসছে। সরকার যাদের এতো দুধ, কলা দিয়ে পোষল, সেই হিন্দুই ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গিয়ে নালিশ করে। সেই হিন্দুই বলে, আমরা নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্জিত! আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই।

প্রিয়া সাহার অভিযোগটি ১০০% মিথ্যা না হলেও, মূল জায়গাটি মিথ্যা। ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন তাকে প্রশ্ন করে, কে তোমাদের জমি দখল করে তাড়িয়ে দিচ্ছে? তখন প্রিয়া সাহা বলে, উগ্রবাদি মুসলিম গোষ্ঠি।

গত ২০ বছরে হিন্দুদের দেশ ত্যাগ করার সমীক্ষা দেখলে বোঝায় যায়, দেশে আসলেই হিন্দু কমে যাচ্ছে। তারা তাদের সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে ভারতে পাড়ি জমাচ্ছে। এটা সত্যি। কিন্তু তাদের দেশ ত্যাগে মুসলিম গোষ্ঠিদের ভূমিকা রয়েছে এই কথাটি মিথ্যা।

প্রকৃত সত্য হল, হিন্দুদের জমি যদি কেউ দখল করেই থাকে তবে আওয়ামীলীগের নেতারাই করেছে। এবং তার ভরি ভরি প্রমাণ পত্রিকা খুললে দৃশ্যমান হয়। আওয়ামীলীগ এতোদিন যে হিন্দুকে দুধ, কলা দিয়ে পোষ মানানোর চেষ্টা করল, সেই হিন্দুই আজ আওয়ামীলীগকে মরণ ছোবল দেবার চেষ্টা করছে।

পঠিত : ১৯৯৭ বার

মন্তব্য: ০