Alapon

প্রিয়া সাহার অভিযোগের নেপথ্যের কারণ যা হতে পারে...

প্রিয়া সাহা এবং প্রখ্যাত আলোকচিত্র শিল্পী শহিদুল আলমের ঘটনার মাঝে সাদৃশ্য রয়েছে। তারা দুজনেই নালিশ করেছিল। শহিদুল আলম নালিশ করেছিল, আন্তর্জাতিক মিডিয়ার কাছে। আর প্রিয়া সাহা নালিশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে!

ঘটনার বিচারে আপনার কাছে কোনটা বেশি মারাত্মক বলে মনে হচ্ছে?

খুব নিশ্চিত করেই বলা যায়, প্রিয়া সাহার নালিশের বিষয়টি। কিন্তু প্রিয়া সাহার এরূপ রাষ্ট্রদ্রোহিতা মূলক কর্মকান্ডের পরও রাষ্ট্রের আচরণ স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। কিন্তু শহিদুল আলমের সময় আমরা দেখেছি, তিনি যেদিন মিডিয়ায় সাক্ষাতকার দিয়েছেন তার ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং রিমান্ডের মুখোমুখি করা হয়েছে।

অন্যদিকে প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার দুটি মামলা হলেও, রাষ্ট্র তা খারিজ করে দিয়েছে। এমনকি প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে মামলা করতে চাওয়া ব্যারিষ্টার সুমনের বিরুদ্ধে উলটা মামলা করা হবে বলে হুমকি দিয়েছে, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্ঠান ঐক্যজোট।

আবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, এখনই মামলা নয়। প্রধানমন্ত্রী ধীরে চল নীতিতে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অতীতের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রীর এই আচরণ সত্যিই সন্দেহজনক!

অপরদিকে আইনমন্ত্রী বলছেন, প্রিয়া সাহার সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা। তিনি ডাহা মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু এই মিথ্যা তথ্য দেওয়ার পরও এটি রাষ্ট্রদ্রোহ নয়!

সরকারের আচরণ সত্যিই ভাবাচ্ছে! তাদের প্রতিক্রিয়া খুব একটা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।

প্রিয়া সাহার নেপথ্যের কারণ কী হতে পারে?

প্রিয়া সাহার মাধ্যমে খুব সম্ভবত ভারত সরকারকে একটি সতর্কবার্তা দিতে চায়। এটি সকলেরই জানা, বিগত কয়েকবছর ধরে আওয়ামীলীগ সরকারের সাথে ভারতের সম্পর্কটা ঠিক আগের মত নেই। ভারতকে রুষ্ঠ করে সরকার চীনের বিনিয়োগ গ্রহণ করেছে। চীন থেকে সাবমেরিন ক্রয় করেছে। এমনকি চীনকে বাংলাদেশে শিল্পাঞ্চল গড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে আওয়ামীলীগ সরকার। তারপর থেকেই মূলত ভারতের সাথে আওয়ামীলীগের সম্পর্কটা আগের মত সুখী নেই। আওয়ামীলীগ ও ভারতের সম্পর্কে দাম্পত্য সম্পর্কে সন্দেহ এবং বিদ্বেষের আগুন জলছে।

যার কারণে, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর করার কথা ছিল। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে সে সময় ভারত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে অনীহা প্রকাশ করে। আর প্রিয়া সাহার ঘটনার পরপরই পত্রিকা মারফত জানতে পারলাম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত সফরে যাচ্ছেন।

খুব সম্ভবত প্রিয়া সাহা ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’- এর প্রত্যক্ষ এজেন্ট। যার কারণে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তার বিরুদ্ধে একশনে যেতে দ্বিধায় পড়ে গেছে। স্পষ্টত রাষ্ট্রদ্রোহ কর্মকান্ড করার পরও আইনমন্ত্রী প্রিয়া সাহার কাজকে রাষ্ট্রদ্রোহি কাজ বলছেন না। অন্যদিকে হাইকোর্টও প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুটি মামলা খারিজ করে দিয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, প্রিয়া সাহার পিছনে খুব শক্তিশালী শক্তি আছে।

আমার ধারণা এই শক্তিটা হল ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’। ২০০৮ সাল পরবর্তি বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক আর আর ২০১৮ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক পর্যালোচনা করলে সহজেই বোঝায় যায়, ভারতের সাথে আওয়ামীলীগের সম্পর্কটা ঠিক আগের মত নেই। কোথায় যেন সুতা ছিড়ে গেছে!

সেই সুতা জোড়া লাগানোর জন্যই হয়ত প্রিয়া সাহাকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করছে ভারত। আর এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে তথা আওয়ামীলীগ সরকারকে সতর্কবার্তা পৌছে দিচ্ছে। ‘দেখ, আমরা চাইলেই তোমাদের মহাবিপদে ফেলতে পারি। অতএব চীনের সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করে পুনরায় সংসারে ফিরে আসো!’

ঘটনা বিচার বিশ্লেষণ করে এসব আমার মনে হয়েছে। এর কোনো যৌক্তিক প্রমাণ আমার কাছে নেই। প্রিয়া সাহার আসল উদ্দেশ্য কী ছিল, তা হয়ত সময়ই বলে দিবে। ততোদিন পর্যন্ত ঘটনার উপর চোখ রাখা ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না...

পঠিত : ১৭০১ বার

মন্তব্য: ০