Alapon

পোশাক খাতের আয় বাড়িয়ে দেখানোতে লাভ কী?

২০১৮-১৯ অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয় দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৮৮ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। অথচ প্রকৃতপক্ষে এটি হবে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। কারণ, তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে রফতানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ ব্যয় হয়ে যায়।

আশ্চর্যের বিষয়, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) আয় দেখানোর ক্ষেত্রে পোশাক খাতের এ কাঁচামাল আমদানি ব্যয় বা ব্যাক টু ব্যাক এলসির খরচ হিসাব থেকে বাদ দেয় না। যদিও অন্যান্য খাতের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন।

জানা যায়, সর্বশেষ অর্থবছরে ইপিবির হিসাবে তৈরি পোশাক খাতের দেখানো ২ কোটি ৮৮ লাখ ৩৬৪ কোটি টাকার মধ্যে ওভেনে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৬০ কোটি টাকার মধ্যে ব্যাক টু ব্যাক এলসির খরচ ১ লাখ ১৬ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা বাদ গেলে প্রকৃত আয় হয় ২৯ হাজার ১৩২ কোটি টাকা মাত্র।

অন্যদিকে নিটওয়্যার ক্ষেত্রে ১ লাখ ৪২ হাজার ৭০৪ কোটি টাকার মধ্যে ব্যাক টু ব্যাক এলসির ৪২ হাজার ৮১১ কোটি টাকা বাদ দেয়া হলে প্রকৃত আয় হয় ৯৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা। এ অবস্থায় রফতানি আয়ের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে হলে ব্যাক টু ব্যাক এলসির ব্যয় বাদ দিয়ে প্রকৃত অঙ্ক তুলে ধরার বিকল্প নেই। কারণ কোনো একটি খাতের প্রকৃত আয় বিবেচনা করেই সরকার তাতে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে।

তৈরি পোশাক ছাড়া আরও কিছু খাতের কাঁচামাল আমদানির ব্যাক টু ব্যাক এলসিতে চলে যায় রফতানি আয়ের বড় একটি অংশ। এগুলোর ক্ষেত্রে যেমন ব্যাক টু ব্যাক এলসি বাদ দিয়ে প্রকৃত আয় হিসাব করা দরকার, তেমনি তৈরি পোশাক খাতসহ সব খাতের কাঁচামাল উৎপাদন শিল্প গড়ে তোলার বিকল্প নেই। কারণ, বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করে কেবল দর্জির কাজ করে কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন যে সম্ভব হবে না তা বলাই বাহুল্য।

এজন্য যা যা করা দরকার সবকিছু করতে হবে। কেননা এর মধ্য দিয়ে কাঁচামাল আমদানির খরচ বাঁচানোর পাশাপাশি লিঙ্কেজ শিল্প গড়ে তুলে কর্মসংস্থান তৈরির সুযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের কাঁচামাল উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে এজন্য ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেয়া এবং ওভেনে ব্যাক টু ব্যাক এলসির ৩০ শতাংশ স্থানীয়ভাবে কেনার শর্ত জুড়ে দেয়া যেতে পারে।

আমরা মনে করি, দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ঠিক রাখা, আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে রফতানিমুখী শিল্পের সব কাঁচামাল তৈরির যোগ্যতাসম্পন্ন স্থানীয় শিল্প গড়ে তোলার জন্য পরামর্শগুলো আমলে নেয়ার বিকল্প নেই।

তৈরি পোশাকসহ যে কোনো শিল্পে অনেক দেশ প্রণোদনা ও শর্তারোপ নিশ্চিত করার মাধ্যমে নিজেদের স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সক্ষম হয়েছে। আমাদেরও বিষয়টিতে নজর দেয়া অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। ইপিবিসহ দায়িত্বশীল সরকারি দফতরগুলোকে রফতানি আয়ের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি কীভাবে রফতানি আয় বাড়ানো এবং স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেয়া ও প্রয়োজনীয় লিঙ্কেজ শিল্প গড়ে তোলা যায় সে বিষয়ে সুপারিশ, এমনকি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

বিশেষত যেহেতু তৈরি পোশাক শিল্পে আমাদের ব্রান্ডিং সবচেয়ে ভালো, সেহেতু এর কাঁচামাল তৈরিতে নিয়োজিত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে নগদ সহায়তা ও করহ্রাসের আওতায় আনা দরকার। এছাড়া বাড়িয়ে না দেখিয়ে প্রকৃত চিত্র তুলে ধরলে তৈরি পোশাক খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাও রফতানি আয় বাড়ানোর তাগিদ অনুভব করবেন।

কেবল যে এ বছর ইপিবি রফতানি আয় বাড়িয়ে দেখিয়েছে তাই নয়, প্রতি বছরই ব্যাক টু ব্যাক এলসি বাদ না দিয়ে এভাবে দেখানো হচ্ছে। বিষয়টি কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না। রফতানি আয়ের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরার মাধ্যমে সবকিছু নির্ভুলভাবে বিচার-বিবেচনাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

পঠিত : ৮০৭ বার

মন্তব্য: ০