Alapon

টানাপোড়েন

বাস থেকে নামতে না নামতেই প্রচন্ড ধুলিঝড়ে  পরে গেল ফাহিম । ওভার ব্রিজটা পার হয়ে  শ্যামলী স্কোয়ারের  সামনে আসতেই  সারা শরীর ধুলোবালিময় হয় যায় তার ।  তীব্র ঘূর্ণি বাতাসে রাস্তার ধুলো-ময়লাগুলো  কুন্ডলি পাকিয়ে টালমাটাল রূপ নিয়েছে ।  বৈদ্যুতিক তারের সাথে আর এক তার  লাগতেই স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে ভূতুরে আবহ তৈরি হচ্ছে  । কিন্তু, ফাহিম প্রকৃতির এই রুদ্র রূপেও নিস্পৃহ দাঁড়িয়ে থাকে ওভার ব্রিজের সিঁড়ির গোড়ায়।  দেহ বাস্তব জগতে থাকলেও, মন পরাবাস্তব জগতের গলিপথে ঘুরতে থাকে ফাহিমের ।  এতটুকু বয়সে আর কত দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হবে? 
এই মুহূর্তে প্রকৃতির ঝড়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ফাহিমের ব্যথার পারদ দ্বিগুন ফেনিয়ে ওঠে । ভার্সিটির টিউশন ফির পেমেন্ট স্লিপটা প্যাকেট থেকে বের করে চতুর্থবারের মত চোখ বুলায় ফাহিম । একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে । বাসা ভাড়া,  মিলের টাকা, টিউশন ফি এখনো বকেয়া । কয়েকমাস ধরে বেশ আর্থিক সংকটে পড়েছে সে । 
ধ্যুত  !  হাজতের বন্দি জীবনটাই বোধহয় ভাল ছিল ।  কোন টানাপোড়ন নাই,  নিশ্চিন্ত জীবন !  --অস্ফুট স্বরে বলে ফাহিম ।  
মাঝে মাঝে মা যখন   জেলখানায় দেখতে   আসত তখনি কেবল, বিষাদ আর মন খারাপের কালোমেঘগুলো হানা দিত হৃদয়রাজ্যে । 
ক্যাম্পাসে  কোটা সংস্কার আন্দোলনে যে কয়েকজন সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিল -- ফাহিম  তাদের মধ্যে একজন ।  অযৌক্তিক বস্তাপচা কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের আন্দোলনে বন্ধুদের নিয়ে শামিল হয় সেও। একদিন -- ফুটপাতের টঙ দোকানে সহযোদ্ধাদের নিয়ে পরবর্তীতে কিভাবে সাধারণ ছাত্রদের নিয়ে আন্দোলন বেগবান করা যায় সে বিষয়ে কথা হচ্ছিল   ।  কিন্তু হঠাৎ ক্যাম্পাসের কয়েকজন জুনিয়র ও বহিরাগত সন্ত্রাসী  লাঠিসোটা নিয়ে আতর্কিতভাবে  হামলে পড়ে তাদের  উপর ।  জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে হাতপাতালে আবিষ্কার করে সে । সুস্থ হতেই জেলে ৷ 
জীবনের প্রথম জেল ।  অথচ তার স্বপ্ন ছিল বিসিএস ক্যাডার হওয়ার । তা হওয়ার মত যথেষ্ট মেধাবী ও পরিশ্রমীও সে । 
তিনমাস পর জেল থেকে বের হয়ে  টিউশনিগুলো  হারাতে হয় তাকে ।   যেগুলো তার থাকা ও খাওয়ার টাকার  যোগান দিত ।  আটপৌরে মধ্যবৃত্ত কৃষক বাবা তাকে মুক্ত করতে অনেক কাটখড় পুরিয়েছেন । 
এই কয়েকমাস কী বিপদে'ই না কেটেছে তার পরিবারের । 
 টিউশনি ছাড়াও একটা   কোচিংয়ে  ক্লাস প্রতি দেড়শ টাকা   পেত ফাহিম ।  তা দিয়ে কোনমতে চলে যেত তার ।  কিন্ত যে ব্যাচটা সে পড়াত তাদের   এইচএসসি  পরীক্ষা শুরু সামনে সপ্তাহ থেকে ।  কোচিং কর্তৃপক্ষ আজ জানিয়ে দিয়েছে পরে কোন ব্যাচে টিচার লাগলে তাকেই ডাকবে । 
আপাতত কোন তাকে লাগছে না ।  
এবার উভয়সংকটে পতিত হয় ফাহিম ৷ 
ঝড়োবাতাস শেষে একটু বৃষ্টি পড়েই পরিবেশ কিছুটা শান্ত হয় ।  এবার সিঁড়ি থেকে নেমে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় সে। খুব পিপাসা পেয়েছিল তা । একগ্লাস  লেবুর শরবত  গ্লাস খাওয়া  যাক -- মনে মনে ভাবে  ফাহিম ।  শরবত খেয়ে টাকা দিতে গিয়ে খেয়াল হলো তার ম্যানি ব্যাগে একটি মাত্র পাঁচ টাকার নোটই অবশিষ্ট আছে ।  শ্যামলী থেকে শিয়া মসজিদ পর্যন্ত লেগুনা ভাড়া পাঁচ টাকা ।  
রুমমেটের কাছ থেকে ভাড়ার জন্যই বিশটাকা নিয়েছিল । এখন তবে হেঁটেই যেতে হবে !
অগত্যা হাটতে শুরু করে ফাহিম । 
শ্যামলী ক্লাবের সামনে আসতেই এলাকার এক বড় ভাইয়ের সাথে তার দেখা ।
: কি অবস্থা ফাহিম, কেমন আছ ?
: আলহামদুলিল্লাহ,  ভালো আছি ভাই । 
: আচ্ছা তুমি কি একটা টিউশনি করাতে পারবে ? মাসান্তে   ভাল পেমেন্ট দিবে । 
( কথাটা শুনেই যেন চমকিত হয় ফাহিম, তবে কি আবার টানাপোড়েনের ঝড় থেমে যাবে? )
: পারবো ভাই,  ব্যগ্র গলায় জবাব দেয় ফারাবী ।
ফাহিম  বাসার ঠিকানাটা বলে চলে যায় বড় ভাই । 
ফাহিম  মনে মনে ভাবে মনে হয় স্বপ্ন দেখছে সে  !
আল্লাহর দরবারে  শুকরিয়া জানাতে ভুলেনা ফাহিম । 
লাখো কোটি শুকরিয়া তোমার দরবারে মা'বুদ । 
দৃঢ়পায়ে বাসায় দিকে পা বাড়ায় ফাহিম ।

পঠিত : ৩৪৯০ বার

মন্তব্য: ০