Alapon

সরকার বাহাদুরের ফটোসেশন পদক্ষেপে কি এডিশ মশা থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে?

সকালে উঠেই এক পরিচিত ব্যক্তির ফোন পেলাম। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে জড়ানো কন্ঠে বললেন, ‘ভাই ভীষণ অসুস্থ! ডেঙ্গু টেস্ট করিয়েছিলাম, রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে।

এতোদিন ডেঙ্গু রোগীদের শুধু পত্র-পত্রিকায় দেখলাম। এখন নিজের আশেপাশে পরিচিত ব্যক্তিরাও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ঢাকা শহরে মিনিটে ১ জন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ মাসে (আগস্ট) দিনে গড়ে ১ হাজার ৬৯৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। অর্থাৎ, ঘণ্টায় ৭০ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগস্টের প্রথম তিন দিনে ঢাকার ৩৫টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং আটটি বিভাগের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে এসব রোগী ভর্তি হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাবে, গতকাল শনিবার নতুন ১ হাজার ৬৪৯ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি যখন এই পর্যায়ে তখন আমাদের তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ বলেছেন, ‘সরকার ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে’।

সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা তো পত্রিকা মারফত দেখতে পেলুম। এবার আপনারাও একটু দেখে নিন।


মন্ত্রী মহোদয় ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে অভিনয় শিল্পীদের সাথে নিয়ে রাস্তায় ঝাড়ু নিয়ে বের হয়েছেন।


ঢাকা উত্তরের অনভিজ্ঞ মেয়র বাবুও দলবল নিয়ে ঝাড়ু নিয়ে বের হয়েছেন।


নেতাদের দেখাদেখি কর্মীরাও ঝাড়ু নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন।

অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, সরকার বাহাদুরের এই ঝাড়ু কার্যক্রম দেখে এডিশ মশা দলবল নিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করবে! এ যেন এক নব্য সার্কাস।

সরকারের সবকিছু নিয়ে অতিমাত্রায় রাজনীতি করণের বলি হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। একদিকে মন্ত্রী এবং মেয়ররা অভিনয় শিল্পীদের নিয়ে ফটোসেশন করছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মিনিটে ১ জন করে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। আবার ডেঙ্গু টেষ্ট করাতে গেলেও পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়! রাজধানীর সরকারী হাসপাতালগুলো ছাড়া অন্যান্য হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু টেস্ট করার জন্য পর্যাপ্ত কীটের সরবরাহ নেই! দেশের রাজধানীর হাসপাতালগুলোর যখন এই অবস্থা তখন রাজধানীর বাহিরের হাসপাতালগুলোর কী কাহিল অবস্থা, তা ভাবতেও ভয় করছে!

সরকারের কর্মকান্ড দেখে মনে হচ্ছে, সরকার বাহাদুর ডেঙ্গু বিষয় নিয়ে খুব একটা সিরিয়াস নয়। হয়ত সরকারের দুই একজন মন্ত্রী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে না মরা পর্যন্ত তারা সিরিয়াস হবে না। যেহেতু, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য সচিবের স্ত্রী, ডাক্তার এবং পুলিশের এসআই মারা যাওয়ার পরও সরকারের কোনো বোধদয় হচ্ছে না। তাই এরূপ ভাবতে বাধ্য হলাম।

ডেঙ্গু হয়ত এখনো মহামারি আকার ধারণ করেনি। কিন্তু সরকারের এরূপ উদাসিনতা এবং সার্কাসময় কান্ডের জন্য মহামারি আকার নিতে খুব একটা সময় লাগবে মনে হয় না।

পঠিত : ৫৯৬ বার

মন্তব্য: ০