Alapon

কাশ্মীর সঙ্কট, ৩৭০, নতুন যুদ্ধের পরিস্থিতি, বিজেপি এবং RSS ...

আর এস এস বিজেপিকে চালায় (RSS runs BJP)। মোদী, অমিত শাহ, অরুণ জেটলি এরা সবাই আর এস এসের হার্ডকোর সদস্য। (যেমন ছিলেন বাজপেয়ী, আদভানি, বা আমার বাবা জিতেন্দ্রনাথ।) ওদিকে স্মৃতি ইরানি। প্রজ্ঞা ঠাকুর। সাধ্বী ঋতম্ভরা। রাষ্ট্র সেবিকা সমিতি।

ওরা বলে স্বয়ংসেবক। (আমরা বাংলায় বলি স্বেচ্ছাসেবক, কিন্তু ওরা বলে স্বয়ংসেবক। আমি যখন দীর্ঘকাল ওদের সঙ্গে ছিলাম, তখন এই নিয়ে আমরা হাসাহাসি করতাম -- "স্বয়ংসেবক," অর্থাৎ নিজেকেই সেবা করা। এখন যা একেবারেই পরিষ্কার হয়ে গেছে। আগে অন্যরকম ছিল।)

তা সে যাই হোক। বিজেপির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পলিসি ও আইন পাশ করার পিছনে আর এস এসের সমর্থন থাকে। অনেক সময়ে, ওদের হেডকোয়ার্টার থেকেই পলিসি ও ব্লুপ্রিন্ট তৈরী হয়ে দিল্লিতে যায় পাশ করানোর জন্যে। এই যে কাশ্মীরের ৩৭০ বিশেষ ধারা বাতিল করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হলো, এ হলো আর এস এসের বহুকালের স্বপ্ন। এর ফলে জঙ্গী পাকিস্তান-বিরোধিতা দেখানো যাবে বটে, কিন্তু তার ফল হবে মারাত্মক। আন্তর্জাতিক আইনকে, জাতিসংঘকে সম্পূর্ণ বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখানো হলো। যা ট্রাম্পের আমেরিকা এবং ইজরায়েল বহুকাল ধরে করে আসছে।

যে কোনো ফ্যাসিস্ট শক্তিই আন্তর্জাতিক আইনকে অমান্য করে। হিটলারও তাই করেছে, আর আজকের আমেরিকা সারা পৃথিবীতেই তাই করে আসছে। এখন আমেরিকা পাকিস্তানকেও হাতে রাখার জন্যে দু একটা নিয়মরক্ষার কথা বলবে হয়তো। বিশেষ করে, একটা বড় ধরণের যুদ্ধ বাধলে বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলোর ব্যবসাবাণিজ্যের ক্ষতি।

কেবলমাত্র, যুদ্ধাস্ত্র বিক্রি করে যারা, বা যুদ্ধের আরো হাজার উপকরণ -- কম্পিউটার থেকে মাইক্রোচিপ থেকে প্লেন থেকে স্টিকিং প্লাস্টার, এবং গুপ্তচর সংস্থার আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স -- তাদের লাভ। বাকিদের ক্ষতি। কিন্তু আমেরিকার আসল ব্যবসাই যেহেতু যুদ্ধব্যবসা, তারা যুদ্ধ চাইবেই। আর এস এস জানে, আমেরিকাকে হাতে রাখতে গেলে যুদ্ধ একটা চালিয়ে যেতেই হবে। অস্ত্র কিনতে হবে।

আমেরিকা যুদ্ধ বিক্রি করে পটেটো চিপস বা ফোর্ড গাড়ির মতো। যুদ্ধই আমেরিকার অর্থনীতির ও সুপারপাওয়ার হওয়ার আসল শক্তি। পৃথিবীতে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর থেকেই প্রতি বছর কোথাও না কোথাও যুদ্ধ হয়েছে -- কোরিয়া, ভিয়েতনাম, এ্যাঙ্গোলা, চিলি, ইরাক আফগানিস্তান, ভারত পাকিস্তান বাংলাদেশ -- সর্বত্রই আসল বাণিজ্য করেছে মার্কিন যুদ্ধ কর্পোরেশনগুলো।

দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ হচ্ছে, এবং দুই দেশই আমেরিকান বোমা বন্দুক কামান ড্রোন ব্যবহার করেছে। কী বিউটিফুল ব্যবসা!

আর এস এস হিটলারের সমর্থক ছিল, এবং ওদিকে আবার ব্রিটিশদেরও সমর্থক ছিল তলায় তলায়। কী অদ্ভুত ইতিহাস! আর এস এস স্বাধীনতার জন্যে একফোঁটাও রক্ত দেয়নি। যেহেতু কেউ আর ইতিহাস পড়েনা, সুতরাং ইয়ং জেনারেশনকে মগজধোলাই করা এখন আরো অনেক সহজ হয়ে গেছে।

কাশ্মীরে পুলওয়ামা পুতুলনাচের পিছনেও ছিল আর এস এস -- অনুমান করা যেতেই পারে, কারণ কোনো বড় রাজনৈতিক খেলার প্ল্যান তাদের ঘর থেকেই আসে। সে প্ল্যান দারুণ কাজে লেগেছে। বিজেপি রমরম করে গদিতে। গণতন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে এবারে গণতন্ত্র জিনিষটাই ধ্বংসের খেলা শুরু। যা হিটলার করেছিল। ট্রাম্প করছে।

এখন যদি এই ৩৭০ আইন বাতিল করার ফলে আর একটা সঙ্কট সৃষ্টি হয়, তার ফলে লাভ হবে কার? যেখানে কংগ্রেসের মতো একটা নপুংসক বিরোধী দল, আর যেখানে লেফট পার্টিগুলো অদৃশ্য, আর আঞ্চলিক দলগুলো দুর্নীতিগ্রস্ত।

কালো টাকা উদ্ধার? আচ্ছে দিন? গঙ্গা শোধন? চাকরি বাকরি? কৃষক শ্রমিক? দেশজোড়া রেপ -- উন্নাও থেকে চেন্নাই? ভয়াবহ জলসঙ্কট, পলিউশন ও পরিবেশ? মোনস্যান্টোর বীজ ও চাষিদের আত্মহত্যা? রাফায়েল, নীরব মোদী, বিজয় মাল্য? ধোনির মিলিটারিতে যোগদান?

ব্যাংকের সুদ, পেনশন, বীমা শেষ করে দেওয়া? আই এম এফ, বিশ্বব্যাংক? এক ডলারে সত্তর টাকা? ঘরে ঘরে ক্যানসার? অবসাদগ্রস্ত বেকার যুবক যুবতী? ড্রাগ, পর্নের মহামারী?

"জানার কোনো শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই।" পাকিস্তানকে ওদিকে শেষ করে দিলে (বা অন্তত হুমকিটা ঠিকমতো দিয়ে যেতে পারলে), আর দেশের ভেতরে গরিব মুসলমানগুলোকে শেষ করে দিলে সবাই নাচবে। আর তারপর সিকুলার বুদ্দিজীবী।

আর এস এসের প্রধান বই (একটা বই আছে ওদের Bunch of Thoughts by M. S. Golwalkar) বলছে, ভারতের তিন শত্রু -- মুসলমান, খ্রীষ্টান, ও সোশ্যালিস্ট। আর বন্ধু -- আগে ছিল হিটলার। এখন ট্রাম্প। আর ইজরায়েল।

আমার কথাগুলো শুনতে অদ্ভুত লাগছে? মিথ্যে, বানানো বলে মনে হচ্ছে? তাহলে নিজেরা একটু পড়াশোনা করে নিন। আমার কথা বিশ্বাস করার দরকার নেই।

আমেরিকায় ট্রাম্পকে চালায় খৃষ্টান মৌলবাদী white supremacist শক্তি ও তাদের কর্পোরেশনগুলোর টাকা। কোক ব্রাদার্স। দেশে মোদী, শাহ, জেটলি BJPকে চালায় Hindu supremacist আর এস এস, এবং আম্বানি আদানি।

তাছাড়া বিদেশ থেকে প্রচুর ডলার আর পাউনড আসে। আমি যখন আর এস এস করতাম, বা আমার বাবা যখন ওদের হয়ে কাজ করতে গিয়ে জেলে গিয়েছিলেন গান্ধীহত্যার পরে, তখন ওরা সৎ চরিত্র আর নীতির কথা খুব বলতো। আর এখন?

ভালো থাকুন সবাই। বেঁচেবর্তে থাকুন কোনোরকমে। আমিও আছি।

যতদিন পারি। 

সংগৃহিত

পঠিত : ৭৭৭ বার

মন্তব্য: ০