Alapon

৩৭০ ধারা বাতিল এবং কাশ্মির আজাদি আন্দোলনের পরিণতি...

1971 সালের পর কাশ্মির ইস্যুটি আবারও সারাবিশ্বের আলোচিত ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। অবশ্য এর কৃতিত্বের ভার প্রচ্ছন্নভাবে মোদি সরকার এবং প্রত্যক্ষভাবে পাকিস্তানের ইমরান খান ও চীন সরকারকে দিতে হবে।

মোদি সরকার তার নির্বাচনী এজেন্ডা হিসেবে কাশ্মির থেকে ৩৭০ ধারা বাতিল না করলে, পাকিস্তান এবং চীন এই কৃতিত্বের দাবি কখনোই করতে পারতেন না। ভারত কাশ্মিরের বিশেষ সুবিধা সম্বেলিত ৩৭০ ধারা উঠিয়ে নেওয়ার পর ইমরান খান কাশ্মির ইস্যুকে গোটা বিশ্বের নজরে আনার চেষ্টা করেন। সফলও হয়েছেন। আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতে কাশ্মির ইস্যু খুব গুরুত্বের সাথেই প্রচার পাচ্ছে।

এবার আসা যাক অন্য কথায়। ভারত ৩৭০ ধারা বাতিল করায় আমি ব্যক্তিগতভাবে খুশি হয়েছি। কারণ, কাশ্মিরের আপামর সাধারণ জনতা কোনো বিশেষ সুবিধা চায় না। তারা চায় আজাদি; অর্থাৎ স্বাধীনতা। আর ৩৭০ ধারা হল রাজনীতিবিদদের স্বার্থবাদি ধারা। কাশ্মিরে এই ধারার আগমন ঘটান কাশ্মিরের ততকালীণ নেতা শেখ আব্দুল্লাহ। শেখ আব্দুল্লাহ পরিবর্তিতে তার ছেলে ফারুক আব্দুল্লাহদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ধারাই হল ৩৭০ ধারা! এই ধারায় জনগনের স্বার্থ খুবই সামান্য ছিল।

অন্যদিকে কাশ্মিরের আজাদি আন্দোলন দির্ঘদিন ধরে চলে আসায় সেই আন্দোলনে একটি স্থবিরতা বিরাজ করছিল। এই আন্দোলনের গতি দেখে মনে হচ্ছিল, না এসপার আর না ওসপার। এমনকি পাকিস্তানের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছিল, আজাদি আন্দোলনে পাকিস্তানও কিছুটা অলস হয়ে পড়েছে।

কিন্তু ৩৭০ ধারা বাতিলের পরপরই কাশ্মির আজাদি আন্দোলনে নতুন রূপ প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। অবশ্য এছাড়া তাদের ভিন্ন কোনো পথও নেই। অন্যদিকে পাকিস্তানের ভূমিকাও চোখে পড়ার মত। গত ১৪ আগস্ট আজাদ কাশ্মিরে সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এছাড়াও ভারত সীমান্তে সেনা মোতায়েন করেছেন পাকিস্তান। শুধু সেনা মোতায়েন করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি। ইতোমধ্যেই দুই দেশের সেনার গুলি বিনিময়ে পাকিস্তানের ৫ সেনা নিহত হলেও ভারত হারিয়েছে ২৫ সেনা সদস্যের জীবন।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিকভাবে পাকিস্তান কূটনৈতিক প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। ভারত যে রাশিয়ার দিকে চেয়েছিল, সেই রাশিয়াও ভারত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এখন ভারতের পক্ষে রয়েছে শুধু ইসরাইল এবং বাংলাদেশের সরকার; জনগন নয়।

এছাড়াও ভারতের দিকে ধেয়ে আসছে নতুন একটি বিপদ। আফগানিস্তানে তালেবান সরকার ক্ষমতায় ফিরল বলে। ইতোমধ্যেই ট্রাম্প সরকার তালেবানদের সাথে নেগোসিয়েশন করতে শুরু করেছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আফগানিস্তানে পুনরায় তালেবান সরকার ক্ষমতা ফিরে পাচ্ছে। আর তালেবান সরকার ক্ষমতা ফিরে পেলে ভারতের নতুন করে দুঃশ্চিন্তা শুরু হবে। তখন আফগান সীমান্ত নিয়ে খেলা শুরু হবে।

যদিও তালেবানরা ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার আগেই কাশ্মিরে মোজাহিদ টিম পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। এ থেকেই উপলব্ধি করা যায়, আফগানিস্তানে তালেবান সরকার ফিরলে ভারতকে কতটা চাপের মধ্যে থাকতে হবে।

আমার খুশির কারণ হল এটাই। বিগত ৭২ বছর ধরে কাশ্মিরের আজাদি আন্দোলন তেমন কোনো অবস্থানে পৌছাতে পারেনি। কিন্তু ৩৭০ ধারা বাতিল করে ভারতই তাদের আজাদি আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করছে। কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামিরা ভারতের বিরুদ্ধে হয় এবার মরণ কামড় দিবে অথবা নিজেরাই বিলীণ হয়ে যাবে। আমার বিশ্বাস, এই ৭২ ভারত যেহেতু তাদের বিলীণ করতে পারেনি, তাই কাশ্মিরের আজাদি আন্দোলন ব্যর্থ হবে না। হয়ত ভারত যখন তাদের স্বাধীনতার শত বৎসর উৎযাপন করতে যাবে, তখন কাশ্মির আর ভারতের অংশ থাকবে না। স্বাধীন হয়ে যাবে, ইনশা আল্লাহ।

পঠিত : ২৪৫০ বার

মন্তব্য: ০