Alapon

ভারতের কব্জায় থাকা দেওবন্দই বাংলাদেশী ওলামাদের অনৈক্যের সুতিকাঘার !

তের সালের দিকের ঘটনা নিয়ে আমি একটি স্টেটাস দিয়েছিলাম। তাবলীগের ফাজায়েলে আমলের তালিম পরবর্তিতে চরমোনাইর জিকিরের হালকার ঘোষনা শুনে। তাদের সেই দিনকার বেহুশ হওয়ার চিত্র এখনো আমার চোখে ভাসে ! সেদিন আমি জানতে চেয়েছিলাম, ফাজায়েলে আমলের তালিম সেটা কি জিকির নয় ? যাই হোক, সেদিনের পোস্টে চরমোনাই তো ছিলেই তাবলীগের কিছু ভাইও আমাকে নিয়ে বিরুপ কমেন্ট করে সেই জিকিরের পক্ষ নিয়েছেন।

এই তো কিছু দিন পুর্বে আমাদের আহলে হকের মুখপাত্র সাহেব তার সাইটে জিকিরের ভিতরে নাচানাচির ফজিলত নিয়ে দারুন সব দলিল আদিল্লা হাজির করেছিলেন। আজকে তিনিও সেই বেদয়াতী জিকির নিয়ে দ্বৈত চরিত্রে নেমেছেন। একবার বলছেন, উচ্চস্বরে জিকির আর গ্রুপ ভিত্তিক জিকির যেন গুলিয়ে না ফেলি।

চরমোনাইকে কোন ধরনের যাছাই ছাড়া বা যদি কিন্তু ছাড়ই হক বলে ঘোষনাকারী আরেক মুনাজার অলী পুরী সাহেবের ছেলেও দেখলাম ঐসব জিকির নিয়ে কিসব ক্যাচাল শুরু করলেন। অতঃপর, দেওবন্দী পরিচয় দেওয়া কিছু ভদ্রলোক তাকে কেনান বানিয়ে ছাড়লেন। 

কেউ কেউ তো এমন দাবিও করলেন যে, অলীপুরী তাকে ত্যাজ্য করেছেন। কি অবস্থা, চরমোনাইর তরিকার বিরোধীতা করায় জামানার মুনাজার নিজ পুত্রকে ত্যাজ্য করে কাকে খুশি করতে চাইছেন ? চরমোনাইর প্রকাশ্য বেদয়াতী, গোমরাহীপুর্ণ তরিকার বিরোধী করা কি অন্যায় ?

চরমোনাইর ভেদে মারেফত বা ইয়াদে খোদা টাইপের কিতাব নিয়ে তাদের বিরোধীতাকে আমি এখন ছেলেমানুষীই বলবো। কারণ সেগুলোর আবেদন এখন নেই, তারাও সেগুলো বিশ্বাস করে না বলেই তার প্রচারণা, প্রকাশনা বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু যে বিষয়টির দিকে আমি সবাইকে নজর দিতে বলবো সেটা হলো, কওমী ঘরানার লোকদের ফতোয়া, গবেষনার সকল এন্টেনা কেন দেওবন্দমুখী হবে ? তাদের মধ্যকার কোন লোক সত্যকে সত্য বলার সাহস করে না ?

তের সালের প্রথম দিকে ফেসবুকে এসেই বলেছি, এসব জিকির সত্যিকারের জিকিরের স্পিরিট তথা সুন্নাহ সম্মত জিকির থেকে মানুষকে ফারেগ করে। তাছাড়া ঐসব জিকিরের পথ পদ্ধতি সম্পুর্ণ নব উদ্ভাবিত বিষয় ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু তারা কেউ শুনলেন না। যখনই দেওবন্দের মুহতামিম স্পষ্ট ভাষায় ফতোয়া প্রকাশ করলেন যে, এ টাইপের জিকর, জিকিরের মজলিশ এবং নাচানাচী টাইপের ইশক সবি বেদয়াত, অমনি উপমহাদেশের কওমী ওলামাদের ফতোয়ার ভাবধারাও পাল্টে গেলো। তারা কোরাস গাইতে লাগলেন, বেদয়াত বেদয়াত !!

আল্লাহর না করুক, দেওবন্দের শায়েখ যদি এখনো চুপ করে থাকতেন এবং পুর্ববর্তি মুরুব্বিদের এতেয়াত করে এসব জিকিরকে জায়েজ ঠেওরাতেন, তাহলে নিশ্চিত করে বলা যেতো যে, এইসব জিকিরের পক্ষে লক্ষ কোটি দলিল হাজির করতে আমাদের আহলে হকের মুখপাত্রের কোন সমস্যাই হতো না। কিন্তু প্রবলেম হচ্ছে, এটাকে দেওবন্দের ভিতর থেকেই বেদয়াত বলা হয়েছে। ফলে না চাইলেও বেদয়াত বলতেই হয়। দেওবন্দই যে শরীয়াত !

বিষয়টি মাথায় নিয়ে অন্য একটি বিষয় চিন্তা করুন। আজকে দেওবন্দ যদি জামায়াত বা মাওলানা মওদূদী সম্পর্কে তাদের দৃষ্টি ভঙ্গি ইনসাফের সাথে পুর্ণবিবেচনা করে, সত্যিকারের রাহবারের দায়িত্ব্য পালনে এগিয়ে আসে তাহলে মুসলিমদের মধ্যকার দির্ঘ্যদিনের বিরোধী এক মুহুর্তে ঠান্ডা হয়ে যাবে। যেসব বুজুর্গরা জামায়াতের আক্বীদার দুর্গন্ধ খুজে খুজে হয়রনা হয়ে পড়েন, তারাও দেখবেন একদম চুপষে যাবে। অর্থ্যাৎ তাদের বিরোধীতা, শত্রুতা সব কিছুর পরিমাপ হচ্ছে দেওবন্দ। এটাই যে বড় থেকে বড় গোমরাহীর দরজা খুলে দেয়, জ্ঞান আকল কে বধির করে দেয়, সেটা কে বুঝাবে ?

এ প্রসঙ্গে ছোট্ট একটা উদাহারণ দেই।
জামেয়া কাসেমীয়ার সাবেক এক মুফতির সাথে আলাপ কালে আমাদের বহরিয়া হাই স্কুলের একজন শিক্ষক বলছিলেন, আপনারা মাওলানা মওদূদীর কিতাব না পড়েই তার বিরুদ্ধে লিখছেন, এটা কি জুলম নয় ? মুফতি সাহেব বললেন, আস্তাগফিরুল্লাহ ! যারা মওদূদীকে মাওলানা বলে তারা দুনিয়ার সব থেকে বড় জাহেল, দ্বীনের দুশমন ! আমি সাথে সাথে ট্যাব থেকে মাওলানা ত্বকী ওসমানী দা বা এর লিখিত মওদূদী বিরোধী কিতাবটির ভূমিকা পড়ে শুনালাম। আমি বললাম, দেখুন এখানে ত্বকী ওসমানী সাহেব লিখছেন, মাওলানা, গবেষক আবুল আ’লা মওদূদী। তো তিনি কি গন্ডমুর্খ, দ্বীনের দুশমন ! অতঃপর, তিনি বললেন তাহলে হয়তো ঠুনকো মওলবী হবে। 

দেখুন, ত্বকী ওসমানীর রেফারেন্স দেওয়ার সাথে সাথেই তিনি মওদূদী সাহেবকে মাওলানা স্বীকার করলেন, কিন্তু সাথে হিংসা বশত ঠুনকো মওলবী বললেন। অর্থ্যাৎ যেহেতু দেওবন্দী একজন আকাবার তাকে যেহেতু মাওলানা স্বীকার করেই ফেলেছে, তাহলে আমার ওপরও ফরজ হয়ে গেছে মওদূদীকে মাওলানা স্বিকার করা। এই অবস্থায় আপনি ঐক্য আর অন্যৈকের জন্য দেশীয় ওলামাদের কেন দোষারোপ করছেন, আসল নাটের গুরু তো ভারতের কব্জায় থাকায় দেওবন্দ ! ওরা চাইলে কওমীদের মধ্যকার বিভক্তিও শেষ করে দিতে পারে। কিন্তু দেবে না।

সংগৃহিত...

পঠিত : ৭১৯ বার

মন্তব্য: ০