Alapon

মসজিদে শিশুদের আগমন এবং আমার অভিজ্ঞতা...

গতকাল অফিসের পাশের মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে গেলাম। জায়গা না পাওয়ায় মসজিদের বাহিরে জায়নামাজ বিছিয়ে বসতে হল।

নামাজ শুরু হলে, ছোট্ট একটা বাচ্চা দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিল। এক পর্যায়ে দৌড়ানো ক্ষ্যান্ত দিয়ে সে আমার জায়নামাজের মাঝখানে এসে দাড়িয়ে পড়ল। ইমাম সাহেব রুকুতে যাওয়ার তাকবির দিলেন। কিন্তু বাচ্চাটা তখনও সেভাবেই দাড়িয়ে আছে। রুকু শেষ; এইবার সেজদার তাকবির দিলেন। তাকবির দেওয়ার সাথে সাথে বাচ্চাটা তার বাবার দিকে দৌড় দিল!

নামাজ শেষ হওয়া মাত্রই এক পা কব্বরে যাওয়ার বয়সি বুড়া চোখ মুখ শক্ত করে বলল- ‘এই বাচ্চাটা কার! আমগো নামাজ সে নষ্ট কইরা দিল, কামডা কি খুব ভালো হইল? বাচ্চাগুলারে মসজিদে আইনা কামডা কি খুব ভালো করছেন?’
বুড়ার মত আমিও চোখ মুখ শক্ত করে বললাম- ‘অবশ্যই ভালো করেছে। আর নামাজ নষ্ট হয়েছে, আপনাকে কে বলল? 
ঐ বাচ্চা মসজিদে আসবে। হাজার বার আসবে। আপনার মরার টাইম হইছে; আপনার মসজিদে না আসলেও চলবে! কিন্তু ঐ বাচ্চার মসজিদে আসা দরকার।’

আমার দেখাদেখি অন্যান্য মুসল্লিরাও তখন প্রতিবাদ করে বলল, ‘বাচ্চা মসজিদে আসায় আপনার সমস্যা কী? বাচ্চারা আসবে, খেলবে, দৌড়াবে; লাফালাফি-ঝাপাঝাপি যা ইচ্ছা তা-ই করবে। তাতে আপনার কী!’

সেই বুইড়া হয়ত ভেবেছিল, তার কথার সাথে অনেকেই একমত হবে! তারপর সেই বাচ্চার বাবাকে গালিগালাজ করে, কটূ বাক্যের তোড়ে আক্কেল দাঁত ভেঙ্গে দিবে। তারপর আর আক্কেল করে বাচ্চাকে জীবনেও মসজিদে আনার সাহস করবে না! কিন্তু ঘটনা ঘটছে পুরো উলটা!
আলহামদুলিল্লাহ! আজকাল সাধারণ মুসল্লিরা অনেক সচেতন হয়েছে। কিন্তু আমাদের শৈশবে এমন সচেতন মুসল্লির সংখ্যা ছিল না বললেই চলে!

আমার মনে পড়ে, ছোটবেলায় একবার উপজেলা পরিষদ মসজিদে জুমার পড়তে গিয়েছিলাম। খতিব সাহেব খুতবা পড়ানো শেষ করে কাতার সোজা করে দাড়ানোর কথা বললেন। সেইসাথে আরও বললেন, বাচ্চাদের পিছনের সারিতে পাঠিয়ে দিন।

আমি দাঁড়িয়েছিলাম প্রায় সামনের দিকে। আমাকে সেখান থেকে পিছনে দিতে দিতে একবারে শেষ লাইনে পাঠিয়ে দিয়েছে। আমার অভিমানি আর জেদি মন। নামাজ না পড়েই কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির পথ ধরলাম। বাড়িতে ফিরে আম্মাকে বলেছিলাম- ‘আমাকে আর কোনোদিন নামাজ পড়তে যাওয়ার কথা বলবেন না! নামাজই আর পড়ব না।’

নামাজ পড়া বাদ দেইনি ঠিকই, কিন্তু সেই মসজিদে আর বহুদিন নামাজ পড়িনি।

বাঙাল মুসল্লিরা বড়ই অদ্ভুদ! বাচ্চারা মসজিদে আসলে কোথায় আনন্দিত হবে, খুশি হবে, তা না! উলটা বাচ্চাদের কারণে নামাজ নষ্ট হওয়ার চিন্তায় হয়ত তার নামাজ-ই হয়নি!;">

পঠিত : ৬৭২ বার

মন্তব্য: ০