Alapon

তরুণ প্রজন্মের চোখে যা গুরুত্ব পাচ্ছে, তা কি আদৌ গুরুত্বপূর্ণ...?

কিছুদিন আগে বন্ধুদের সাথে বসুন্ধরা সিটিতে গিয়েছিলাম। জামা-কাপড় আর মোবাইলের শো রুমে হঠাৎ মার্কেটের এক জায়গায় অস্বাভাবিক ভিড়। বসুন্ধরা সিটিতে এমনিতেই ভিড় থাকে কিন্তু ঐ জায়গায় একটু বেশিই ভিড়।

খোজ নিয়ে জানা গেল হাল আমলের জনপ্রিয় অভিনেতা অপূর্ব সাহেব মার্কেট করতে এসেছেন। আর তাকে ঘিরে এই ভিড় গড়ে উঠেছে। আমার বন্ধুরাও অপূর্বর কথা শুনে যে যার মত ভিড়ে মিশে গেল।

অবশেষে তারা অপূর্ব সাহেবের সঙ্গে সেলফি খিঁচে বিজয়ীর বেশে দু পাটি দাঁত বের করে হাসতে হাসতে এসে বলল, ‘শালা (অপূর্ব) কিন্তু দারুণ স্মার্ট!’

হঠাৎ এক বন্ধু আমাকে মৃদৃ ধাক্কা দিয়ে বলল, ‘কী রে তুই গেলি না যে? অপূর্বকে চিনিস না নাকি?’
জবাবে বললাম, ‘চিনব না কেন! চিনলেই তাদের দেখে এভাবে পাগল হতে হবে, এমন কোনো কথা কোথাও লেখা আছে কি?’
তখন আমার এক বন্ধু বলল, ‘কে যেন বলছিল তুই অহংকারি। তখন বিশ্বাস করি নাই। আজতো নিজের চোখে দেখলাম। শালা, তোর কীসের এতো অহংকার?’

ওর প্রশ্ন শুনে অবাকের চূড়ান্ত হওয়া ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিল না। সে আমাকে অহংকারি ভাবল নাকি বিনয়ী ভাবল তাতে আমার কিছুই যায় আসে না। কিন্তু তারপরও মনে হল, আমার ভাবনাটা তাদের বলা উচিত।

তাদের বললাম, দেখ, অপূর্ব কে? অপূর্ব একজন অভিনেতা; ইন্টারটেইনার। সে অভিনয় করে আমাদের আনন্দ দেয়, মজা দেয়। মজা দেওয়াই তার কাজ। কিন্তু ‘মজা’ বিষয়টা মানুষের মৌলিক চাহিদার অংশ নয়। সার্বিক দিক বিবেচনা করলে মানুষের জীবনে ‘মজা’ বিষয়টার প্রভাব অতিসামান্য! অর্থাৎ মানুষের যখন কোনো কাজ থাকে না, সময় কাটানোর মত কোনো উপায় থাকে না, মূলত তখনই মানুষ টেলিভিশন খুলে বা ইউটিউবে প্রবেশ করে অপূর্বদের নাটক দেখে ইন্টারটেইন হয়; আনন্দ পায়। এতোটুকুই!

দ্বিতীয়ত, অভিনয় শিল্পীরা মূল সমাজের অংশ নয়। পূর্বের রাজা-বাদশাহদের হেরেমের মত, বর্তমান সময়ের অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও নিজেদের একটি সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। তারা সেই সমাজে ওঠা-বসা করে। মূল সমাজে তারা অচ্ছুত।

ঠিক একারণেই তাদের দেখে আমার ভিতরে কোনো চাঞ্চল্য বোধ হয় না, কোনো উত্তেজনা কাজ করে না। এছাড়াও দেশ বা সমাজ কিংবা জীবন নিয়ে তাদের চিন্তার দৌড় একটা প্রাইমারী স্কুলের বাচ্চার চেয়েও কম। বিশ্বাস না হলে, ইউটিউবে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের বহু ইন্টারভিউ রয়েছে। সেগুলো একটু মনোযোগ সহকারে দেখলেই বোঝা যায়, তারা কতটা লেইম চিন্তা লালন করে। আর তাদের দেখলেই কিনা আমরা সমস্তা কাজ-কাম ফেলে হুমড়ি খেয়ে পড়ি। তাদের সাথে সেলফি তোলার সমস্ত কিছু বাদ দিয়ে পাগল হয়ে উঠি।

এখন যেমন ‘কে হবে মাসুদ রানা’ নামক রিয়্যালিটি শো নিয়ে বর্তমান তরুন সমাজের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তারা বলছে, বিচারকরা অন্যায় আচরণ করেছে। এই অন্যায় কোনোভাবেই সহ্য করা যায় না।

সামান্য একটা রিয়্যালিটি শোতে বিচারকদের অন্যায় আচরণ নিয়ে আপনার ঘুম হারাম হয়ে গেছে, অথচ আপনার চোখের সামনে যে প্রতিনিয়ত শত শত অন্যায় ঘটছে কই তখনতো আপনি প্রতিবাদ করেন না! একটা বালিশ যখন ৫৫ হাজার টাকা দিয়ে কেনা হয়, হাসপাতালের পর্দা যখন ৩৭ লাখ টাকা দিয়ে কিনে হরিলুটের উৎসব করছে, তখন আপনি কোথায় থাকেন? এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে কে? এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করে ইউটিউবে ভ্লগ বানান না কেন?

ভাইরে, এসব রিয়্যালিটি শোতে যদি কোনো অন্যায় ঘটনা ঘটেও থাকে তারপরও তা নিয়ে আপনার চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ, এই শো-ফো দিয়ে আপনার আমার জীবন চলবে না। এসব শো-মো না হলে আপনি মরে যাবেন না। কিন্তু যেহারে চুরি চলছে, তাতে একদিন হয়তো আমাদের ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বের হতে হবে; কিংবা দূর্ভিক্ষে না খেয়ে মরতে হবে। তাই আলতু-ফালতু বিষয় নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবুন, দেশ নিয়ে ভাবুন।

পঠিত : ৬৬৪ বার

মন্তব্য: ০