Alapon

নির্বাচনী সমর্থন ও একটি কথোপকথন


তিনি বললেন—
বাম দলে ভরপুর একটি জোটকে সমর্থন দিতে কি একটুও চিন্তা করা উচিত ছিল না?

উনাকে বলা হল—
হ্যা, চিন্তাতো অবশ্যই। চিন্তা করেই জোট না হয়ে ভোটে সমর্থন দেয়া হয়েছে।

—এ কেমন চিন্তা করলেন যে, একটি ইসলামী মুল্যবোধসম্পন্ন দলকে সমর্থন না দিয়ে বামদেরকেই দিলেন?
—হুম, সরল ভাবনায় এই প্রশ্ন তোলাই যায়। শুনুন! এখানে একটু গভীরের কিছু কথা বলি। প্রথমত সমর্থন মানে এই না যে, নিজস্বতাকে আপাদমস্তক পেকেট করে সঁপে দেয়া। ক্ষেত্রবিশেষে প্রশংসা যেমন, তেমন অগ্রহণীয়তায় সমালোচনা ও প্রতিবাদ করার পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়েই নির্বাচনকেন্দ্রীক এই সমর্থন। দেশীয় রাজনীতির প্রধান দলগুলোর কেউই পরিপূর্ণ ইসলামমুখী নয়। কেউই ক্ষমতায় গেলে ইসলামী শাসননীতিতে দেশ চালাবে না। রাজনৈতিক পরিবেশ বলছে এদেশে এখনো জেনারেল ধারার দলগুলোর কোনো না কোনো একটি দেশ ক্ষমতায় থাকবেই। সুতরাং বাস্তবমুখী চিন্তা হল, ইসলামের জন্য বড়সড় কিছু করতে হলে এই জেনারেল ধারার দলগুলোকে দিয়েই করাতে হবে। এজন্য ইসলামী শিক্ষার চলমান ভিত্তিগত কিছু উন্নয়ন ও ধর্মীয় অনেকগুলো বিষয়ের পুর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নকে সামনে রেখে স্বচ্ছধারার বেশ কয়েকটি ইসলামী দল মহাজোটের সমর্থন বা জয় কামনা করছেন। আবার অনেকে বিরোধী জোটে থেকে নিজেরা উঠে আসতে লড়ছেন ঠিক, কিন্তু শেষ ফলাফলটি মহাজোটের পক্ষে যাক, এই কামনাই করছেন।

-আচ্ছা, শুনিতো আপনাদের সমর্থনের সেই কয়েকটি কারণগুলো।
-জ্বী, বলছি। তবে শুধু অনুরোধ করছি আগেই বিষয়টির বিপরীত কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখবেন না। নিরপেক্ষ মেজাজে শুনে সুচিন্তা ও সুস্থজ্ঞানে মতামত দিবেন। যেহেতু প্রশ্নটা শুরুই হয়েছে বাম ধারা নিয়ে, সেহেতু বাম দল দিয়েই শুরু হউক। একাদশতম নির্বাচনে এখন আর একটি জোটের সাথে বাম বা ধর্মদ্রোহী দল নয়, প্রধান দু জোটেই আছে এখন অনেকগুলো বাম দল। মার্কামারা ধর্মদ্রোহীরাও আছে উভয়ের সাথে। আর এখন ইসলামী মুল্যবোধসম্পন্ন দলের সাথে জোটে থাকা ধর্মদ্রোহিরাই এদেশে ধর্মহীনতার বীজ বপন করেছিলেন। যার ফল আজকের ধর্মদ্রোহীতা আর ধর্মহীনতার এই মজবুত ভিত্তি। আবার, এরা কিন্তু জোটে যাচ্ছেতাই হালতে নয়, বরং চরম আহ্লাদেই জোটবদ্ধ আছেন।

—এরাতো গুটিকয়েক প্রগতিশীল ব্যক্তি। এদের দ্বারা তেমন সমস্যা হবে না।
—তাই! তাহলে স্মরণ করিয়ে দিই। বেশি না শুধু খুব পরিচিত তিনজনের কথা বলি। তারপর বলবেন উনারা প্রত্যেকে একজন করে প্রগতিশীল ব্যক্তি, না একেকজন একটি করে ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক একটি সংগঠনের চেয়েও বেশি কিছু।
বিশিষ্ট সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল মহোদয়। যার সিদ্ধহস্তেই স্বাধীন বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ইসলামহীনতার সুত্রপাত ঘটেছিল। সর্বসাধারণে খুব ঘৃণিত নারীপ্রাণ তাসলিমা, যাকে ১৯৯৪ ঈসায়ীতে গনআন্দোলনে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন সবাই। সেই বিশ্বকুখ্যাত তাসলিমার পক্ষের আইনজীবীও ছিলেন নতুন জোটের এই শীর্ষ মেনটর ড. কামাল। যিনি নিজের দল গনফোরাম নিয়ে এখানের সেরা নেতা। যার ব্যারিস্টার মেয়েটিও ২০০৯ সনে ফতোয়াকে অক্ষম বানাতে লড়ে পুরো বাংলাদেশটাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।

—উনিতো এখন বয়োবৃদ্ধ। মাথা তেমন কাজ করবে না।
—ওওহ! তাহলে “নাগরিক ঐক্য”? মাহমুদুর রহমান মান্না। যিনি ১৯৮০ সনে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আদর্শ সমাজতন্ত্র। যার মূলই হল ধর্মহীনতা। তিনিও কিন্তু ফ্রন্টের শীর্ষসেরাদের একজন। উল্লেখযোগ্য আরো একজনের কথা বলি। আ স ম আব্দুর রব। সংগঠন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)। এক কথায় দেশের চরম ইসলামদ্রোহী দল জাসদ একাংশের প্রধান। ইসলাম বিদ্বেষে জাসদ আর বাসদদের কৃতিত্ব কতটুকু তা চোখকান সামান্য খোলা রাখলেই জানার কথা। 

—না মানে, এরাতো কোনো বড় ধরনের ক্ষমতা ছাড়াই থাকবে। এদেরকে ঝেড়ে ফেলবে একসময়। 
—জ্বী, আমরাতো খুব সরলমনা, তাই খুব সহজেই বলে দিই এসব। কিন্তু ড. কামাল মহোদয়ের গনফোরাম ০৭ (সাত), মান্না ভাইয়ের নাগরিক ঐক্য ০৫ (চার), আর আ স ম আব্দুর রব জনাব পেয়েছেন ০৫ (পাঁচ) করে নির্বাচনী আসন। যেখানে মহাজোটে ধর্মহীন আদর্শের সব দল মিলেও দশ আসন পায় নাই, সেখান এত্তো এত্তো আসন নিয়ে নিশ্চয়ই তারা চুপটি মেরে থাকবেন না। জোটে উনাদের অন্তত ৩/৪ জন যোগ্যতা বলেই মন্ত্রীত্ব পাবে। আর মন্ত্রীত্ব পেয়ে উনারা নিজ আদর্শ ছেড়ে দিয়ে নিশ্চয় আবালীয় ভুমিকায় থাকবেন না। যদি এমনটা কেউ ভাবেন, সেটা কিন্তু বোকামির চেয়েও বেশি কিছু! সুতরাং, আপনার প্রশ্নমত বাম ধারা শুধু মহাজোটেই নয়, উভয়ের সাথেই আছে। বরং ওজনের পাল্লায় ঐক্যফ্রন্টের ঝুলিতে থাকা বামদের ওজনই তুলনামূলক বেশি।

—কথাটি কিছুটা ভাবার বটে। কিন্তু দলে তো ইসলামী দল অনেক আছে। যেমন, সংগঠিত দল  জামায়াতে ইসলামী। তারা এসব করতে দিবে না।
—হুম, তা বলা যায়। কিন্তু উনারা হলেন আহলে সুন্নাত ওয়ালজামায়াত কর্তৃক বর্জিত আদর্শের পতাকায় জানবাজ কাফেলা। যারা তাদের আদর্শের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ার আশংকার হেতু বাংলার ইসলামী শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক দুই ধারারই মাজা ভেঙে রেখেছিল এতোদিন। আলিয়া মাদরাসার স্বকীয়তা বজায় রেখে উচ্চশিক্ষা নিয়ন্ত্রনের জন্য স্বতন্ত্র ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ক্বউমি মাদরাসার সরকারি স্বীকৃতিকে তারাই প্রকাশ্যে আটকে রেখেছিল। জ্বি, বলতে পারেন তারা ইসলামি দল হয়ে কেন আটকে রাখবে? জবাব হল, এই দুই ধারা যদি স্বতন্ত্র আরবি বিশ্ববিদ্যালয় আর তাদের মানের স্বীকৃতি পেয়ে যায়, তাহলে তারা মান নিয়ে যোগ্যতা বলে একসময় রাষ্ট্রের বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ে প্রতিনিত্ব শুরু করবে। তখন আহলে সুন্নাত ওয়ালজামায়াত কর্তৃক বর্জিত সেই আদর্শের রাষ্ট্রীয় বিস্তার তাদের কাছে হয়ে যাবে হুমকির সম্মুখীন। তাছাড়া গত টার্মগুলোতে দেখা গেছে উনারা ইসলামের সঠিক আদর্শের বীজ বোপনের বদলে আহলে সুন্নাত কর্তৃক বর্জিত আদর্শের প্রচার প্রসারেই উনাদের মেধা আর ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়েছেন। অার সংস্কারের নামে ইসলামী সংস্কৃতিকে করেছেন কাটাছেঁড়া। অপরদিকে অন্যসকল ইসলামী দলের বাকি যে একদুজন থাকবেন, উনারাতো আগে ছিলেন শুধু জামায়াতে কোণঠাসা আর এখনতো সাথে ধর্মদ্রোহী, এখন উভয়ের আগ্রাসীপ্রভাবে উনারা আগাছার মত পড়ে রইবেন! তারপরও দলে স্বাভাবিকভাবেই ড. কামালদের প্রভাবের বিপরীতে ইসলাম পন্থীরা খুব কমই গুরুত্ব পাবেন।

ইয়ে মানে, এখানে একটু জটিলতা মনে হচ্ছে। এভাবে দেখলে আসলেই বিষয়টি কিছু আতংকের। কিন্তু সরকারের দুর্নীতি ও টাকা পাচারকে কি সমর্থন দিবেন?
কখনোই নয়! দুর্নীতি আর টাকা পাচারের জন্য অবশ্যই উনাদেরকে নিন্দাবাদ। এজন্যে উনাদের জবাবদিহিতা করা আবশ্যক। আফসোস, আমাদের রাষ্ট্রীয় সব অভিভাবকগণই পর্যাপ্ত প্রমাণে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত। সরকারীদলগুলোর দুর্নীতি আর আত্মসাতের পরিসংখ্যান দেখলে মনে হয় যেন আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জন্মগত অসদ্গুণের মজবুত আস্তানা বসানো।

তারপরও এসরকারের দুর্নীতি আর আত্মসাতের পরিমাণ অনেকগুণ বেশি। 
বিভিন্ন খবরে আর বক্তব্যে এমনিতো শুনছি। গত একদশকধরে যেহেতু এরাই ক্ষমতায়, তাই এদের দুর্নীতি পড়েছে চোখের সামনে। মনেও গেঁথে রয়েছে এসব খবর। কিন্তু ঐ যে বললাম, আমাদের মাঝে দুর্নীতি প্রবণতাটা যেন জন্মগতই। এই সরকারের দুর্নীতিতো নিকট অতীত, তাই এটা হৃদয়ে জ্বালাচ্ছে খুব। তবে বিরোধী সরকারের দুর্নীতি কিন্তু কম ছিল না। দুর্নীতির ধারণা সুচক প্রকাশকারী স্বীকৃত আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)'র দুর্নীতির পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশ ঈসায়ী ২০০১ থেকে ২০০৫ সন পর্যন্ত টানা পাঁচ বার মাত্র ০.৪ থেকে ১.৭ স্কোর মধ্যে থেকে দূর্নীতিতে সারাবিশ্বে প্রথম ছিল। অথচ, ২০১৭ সালে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ সোমালিয়ারও স্বচ্ছতার পরিমাণের স্কোর ছিল ০৯ (নয়)। আর এভাবে "দুর্নীতিতে নাম্বার ওয়ান" হওয়ার পিছনের কারণে অবশ্যই রাষ্ট্রীয় বাজেট ও জনতার টাকা আত্মসাৎ করাটাও উল্লেখযোগ্য কারণ ছিল। তাই এই আলোচনায় শুধু মহাজোটকেই দায়ী করাটা বিদ্বেষী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ হবে। বিরোধীরাও যে বড়ধরনের দুর্নীতি করেছেন তা প্রমাণে এই পরিসংখ্যানটাই যথেষ্ঠ।

আসলে সময়টাতো অনেক আগের, তাই ভুলে গিয়েছিলাম। কথা ঠিক, দুর্নীতি সব সময়ই কমবেশি হয়েছে। 
জ্বী ভাই, এই দুর্নীতিই হল আমাদের স্বাধীন বাংলার উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। তাই আমরা যেকোনো আলোচনায় শুধু নিজের সুবিধার হিসেবটা উপস্থাপন করা ঠিক না। এটা কিন্তু ভালোগুণও নয়। 

তারপরও ভাই সমর্থন এদিকে দিলে মনে হয় ভালো হত।
বললাম না, আসলে ইসলামের বৃহৎ স্বার্থ এবং চলমান সময় সাপেক্ষ বেশ কয়েকটা উন্নয়নের জন্য আমাদের এই সমর্থন। 

আসলে ঐ বিষয়গুলো তেমন জানি না। একটু খুলে বললে ভালো হত।
জ্বী, চলমান উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ হল- আলিয়া মাদরাসার উচ্চশিক্ষা নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বতন্ত্র ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এই সরকার প্রতিষ্ঠা করেছেন, আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনো শিক্ষক নিয়োগ, মূল ক্যাম্পাস ইত্যাদি অপরিহার্য্য বিষয়ের পুর্ণাঙ্গতা প্রক্রিয়াধীন। ধর্মভীরু বাংলার অবহেলিত আরেকশ্রেণী হল ইমাম ও মুয়াজ্জিন সমাজ। এই লক্ষলক্ষ অবহেলিত শ্রেনীর সরকারি বেতনভাতার কার্যক্রমটিরও প্রস্তুতি চলছে। বাংলাদেশে হাজার হাজার ইবতেদায়ি মাদরাসা (প্রাথমিক মাদরাসা) রয়েছে, কিন্তু তা বেসরকারিভাবে বেতনহীন অাছে। বর্তমান সরকার এখানেও সরকারি বেতনের প্রক্রিয়ার প্রায় শেষ পর্যায়ে। তাছাড়া আরেকটি মাদরাসা ধারা ক্বউমিরও সরকারি স্বীকৃতি দিয়েছেন। এটিও মানানসই নীতিমালা সহ পুর্ণাঙ্গতার জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যার বাস্তবায়ন ও সংস্কার জরুরি। আরো অনেক বিষয় আছে৷ এগুলো সবই এখন ধর্মভীরু সমাজের উন্নয়নে মৌলিক অধিকারের মত অপরিহার্য্য হয়ে পড়েছে। অতীতের চারদশকধরে সকলের কাছেই এসব বাস্তবায়নের জন্য জোরদাবি ছিল। কেউই সাড়া দেন নি। উল্লেখিত প্রত্যকটিই এদেশের মুসলমানদের জন্য মেগাপ্রকল্পস্বরূপ এবং প্রত্যেকটির ব্যয়ও কয়েকহাজার কোটি। পাশাপাশি বাস্তবায়নেও দীর্ঘমেয়াদি। এছাড়াও উন্নয়নের কিছু মেগাপ্রকল্প রয়েছে, যা কোটি কোটি মানুষের সুবিধার সাথে জড়িত। তাই অন্তত এসব বাস্তবায়নের জন্য মহাজোট আবার আসা প্রয়োজন। গত মেয়াদে উনারা মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণ, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা সহ এরকম বড় বড় বেশ কয়েকটি কাজ করেছেন। নির্বাচনের ক্ষেত্রে মহাজোটকে সমর্থনের পিছনে এগুলোই প্রধান কারণ।

এগুলোতো খুব জরুরি বিষয়। নিয়মে ছিল অনেক আগে বাস্তবায়ন হওয়ার। কিন্তু বিএনপি আসলেওতো এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন বা পুর্ণাঙ্গতা দিত।
হ্যা, বিষয়গুলো খুব জরুরি। এখানেই আমাদের গত সরকারগুলো বেখেয়ালি ছিলেন। আসলে বিএনপি কে সমর্থন না দেয়া আমাদের প্রতিহিংসামুলক নয়। আমাদের দেশের রাজনৈতিক পরিবেশের বিবেচনায় বাস্তবতার আলোকেই বিএনপি কে না দিয়ে মহাজোটকে সমর্থন দেয়া হয়েছে। বুঝলে বিষয়টি আপনিও স্বীকার করতে পারেন। আর বলছেন, বিএনপি গেলে এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন বা পুর্ণাঙ্গতা দিবে। হয়তো বিএনপি ক্ষমতায় আসলে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করবেন। কিন্ত আমাদের রাজনৈতিক বিরোধিতার নীতি এমন নয় যে, বিরোধী দলের ভালো কাজে বর্ধন আর খারাপ কাজকে বর্জন। বরং আমাদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বরূপ হল- কেউ যদি বসে প্রস্রাব করে, তাহলে বিরোধীদল এর বিপরীত দাড়িয়ে প্রস্তাব না করলে বিরোধীদলই হবে না। তাই আমাদের রাজনীতির চলমান গতি ও অতীতের ইতিহাস বলছে, সরকার পরিবর্তন হলে মুসলমানের প্রাণের এই প্রকল্পগুলো প্রতিহিংসার আগুনে পড়ে থমকে যেতে পারে। অপরদিকে এই সরকার থাকলে স্বভাবতই এসবের পুর্ণাঙ্গতা পাওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে বেশী। প্রধানত দুই কারণ আছে এখানে, এক- এইসব প্রকল্পের শুরু উনাদের হাতে, দুই- ইসলাম মনার বিবেচনায় অতীতের আওয়ামী সরকারের চেয়ে বর্তমান সরকার অনেকটা ইসলাম মনা এবং কথাকাজে আলিমদের সাথে বেশি সম্পৃত্ত।

আসলে বিষয়গুলো আপনাদের মত করে ভাবি নি। 
জ্বী, আপনি যেভাবে দোষ দিয়ে বললেন, সেভাবে বলতে হলে এভাবেই ভেবে বলা উচিত।

তবে, বর্তমান সরকারের জুলুুম আর নেতাদের অতিমাত্রায় ক্ষমতার অপব্যবহার আপামর জনতাকে একেবারে অতিষ্ঠ করে দিয়েছে। এরা যদি আবার যায়, তাহলে সর্ব্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন সকল নেতাকর্মীর বিভিন্ন জুলুমবাজির জন্য টিকে থাকা দায় হবে।
আসলে এটাই যেন আমজনতার কপালের লিখন। যে বাহাদুরই মসনদে যান, তিনি সাধারণের কাঁধে ভার দিয়ে তার হরিণ শিকার করেন। যুগেযুগে জনসাধারণরা এদেশের নেতাদের কাছ থেকে শুধু নির্বাচনের কয়েকদিন আগেই একটু ভদ্রাচরণ পান। এছাড়া সৌজন্যমুলক আচরণ পাওয়াটাও হল জনতার চান কপালের মত। জনসাধারণ রাজনীতির রেষারেষিতে শুধু পোড়তেই থাকবেন।
জ্বী, এটা ঠিক। সরকারি দলের কর্মীর দ্বারা অনেক নির্যাতন হয়েছে। বিরোধী দলের প্রতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার যে ঘৃণ্য সংস্কৃতি বিড়াজিত, তা এই সরকারও খুব দেখিয়েছেন। এই প্রতিহিংসার ভুক্তভোগী আবার নিজ দলের কর্মী হয়েছে, এমন প্রমাণও ঢের। শুধু তাই নয়, সরকারি দলের কর্মীরা ক্ষমতার অপব্যবহার আর দলীয় পাওয়ারকে পুঁজি করে আমজনতাকেও অনেক জ্বালিয়েছেন। এই ঘৃণ্য সংস্কৃতি বিএনপিও কমবেশি দেখিয়েছেন। যার স্বাক্ষী জাতীয় সেসময়ের পত্রিকাগুলো। এই সরকারের জুলুমবাজি খুব ফলাও করে বলতে পারার একটি কারণ হল বর্তমান তথ্য প্রবাহের সহজলভ্যতা। এর সুবিধায় আধুনিক যোগাযোগমাধ্যম ও মিডিয়ার হিড়িকে সংবাদগুলো তুলনামূলক তাড়াতাড়ি এবং শহর থেকে গ্রামের সবার কাছে পৌঁছে যায়। কিন্তু একটি জিনিস সামান্য খেয়াল করেন, একযুগ পরে আওয়ামীলীগের ক্ষমতার এই সময়ে জনসংখ্যা বেড়েছে ৪-৫ কোটি এবং আওয়ামীলীগের ক্ষমতায় থাকার সময়টাও ২০০১ সনের সময় থেকে দ্বিগুণ। তাই স্বাভাবিকভাবেই পরিসংখ্যানে সবকিছুই বেশি বা ডাবল আসবেই। আবার সে সময়ের তুলনায় এখন মিডিয়াও পৌঁছে গেছে সবার ঘরে এবং পকেটে। সংবাদের উৎসও হয়েছে অনেকগুন বেশি। এজন্য এখন সব খবর সবার কাছে খুব দ্রুতই পৌঁছাচ্ছে। মূল কথা এটা নয় যে, সরকার জুলুবমাজি কম করছে। রবং কথা হচ্ছে সরকারি দলগুলোর জুলুমবাজি হল আমাদের রাজনীতির একটি নোংরা সংস্কৃতি। যার আমল সব দলই করে আসছেন। তবে এবছর জুলুমবাজি থেকে দূরে থাকার হুঁশিয়ারি খুব জোড়ালোভাবেই দেয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন সকলেই এজন্য জাতি সহ আমাদের উচ্চ পর্যায়ের সবার কাছে লজ্জিত হয়ে বিনীত ক্ষমা চেয়েছেন। উনারা সব ভুল থেকে দূরে থাকার ওয়াদা করেছেন। তারপরও যদি এই সংস্কৃতি থেকে জাতিকে তারা মুক্তি না দেন, তাহলে এটা হবে জাতির সাথে বেঈমানী। আর এমন হলে আল-ইসলাহ  উনাদের প্রতিবাদ করার পূর্ণ অধিকার রাখে। অতীতেও প্রতিবাদ হয়েছিল। আগামীতেও সবধরনের দাবিপুরণ আর সবঅন্যায়ের সরাসরি প্রতিবাদ করার পূর্ণ অধিকার দিয়েই উনারা সমর্থন চেয়েছেন। আল-ইসলাহ সভাপতি আল্লামা হুসামুদ্দীন চৌধুরী সবসময়ই বলছেন, নির্বাচনী এই সমর্থন আল-ইসলাহ ক্ষমতা লাভ, স্বার্থ হাসিল বা সংসদে যাওয়ার জন্যে দেয় নাই। এজন্য যে কোনো প্রতিবাদে আমাদের পিছুটান নেই৷ কারণ আমাদের এই সমর্থন নিজেরা স্বার্থ হাসিল করেছি এজন্য নয়, দেশ ও ধর্মের কল্যাণের শর্তেই এই সমর্থন দিয়েছি।

হুম, আপনার কথা শুনে বুঝা গেল আল-ইসলাহ'র নির্বাচনী এই সমর্থন আসলেই ভিন্ন দৃষ্টিতে দেয়া হয়েছে। আর আমাদের রাজনৈতিক পরিবেশ, সার্বিক বিবেচনায় নিরপেক্ষভাবে দেখলে সমর্থন দেয়াটা মনে হয় না খারাপ।
বুঝার জন্য ধন্যবাদ। অামাদের নীতিনির্ধারকদের সমর্থনের পেছনের কারণ কিন্তু এগুলোই। 

কিন্তু আমাদের বিএনপি'র অনেক মানুষ আছেন যারা এ মাসলাকের জন্য নিবেদিত প্রাণ। উনাদের সাথে মনোমালিন্য হবে?
আগেই বলেছি, যারা আল-ইসলাহ'র সমর্থনের মূল উদ্দেশ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি জানবেন, উনারা বুঝবেন। আসলে বিএনপি'কে সমর্থন না দেয়া রাজনীতির প্রচলিত ধারার মত প্রতিহিংসামূলক নয়। এখানে মনোমালিন্য হওয়ার কারণ দেখছি না। সমর্থন দেয়ার পরে উচু পর্যায়ের প্রায় সকলকেই দেখেছি আগেরমত স্বাভাবিকভাবেই ছোটো ছাহেবের সাথে সাক্ষাত করছেন। উনারা জ্ঞানী লোক, তাই বিষয়টি বুঝেন। তাছাড়া জামায়াতের সাথে থাকায় উনাদের কেন্দ্র থেকে আমাদেরকে গুরুত্ব না দেয়া বা ধর্মদ্রোহিদের বড় বড় লিডারদের সাথে যুক্ত হওয়ায় আমরাওতো উনাদের সাথে আগের সম্পর্ককে ছিন্ন করি নি।  নির্বাচনে এটা সম্পুর্ণ আলাদা একটি বিষয় ও দৃষ্টিভঙ্গি। এজন্য আগের সম্পর্কে কোনো টানাপোড়েন আসার প্রশ্নই আসে না।

জ্বী, ধন্যবাদ বিষয়টি নরমসুরে বুঝিয়ে বলায়। আমি কিন্তু যথেষ্ট মাথাগরম করেই কথা বলছিলাম। 
জ্বী, আপনাকেও ধন্যবাদ শুনা ও বুঝার জন্য। 

তারপরও পরিবর্তন হলে মনে হয় ভালো হত। 
ভাই, আসলে হয়তো নামক অনিশ্চিত সম্ভাবনার উপর ঠেলে দিয়ে মুসলমানদের বৃহৎ স্বার্থ পূরণকে আর পিছনে নিতে চাচ্ছি না। যেহেতু উনারা প্রায় সব দাবির অনেকগুলো বাস্তবায়ন করেছেন এবং অনেকগুলো বাস্তবায়নের পথেই আছেন, তাই আরেকটি সুযোগ দিয়েই দেখি মহাজোটকে। উনাদের দ্বারা সম্পাদনের সম্ভাবনাটাও বেশি রয়েছে।

আচ্ছা ভাই। মনে কিছু নিবেন না এসব কথায়।
না না, ঠিক আছে। আপনার সাথে কথা বলতে পারায় ভালো লাগলো।

ওকে, দুয়া চাই ভাই।
জ্বী, আমিও দুয়া চাই, দুয়া রইলো। একটু তাড়া আছে। যাই, আল্লাহ্ হাফিজ!

জ্বী, আল্লাহ্ হাফিজ!


তারিখ: ২৮/১২/২০১৮ ঈসায়ি

পঠিত : ২৪৬৯ বার

মন্তব্য: ০