Alapon

আমার বৃষ্টিবিলাস...

গতকাল দুপুরে আয়রন করা পাঞ্জাবীটা পরে, চুলগুলো পরিপাটি করে, পাঞ্জাবীর কোনা দিয়ে চশমা পরিস্কার করে, নিজের ভিতর একটা শুভ্র শুভ্র ভাব নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। উদ্দেশ্য, চেয়ে নেওয়া দাওয়াত খেতে যাবো!

ইদানিং চেয়ে নিয়ে দাওয়াত খাওয়ার একটা বদ বা ভালো অভ্যাস গড়ে উঠেছে। এক বা দুবেলা নিজের হাতে রান্না করে খাওয়ার যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাওয়ার পন্থা হিসেবে, এই পথ বেছে নেওয়া। তবে সবার কাছে দাওয়াত চাই না। সবার সাথে মিশতেও পারি না। যাদের সাথে মিশি তাদের সাথে সম্পর্কটা মাখামাখি পর্যায়ের। তাই তাদের কাছে দাওয়াত চেয়ে নিতে বিন্দু পরিমাণ লজ্জাও করে না!

যাইহোক, ইনোসেন্ট একটা ভাব নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লাম। কিন্তু প্রকৃতির হয়তো আমার ইনোসেন্ট লুক পছন্দ হয়নি। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হঠাৎ প্রবল বৃষ্টিতে রূপ নিল। রাস্তার লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতে শুরু করেছে। শরীরে জড়িয়ে থাকা পাঞ্জাবীটার দিকে তাকিয়ে বড় মায়া হলো। কত কষ্ট করে ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিষ্কার করেছি। এখন বৃষ্টিতে ভিজলে এ পাঞ্জাবী পরিষ্কার করার আগে দ্বিতীয়বার পরা যাবে কিনা জানি না।

এই কষ্টের চেয়ে আমার বৃষ্টির কষ্টটাকে বড় মনে হলো। বেচারাকে বড় অসহায় মনে হল। আকাশে গুড়ুম গুড়ুম শব্দ তুলে ঝুম করে বৃষ্টি নামছে। অথচ এমন একজন ব্যক্তিও নেই, যে হাসি হাসি মুখ করে আকাশের পানে মুখ তুলে বৃষ্টিতে ভিজবে! এতো রীতিমত বৃষ্টিকে অপমান করা হচ্ছে। বৃষ্টির অপমান সইতে না পেরে ভিজতে শুরু করলাম।

খয়েরি কালারের পাঞ্জাবী পরা একটা ছেলে ঝুম বৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, দৃশ্যটা মনে হয় খুব একটা স্বাভাবিক নয়। হঠাৎই একটা বাস আমার পাশে এসে কড়া ব্রেক কসল। ড্রাইভার সাহেব মাথা বের করে বলল, ‘ভাইজান, আপনারে দেইখ্যা বিরাট হিংসা হইতাছে। আমারও বৃষ্টি ভিজবার মন চাইতাছে। কিন্তু গাড়ি চালান বাদ দিয়া ভিজবার পারতাছি না। আপনি ভিজেন, আমার হয়েও একটু ভিজেন।’

আমি ভিজতেছি। তবে তার হয়ে ভিজেছি কিনা আমি জানি না। বৃষ্টিতে ভিজলে আমার আব্বার কথা মনে হয়। এক সন্ধ্যায় আব্বার সঙ্গে কোথায় যেন গিয়েছিলাম। কাজ করে ফিরবো এমন সময় ঝুম করে বৃষ্টি শুরু হলো। এমন বৃষ্টি যে, তা আর থামার নাম নেই।

আব্বাকে বললাম- ‘জানেন আব্বা, বৃষ্টিতে ভেজা বিরাট আনন্দের একটা বিষয়!’
আব্বাজান- ‘প্রতিক্রিয়াহীণ ভঙ্গিতে বললেন, জানবো না কেন! আমার শৈশব ছিল না, শৈশবে আমিও বৃষ্টিতে ভিজেছি এবং আনন্দ পেয়েছি।’
তখন আব্বাকে বললাম- ‘বাইকে বৃষ্টিতে ভেজাটা বিশেষ আনন্দের। চলেন আমরা ভিজতে ভিজতে বাড়ির দিকে রওয়ানা হই।’
আব্বাজান মৃদু আপত্তি করে বললেন- কিন্তু যদি জ্বর আসে!
তখন বললাম- জ্বর? এই আনন্দের কাছে জ্বর কোনো বিষয় হল!
আব্বা খানিকটা কনিফিউজড হয়ে পড়লেন আর আমি এর অপেক্ষাতেই ছিলাম।

তারপর আমরা বাপ-বেটা এক রোমাঞ্চকর বাইক যাত্রা করলাম। বৃষ্টিতে ভিজে কাঁপতে-কাঁপতে অবশেষে বাড়ির সদর দরজায় পৌঁছলাম। আব্বাকে জিজ্ঞেস করলাম- কেমন আনন্দ পেলেন?
আব্বা বললেন- বিশেষ আনন্দ!
তারপর আব্বা দাঁত দুপাটি একসাথে করে কাঁপুনির শব্দ তুলে বললেন- কিন্তু যদি জ্বর আসে। তাহলে তোমার ‘বিশেষ আনন্দের’ খবর করে দেবো!

অতঃপর আব্বাজান তিনদিন জ্বরে ভোগার পর বললেন- তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভেজাটা সত্যিই আনন্দের ছিল...কিন্তু তোমার সাথে আর ভেজা যাবে না!

পঠিত : ৯৮৪ বার

মন্তব্য: ০