Alapon

জাভাদ জরিফ-ইরানের ইন্ডেস্পিন্সেবল পররাষ্ট্রমন্ত্রী...

একটা দেশের কেবল টাকা থাকলেই হয় না, মিলিটারি পাওয়ার থাকলেই হয় না, সাথে থাকতে হয় তুখোড় এডমিনিস্ট্রেশান, তুখোড় কিছু ডিপ্লোম্যাট আর দেশটা চারিদিক থেকে শত্রু বেষ্টিত থাকলে সাথে লাগে কিছু ডেডিকেটেড, বুদ্ধিমান আর মারাত্মক আর্মি জেনারেলস।

এই মুহূর্তে ইরানকে কঠিন কঠিন সব স্যাঙ্কশান দেয়ার পরেও কেবল দুইটা লোকের কারনে ইরানকে যেভাবে থামানো যাবে বলে আমেরিকা-ইসরায়েল-সৌদি আরব-আরব আমিরাত ভেবেছিল তা সম্ভব হচ্ছে না।

আর এই দুইজন হলো ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জাভাদ জরিফ, আর কুডস ফোর্সের মেজর জেনারেল কাসিম সুলেমানি। এরা দুইজন হলো ইরানের সবচেয়ে মারাত্মক অস্ত্র। একজন কুটনিতির ফিল্ডে আর একজন ইরাক-সিরিয়ার যুদ্ধ ক্ষেত্রে ইরানের ঝান্ডা সমুন্নত রেখেছেন। আর এই দুইজনকেই আমেরিকা ব্যক্তিগত ভাবে স্যাঙ্কশানের আওতায় রেখেছে।

জাভাদ জরিফ হচ্ছেন সেই পররাষ্ট্র মন্ত্রী যিনি জেসিপিওএ সাকসেস্ফুলি নেগোশিয়েট করে ইরানের উপরে করা বিগত ২১ বছরের আরপিত মিলিটারি, ব্যাংকিং, এনার্জি ইত্যাদি খাতে আমেরিকা আর ইওরোপিয়ান দেশগুলোর আরোপ করা স্যাঙ্কশান/রেস্ট্রিকশান রিমুভ করিয়ে ফের ইরানের অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়েছিল। ইরান ২০১৬ সাল থেকে ফের ওপেন মার্কেটে তেল বিক্রি করছিল, তাদের ফ্রোজেন বিলিয়ন ডলার দেশে বিভিন্ন ভাবে ফিরিয়ে আনছিল। সবচেয়ে বড় কথা আমেরিকা তখন ইসরায়েল-সৌদি আরব- আরব আমিরাতের বিপক্ষে গিয়ে ইরানের সাথে ডিল করেছিল।

ট্রাম্প ক্ষমতায় বসে তার ফরেইন পলিসি এডভাইজার জন বল্টনের নিয়গের তিন মাসের মাথায় আমেরিকার সাথে জেসিপিওএ এর চুক্তি বাতিল করেন। একে একে বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকিং, বানিজ্য (তেল) আর ব্যক্তিগত স্যাঙ্কশান দিয়ে ইরানের গলা চিপে ধরেন। শুরু হয় স্পাই বিহাইন্ড দ্যা স্পি গেইম। কারন ইরান ঠিকই তেল বিক্রি অব্যহত রাখে, যদিও নাম্বার অফ ব্যারেল পার ডে বিক্রি বহুলাংশে কমে যায়। কিন্তু ইরানের ভিতর সরকার চালানোর এনাফ টাকা ঢুকছে। এর মাঝে ব্রিটেন ইরানের তেলবাহী জাহাজ আটক করলে ইরানও ব্রিটেনের জাহাজ আতক করে ব্রিটেনের হাত টূইস্ট করে সেই জাহাজ ছাড়িয়ে আনে। আমেরিকা ইরানের ড্রোন ফেলে দিলে ইরানও আমেরিকার ড্রোন ফেলে দেয়। বুঝাই যাচ্ছে সুলেমানি আর জরিফের কোয়ার্ডেনেটেড গেইম খুব মারাত্মক লেভেলের।

এরই মধ্যে জারিফ আজ এই দেশে কাল সেই দেশে দৌড় ঝাপ করে ঠিকই অন্যান্য দেশের সাথে বিশেষ করে ফ্রান্সের সাথে তাদের সখ্যতা বাড়িয়ে ফ্রেঞ্চ প্রেসিডেন্ট ম্যাকরনকে হাত করে আন্ডার চ্যানেল ডিপ্লোম্যাসি করে ট্রাম্পকে বাগে আনার চেষ্টা করছে। গত মাসে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত হয় জি-৭ বৈঠক, যাতে সবার অগোচরে জারিফ উপস্থিত হয়ে ম্যাকরনের সাথে বৈঠক করেন, আর এখন ম্যাকরন চেষ্টা করছে ইরানের প্রেসিডেন্ট রূহানীর সাথে ট্র্যাম্পের বৈঠকের।

গতকাল মার্কিন সেক্রেটারি অফ দ্যা স্টেট মাইক পম্পেও নিউজ কনফারেন্সে বলেছে কোন পূর্ব শর্ত ছাড়াই ট্রাম্প রূহানীর সাথে বৈঠকে রাজি। যদিও জাভেদ জরিফ চাচ্ছে আমেরিকা নতুন করে আরপিত সকল আমেরিকান স্যাঙ্কশান বৈঠকের আগে তুলে নিক। হয়ত আমেরিকা তুলে নিবেও কারন আমেরিকান ট্রেজারি সেক্রেটারি সেই হিন্টস গতকাল দিয়েছে। ইরান যদি তার উপর আরপ করা স্যানকশান হটাতে পারে কৃতিত্ব পুরাটাই জাভাদ জরিফের।

এখন ইসরায়েলের পেটে গরম পানি পড়েছে, গতকয়েকদিন ইসরায়েলি নিউজ মিডিয়ায় কেবল কিভাবে ট্রাম্প ইসরায়েলকে আন্ডারমাইন্ড করছে সেই খবর। তাতে বূঝা যাচ্ছে জারিফ হ্যাজ মেইড হিউজ ইনরোড টু ট্রাম্প, আর নাতানিয়াহু সেটা আটকাতে পারছে না। তবে মেইক নো মিস্টেক সিচুয়েশান যে কোন সময় চেঞ্জ হয়ে যেতে পারে, কারন ইসরায়েলি লবি ট্রাম্প-রুহানির বৈঠক বাঞ্চালের জন্য সুপার ডুপার একটিভ।

জাভাদ জরিফ কেবল ট্রাম্প কিংবা ম্যাকরনের দিকে তাকিয়ে বসে নেই। সম্প্রতি চিনের সাথে ইরান এক বিশাল ( $২৪০ বিলিয়ন ডলারের?) বানিজ্য চুক্তি করেছে। ইয়োরোপের সাথে এখনও অনেক বানিজ্য চুক্তি বিদ্যমান যার পেমেন্ট সরাসরি ব্যাঙ্ক টু ব্যাঙ্ক হচ্ছে না। এই সব জরিফের কৃতিত্ব।

জাভাদ জরিফ এতটাই তুখোড় আর সাকসেসফুল যে গত ফেব্রুয়ারি মাসে জরিফকে বাদ দিয়ে আয়াতোল্লাহ খামেনি, প্রেসিডেন্ট রুহানি আর মেজর জেনারেল কাসিম সুলেমানি তেহরানে সিরিয়ান প্রেসিডেন্ট আসাদের সাথে বৈঠক করলে জরিফ ইন্সটাগ্রামে তার রেজিগ্নেশান পোস্ট করে। যা সুলেমানি কোয়ারডিনেশানের অভাব বলে স্টেটমেন্ট দেন আর প্রেসিডেন্ট রুহানি প্রত্যাখান করলে জারিফ ফের একই পদে কাজ বহাল রাখেন। অর্থাৎ রুহানি ডিডিন্ট এক্সেপ্ট হিজ রেজিগনেশান এন্ড জরিফ উইথড্রু হিজ রেজিগ্নেশান এন্ড রিজিউম হিজ ওয়ার্ক এজ ইউজুয়াল।


অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে জাভাদ জরিফ ইরানের একজন ইন্ডিস্পেন্সেবল এসেট। এন্ড দ্যাট হি ইজ। যাকে নাতানিয়াহু-বল্টন-পম্পেও-এমবিএস- এমবিজেড সবাই মিলেও সাইডলাইন করতে পারছে না।



লিখেছেন- sabina ahmed

পঠিত : ১৩০৮ বার

মন্তব্য: ০