Alapon

মুসলিম সমাজের মাঝে আদর্শিক দ্বন্দ এবং কিছু কথা...

যে বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করে এসেছি সব সময় তা ছিল মুসলিম সমাজের মাঝে আদর্শিক দ্বন্দ্ব। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করতাম শিয়া সুন্নি দ্বন্দ্বকে। যখন ক্লাস ৮ এ পড়ি তখন প্রায়ই এ নিয়ে বন্দুবান্ধবদের সাথে ঝগড়া লাগত। আমার দাবী ছিল তাদের কিছু কিছু বিচ্যুতি থাকলেও তারাওতো মুসলিম, ইরানের ৭৯ এর আন্দোলন সমন্ধে লিখাপড়া করলে যে কেও বলতে বাধ্য হবে এ ছিল সত্যই এক ইসলামী আন্দোলনের বাস্তব রূপ। বলতে বাধা নেই যখন থেকে বুঝতে শিখেছি আরাম প্রিয় মুসলিম জনতার চাইতে আন্দোলন মূখর মুসলিম সমাজকে বেশি ভালবেসেছি, বেশি মুহাব্বত করেছি, তাদের নিয়ে গর্ব করেছি।

ইতিহাসের গভির পাঠই আমার এ ভালবাসায় চীড় ধরিয়েছে, যত গভীরে ঢুকেছি ততই ভালবাসা একপ্রকার ঘৃণায় রুপান্তরিত হয়েছে। আহমেদি নেজাদকে আমার খুবই ভাল লাগত তার পক্ষে কথা বলায় কত বন্ধুর সাথে ঝগড়া ও বন্ধুত্বের ছাড়াছাড়ি হয়েছে তার ইয়ত্বা নেই। কি পেয়েছি সব শেষে? সত্য বলার অপরাধে শিয়াদের গালাগাল ছাড়া কপালে তেমন কিছুই ঝুটেনি। এখনো মনে আছে আরব বসন্ত থেকে শুরু করে সিরিয়ার সংকট পর্যন্ত প্রতিটি ঘটনা পর্যবেক্ষন করা হয়েছে। সকল দেশের শিক্ষিত সমাজের কিছু গ্রুপ ছিল যেখানে শিয়া সুন্নি সকলেই নিজ নিজ মতামত পেশ করেছে, এমনকি ইরান ও পাকিস্তানের অনেক শিয়ার সাথে জ্ঞানগত সখ্যতা গড়ে উঠেছিল কিন্তু আমি যে আমার যৌক্তিক বিশ্বাসে অনড়। যদি ফেইসবুক সেই গ্রুপ ও আইডিগুলোকে এভাবে বারবার খেয়ে না দিত তবে হয়ত আমার জ্ঞান আজ আরও সমৃদ্ধ ও পরিপূর্ন অবস্থানে থাকত।

মজার বিষয় হল যে প্রশ্নগুলো শিয়াদের করেছি তারা অনেক কিছু ত্যাড়ামি করেছে আবার অনেক কিছুই মেনে নিয়েছে যৌক্তিক বলে, সেই একই প্রশ্নগুলো করায় ইরানে কর্মরত বাংলাদেশের একভাইয়ের রিয়েকশন ছিল আমি হচ্ছি বলদের বলদ, জ্ঞান বলতে কিচ্ছু নেই, মূর্খের ঢেকি, না জেনেই শুধু লাফাই আর সর্বশেষ যে প্রশ্ন করেছিলাম তার উত্তরতো পাইনি তবে ফ্রি ব্লক ও খেতাবগুলো পেয়েছি।

যাই হোক মাথায় কিছু থাকুক বা না থাকুক এবার আসল প্রশ্নে আসি, ইদানিং ফেবুতে শিয়া প্রেমিদের ব্যাপক আনাগোনা বেড়ে গেছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে ইরানের শিয়াদের চাইতেও এরা বেশি আলী রাঃ প্রেমি হয়ে গেছে। পাকিস্তানের একজনের সাথে পরিচয় ছিল যে নানীর দিক দিয়ে শিয়া আবার দাদার দিক দিয়ে সুন্নী। তাকে মজা করে প্রশ্ন করেছিলাম এই অসম মিলন সম্ভব হল কি করে? সে বলেছিল ছোট থাকতেই আমি মাকে হারিয়েছি, বেড়ে উঠেছি নানির কোলে এবং আজকে যে ইসলাম আমি মানি তা নানির কাছ থেকেই শিক্ষা পেয়েছি তবে নানি যা শুধু নামেই শিয়া কিন্তু কাজে কোনদিন শিয়া রসম রেওয়াজ কিছুই পালন করতে দেখিনি। প্রশ্ন করেছিলাম কেন? তিনি আমাকে নানির কাছ থেকে শিক্ষা পাওয়া শিয়াদের বহুমাত্রিক ভুল সমন্ধে বলেছেন এও বলেছেন নানির এহেন আচরণের কারণে মামারাও নানিকে দেখতে পারত না ফলে মামাবাড়ির সাথে সম্পর্ক একপ্রাকার বচ্ছিন্নই বলা চলে।

যাই হোক মূল কথায় আসি, শিয়াইজম কি? কি করে তার উতপত্তি? কেন তারা এমন করে? আলী রাঃ নিয়ে কেন এত মাতামাতি? এ সব প্রশ্নের উত্তর একবারে লিখা সম্ভব নয়। তবে গাদিরে খোম বলেন, কারবালা বলেন, শিয়াদের কালিমা বলেন কিংবা নামাযের স্টাইল বলেন। পূর্বে শিয়াদের একটা প্রশ্নই বেশি করেছি। আচ্ছা তোমরা যা দাবী কর তা কি তোমাদের প্রথম ইমাম আলী রাঃ কখনো দাবী করেছেন? উত্তর না। হাসান রাঃ দাবী করেছেন? না। হোসাইন রাঃ দাবী করেছেন? না। জয়নুল আবেদিন রঃ দাবী করেছেন? না। জাফর সাদিক রহঃ তোমাদের এ শিক্ষাগুলো দিয়েছেন? তাত্বিক ভাবে উত্তর একটাই না। তাহলে কই পাইছ এই শিক্ষাগুলো? এ উত্তর তারা তেনা প্যাচায়। কোর'আনের দলিল, হাদিসের দলিল দিতে চায় কিন্তু যাদের নাম বললাম তাদের সরাসরি কোন দাবী কিংবা রেফারেন্স দেয়না। দিতে চায়না। তাহলে দেখা যাচ্ছে এই সম্মানিত সাহাবিগন এবং তাদের উত্তরসুরীদের থেকেও শিয়ারা কোর'আন হাদিসের মর্মার্থ বেশি বুঝেছে। এ কারণেই আহলে বায়াত নিয়ে উনারা যে দাবী করেন নি কিংবা তা নিয়ে অযথা ক্যাচাল করেন নি ইহা তাদের মূখ্য বিষয়। ইমামমতের দায়িত্ব আলী রাঃ কে না দিয়ে আবু বকর রাঃ, উমর রাঃ, উসমান রাঃ এমনকি সমগ্র মুসলিম উম্মাহ ভুল করেছিল কিন্তু এমন দাবী আলী রাঃ কিংবা হাসান ও হোসাইন রাঃ কখনো করেছেন মর্মে শিয়া রেফারেন্সও খুজে পাওয়া যায়না। তাদের এমন করার কারণ কি? লিগেছি অব আব্দুল্লাহ ইবনে সাবাহ যাকে আলী রাঃ নিজে এ বাড়াবাড়ির কারণে নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন। এবং বলেছেন- তা শিয়া সুত্র ধরেই দিচ্ছি-

ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল 'ফাজায়েলে সাহাবা' কিতাবে ইমাম আলী থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন,
হজরত আলী বলেন, "একদল লোক আমাকে বাড়াবাড়ি রকমের মহব্বত করার কারনে জাহান্নামে যাবে । আরেকদল লোক আমার প্রতি বিদ্বেষ রাখার কারনে জাহান্নামে যাবে।"

হাদিসের পরের অংশটুকু নিয়ে আমাদের শিয়া ভাই বোনেরা পারলেত কিবোর্ড ভেঙ্গে ফেলেন কিন্তু আগের অংশটা নিয়ে তেমন মাথা ঘামান না। সেই সাথে যার প্রতি এত দরদ তার বা তাদের আমলকৃত আমলকেও শিয়া সম্প্রদায় ছুড়ি মারতে ছাড়েনি। ধিরে ধিরে এক এক করে বলব। ভেবেছিলাম কখনো এই টপিক নিয়ে মুখ খুলব না কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আর বন্ধ রাখার উপায় নেই। নাইট টেম্পলারের সাথে সাথে এ সিরিজও এখন থেকে চলবে।



সংগৃহিত...

পঠিত : ৭৯৮ বার

মন্তব্য: ০