Alapon

বাঙালির লজ্জা নেই...

বেশীর ভাগ বাঙ্গালি জীবনে কোনদিন অন্য দেশে যাননি। যারা ঘুরতে গিয়েছেন তারা অনেকেই খুব প্রিভিলেজড। ঘুরতে গেলে আপনি উপর থেকে একটা সাধারণ ইম্প্রেশন নিতে পারবেন কিন্ত এটা অবশ্যই একটা ভিন্ন দেশে গিয়ে দীর্ঘ সময়ে থাকার মত অভিজ্ঞ্রতা হবে না। বিদেশে পড়তে গিয়েছেন এমন ছাত্রছাত্রীদের দিকে খেয়াল করলে দেখবেন- আরেকটা দেশী ছাত্র, বড় ভাই-বন্ধুর সাথে মিলেমিশে থাকে। নিজের পরিচিত দেশ ছেড়ে অন্য ভাষাভাষীদের সাথে অন্য কালচারে একেবারে বিদেশী হয়ে থাকার অভিজ্ঞতা খুব বেশী মানুষের নাই।

বাঙ্গালির চোখ দিয়ে যদি আপনি রোহিঙ্গাদেরকে দেখেন, দেখবেন এরা আমাদের খায়, আমাদের পড়ে। একবার আশ্রয় নিয়েছে এরপর আর ফিরে যাওয়ার নাম নেই। পোলাও কোরমা খেয়ে শুয়ে বসে সময় কাটাচ্ছে- অনেকটা বাসার মেহমানের মত। আর সময়ে সময়ে কেবল সন্তান জন্ম দিচ্ছে।

আপনি যদি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গিয়ে (যেমন ইতালি) বাঙ্গালি ভাইদের কষ্ট দেখেন- আপনার মায়া লাগবে। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে অথবা কনকনে ঠাণ্ডায় ফুটপাতে দাঁড়িয়ে খেলনার সামগ্রী বিক্রি করছে এরকম বাঙ্গালি আছে হাজার হাজার। সময়ে সময়ে পুলিশ তাড়া করলে সব কিছু একটা কাপড়ে মুড়ে ছুটে বেড়ায়। কোন রকম প্রাণ নিয়ে ছুটে পালানো। এক রুমে গাদাগাদি করে থাকা ত খুবই সাধারণ ব্যাপার। এরকম প্রচুর বাঙ্গালি আছে যারা সারা বছর সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে আর বছরে তিন/চার দিন ছুটি কাটায়। নিজেদের জাত ভাইদের এই অবস্থা বেশীর ভাগ বাঙ্গালির দেখার সুযোগ হয় নি জীবনে।

আমেরিকান বিখ্যাত পরিচালক কেন বার্নস এর ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে বানানো একটা বড় ডকু সিরিজ আছে।

সেখানে একজন ভিয়েতনামিজ লি কং হুয়ান বলছেন- " আমি অনেক আমেরিকানদেরকে মরতে দেখেছি। আমি এদের ভাষা জানি না। কিন্ত আমি দেখেছি এদের আবেগ অনুভূতি আমাদের মতই। কেউ মারা গেলে সবাই মৃত লাশটিকে ধরাধরি করে নিয়ে যায়। সবাই মৃত মানুষটির শোকে কাতর হয়, একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে। এরকম একটা দৃশ্য দেখে আমি ভাবি- আবেগ অনভূতির বিচারে আমেরিকানরা তো ভিয়েতনামিজদের মতই।"

'বেন্ড অব ব্রাদারস' এ একজন আমেরিকান সৈন্য ভাবছে - 'জার্মান সৈন্যরা যুদ্ধ করছে কারণ যুদ্ধ করাই তাদের কাজ, ঠিক যেমন একজন আমেরিকান সৈন্য'র কাজ আমেরিকার জন্য যুদ্ধ করা। একজন জার্মান সৈন্যও হয়ত মাছ ধরতে কিংবা শিকার করতে পছন্দ করে।' তার আফসোস হয়- 'Under different circumstances we might have been good friends.'।

বাঙ্গালি খুব প্রাক্টিক্যাল জাতি আমি জানি। কাব্যের ভনিতা দেখিয়ে বাঙ্গালির সাথে লাভ নেই।

এক বাঙ্গালি চাচা পেশায় ইঞ্জিনিয়ার, আমাকে একবার বলেছিলেন- ভাতিজা আমি সৌদি আরবে নামাজ পড়ে দেখেছি, আরব শেখরা আমাকে গালে গাল লাগিয়ে চুমা দেয় না। যতই নামাজ পড়ি আমি দিনের শেষে বাঙ্গালিই থেকে যাই। পরে ভাবলাম- তাহলে আর নামাজ পড়ে কি লাভ ? এই হলো বাঙ্গালির প্র্যাক্টিক্যাল বুদ্ধি।

একদিকে ইউরোপের ডিপ্লোম্যাট ম্যাগাজিনে 'মাদার অব হিউম্যানিটি'র ছবি ছাপিয়ে অন্যদিকে কারেন্ট, মোবাইল নেটওয়ার্ক ইন্টারনেট বন্ধ করে দিবে কারণ নোবেল না পেলে আর এসব ভাল কাজ করে লাভ কি ?

সরকার যেদিন থেকে বিরাগ সেদিন থেকে ইউনিভার্সিটিগুলো আরও এক কাঠি সরেস- রোহিঙ্গা মেয়ের ভর্তি বাতিল করবে সেই মুহূর্তেই। জন্মের জেনেটিক লটারিতে বাঙ্গালি হয়ে এখন যারা একটু ভালো- রোহিঙ্গাদের প্রতি তাদের খুব বিরাগ। রোহিঙ্গা হয়ে জন্ম নিলে আজ ভিক্ষার ঝুলি পাততে খুব একটা কষ্ট হত না। রোহিঙ্গা পরিচয়ে অন্য দেশে গিয়ে এসাইলাম চাওয়াতে কিন্ত বাঙ্গালির লজ্জা নেই।

এখন থেকে ত্রিশ চল্লিশ বছর যদি গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর মত কোন একটা ক্রাইসিসে অনেক ক্লাইমেট রিফিউজিকে এদেশ থেকে অন্য দেশে আশ্রয় নিতে হয় - তখন এই শিক্ষিত রোহিঙ্গা বিরাগী বাঙ্গালিরাই থাকবেন প্রথম কাতারে ! বাঙ্গালি হওয়ার এই এক বিরাট সুবিধা- সকল পরিস্থিতিতে নিজের ষোল আনা স্বার্থ জ্ঞান টনটনে।


সংগৃহিত...

পঠিত : ৬৭৩ বার

মন্তব্য: ০