Alapon

সন্তানকে জ্ঞানী ও সৃজনশীল বানানোর সেরা উপায়...


সকল মানুষের একটি সুন্দর বাড়ীর মালিক হবার কল্পনা থাকে। নানা সুযোগ সুবিধেয় ভরা একটি গাড়ীর ভাবনাও থাকতে পারে। তারপর এই স্বপ্ন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে বিশ্লেষণ শুরু হয়। অতঃপর একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি চেষ্টা-সাধনা আর ধৈর্যের মাধ্যমে সে লক্ষ্যে পৌছতে চেষ্টা করে।

একটি শিশু কিন্তু সেভাবে চিন্তা-ভাবনা করেনা। একটি গাড়ীর মালিক হতে কি করনীয় সেটা তারা ভাবতে পারেনা। শিশুর বিশ্লেষণ শক্তি একেবারে শূন্যের কোটায়। তার ধৈর্য শক্তি খুবই সীমিত। কালকের জন্য সে অপেক্ষা করতে পারেনা। সব কর্মই তার নগদে চলে। তাই তার চিন্তা ও কল্পনা শক্তি উপস্থিত ক্ষেত্রেই কাজ করে। ধরুন শিশুকে একটি লাকড়ি ধরিয়ে দিয়ে বলা হল, এটা তোমার মটর সাইকেল। ব্যস, বলতেই দেরী। সে সাথে সাথেই নিজেকে মটর সাইকেলের চালক ভেবে, সেটি চালিয়ে, অনেকদূর থেকে ঘুরেও আসবে। পথিমধ্যে এক্সিডেন্ট ঘটিয়ে, বিশ্রাম নিয়ে পানি পান করে, গাড়ীতে পেট্রোল ঢুকানোর কাজও সেরেই ঘরে ফিরবে। এটি কন্যা শিশুকে, কাপড়ের পোটলা বানিয়ে শুধু ঘোষণা দিন যে, এটি তোমার পুতুল। সে তখনই এটাকে খাওয়াবে, পড়াবে, ঘুম পারাবে, স্নান করাবে এবং কখনও মা, বোন, দাদীর আচরণের মাধ্যমে তাকে শাসন করবে।

শিশুদের কল্পনা শক্তি প্রবল। তারা সবকিছুই প্রথমে কল্পনা দিয়ে ভাবে অতঃপর তার মত করে চিন্তার সংযোগ ঘটিয়ে উপভোগ করে। শিশুদের এই প্রাত্যহিক কল্পনা ও চিন্তার মধ্যে যদি অভিভাবক কায়দা-মত মসল্লার জোগান দিয়ে তাদের ভাবনা ও কল্পনার জগতে ব্যস্ত রাখতে পারে; তাহলে শিশুদেরকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়। সে জন্য দরকার অভিভাবকদের সময় দান ও নিত্য নতুন ভাবনার জন্য পরিবেশ করিয়ে দেওয়া।

কল্পনা বিলাসী বলে, সকল শিশুরাই কাল্পনিক ও অবাস্তব গল্প শুনতে ভালবাসে। শিশুরা পরিশ্রম করতে পারেনা, তাই বলে তার মন-মগজ বসে থাকে, এমন নয়। তাদের মগজের ব্যস্ততার জন্য প্রচুর চিন্তা-নির্ভর কাজ দরকার। এই কাজগুলো আঞ্জাম দেয় তাদের কল্পনাশক্তি। যে শিশু যত বেশী কল্পনা ও চিন্তাপ্রবণ সে শিশু বাস্তব জীবনে তত বেশী জ্ঞানী ও চিন্তাশীল হবে। যে শিশুর পরিবেশ চিন্তার উপযোগী নয় কিংবা অনেক শিশুদের মধ্যে হৈ হুল্লোড়ের মাঝে বড় হয় সে তত বেশী বৈষয়িক হয়। সহসা সে চিন্তার জগত থেকে বেরিয়ে বৈষয়িকতার মধ্যে আনন্দ খুঁজতে থাকবে। কেননা বৈষয়িক উপাদানের পর্যাপ্ততা মানুষের চিন্তার সুখকে বিচ্ছিন্ন করে। জীবনের তাগিদে, আগে হউক, পরে হউক মানুষ এক পর্যায়ে বৈষয়িক হতে বাধ্য হয়। শিশুরা এটা আগে পেলে আগেই বৈষয়িক হয়। মোবাইল গেম, ভিডিও গেম সহ নানাবিধ বৈষয়িক আনন্দের কারণে বর্তমানের শিশুদের বিবেকবোধ বাড়ার কোন সুযোগ পাচ্ছেনা।

সকল শিশুরাই প্রথমে তার মা অতঃপর তার বাবাকে ভালবাসে। তারা যখন কিছুর জন্য আবদার করবে, সাথে সাথে আবদার পূরণ করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আবার আবদার করে নাই কিংবা সে দেখে নাই এমন দামী জিনিষ তাকে উপহার দিলে, সে ওটার মর্ম নাও বুঝবে পারে। সহসাই সেটা নষ্ট করবে। নষ্ট করার অভ্যাস গড়ে উঠা শিশু চরিত্রের জন্য ক্ষতিকর। এসব শিশুর চরিত্রে গোঁয়ার্তুমি ভর করে। পরবর্তীতে কখনও তাকে নিষেধ করা হলে সে উগ্রতা দেখাতে পারে। তাই যখনই সে আবদার করবে, তখনই তার জন্য সম্ভব এমন একটা শর্ত আরোপ করে দেওয়া উত্তম। হতে পারে একটি কবিতা শিখে দিবে। হতে পারে কোরআনের একটি ছোট্ট সুরা শিখবে। হতে পারে দাদা-দাদীর পথ চলার লাঠিটি সে সদা যত্ন করে গুছিয়ে রাখবে। একটি বাজে কথা পরিহার, কাউকে আঘাত না করার ওয়াদা কিংবা দাঁত মাজার মত কাজের ওয়াদা আদায় করা যেতে পারে।

রাত্রে যখনই মায়ের সাথে শু'তে যাবে। তখনই শিশুকে পরবর্তী দিনের কল্পনার মসল্লা যুগিয়ে দিতে হবে। আদর করে শিশুকে প্রশ্ন করা যেতে পারে, বড় হয়ে সে তার মাকে কি দিবে? কার মত হবার ইচ্ছা ইত্যাদি। শিশু সেই সমস্ত জিনিষ দেবার ওয়াদা করবে, যা তার চারিপাশে সে দেখে থাকে। কেননা তার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা অতটুকুই। তখন তার মনের মত উপযোগী দেশীয় সুন্দর গল্প শুনাতে হবে। মহা মনীষীদের জীবনী, তাদের কর্ম নিয়ে আলোচনা উত্থাপন করতে হবে। একজন জগত সেরা মহান ব্যক্তির ছোট কালের কথা শুনাতে হবে। সাথে সাথে এই কথাটি অবশ্যই বলতে হবে, সেই ছেলে ছিল এমন, তার বাবা-মা যখন, যা চাইত সবই এনে দিত এবং বাবা-মাকে ফেলে কোথাও যেত না। এটাতে সে সর্বদা তার বাবা মাকে কেন্দ্র করে স্বপ্ন দেখতে অভ্যস্ত হবে। ফলে সে যত স্বপ্নই বুনবে সেখানে তার পিতা-মাতার উপস্থিতি থাকবে। পরবর্তীতে বাস্তব জীবনেও তার প্রতিফলন ঘটবে।

শিশুদের থেকে পরিপার্শ্বের সাথে খায় এমন জিনিষের অবাস্তব অকল্পনীয় জিনিষের ওয়াদা নিন। যেমন বিরাট আকৃতির পুকুর বানিয়ে দেওয়া, দশ তলা ভবন, সোনার গাড়ি, অগণিত শাড়ী, শপিং মলের মালিকানা ইত্যাদি। সন্তানের জন্য এসব দূরহ হলেও, কল্পনাতে কিন্তু ফায়দা আছে। অভাব পূরণ করতে না পারলেও শিশু মনে সে এসব নিয়ে ভাববে, কি করলে মা'কে ওসব দেওয়া যাবে। আর পরিণত বয়সে যখন পুকুর, বাড়ী, গাড়ী, শপিং মলে যাবে তখনই বারে বারে তার ওয়াদার কথা ও মায়ের সাথে জড়িত ঘনিষ্ঠ মধুর সময়ের কথা মনে পড়ে যাবে। এতে করে শতভাগ ওয়াদা পালন না হলেও অন্তত সেই মুহূর্তে পিতা-মাতার খবর নেবার জন্য সে ফোন করবে।

এসবের মূল লক্ষ্য একটাই। শিশুকালেই সন্তানের কল্পনাশক্তিকে প্রবল করা। এতে করে জীবনে সে যত কাজ করবে, সব কাজে চিন্তার জন্য একটি সময় ও স্থান রাখবে। চিন্তাশীল মানুষ ধৈর্যশীল হয়। চিন্তাশীল মানুষ জ্ঞানী, প্রজ্ঞাবান, দূরদর্শী হয়। হঠকারিতা, গোঁয়ার্তুমি এদের চরিত্রে স্থান পায়না। সে কারণে এসব মানুষ সৃজনশীল, জনপ্রিয় হয়। যা নিজে বুঝে সে কথা সহজে অনেক মানুষকে বুঝাতে পারে। সর্বোপরি চিন্তাশীল শিশুর চিন্তার মনি কোঠায় আজীবন পিতা-মাতার জন্য একটি স্থায়ী জায়গা বানিয়ে নেওয়া। দুনিয়ার সকল বড় বড় অর্জনের পিছনে কিছু চিন্তাশীল মানুষেরই অবদান ছিল। চিন্তাশীলতার গুরুত্ব দেখাতে গিয়ে, পবিত্র কোরআনের পরতে পরতে এই কথাটি বলা আছে যে, "নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল মানুষদের জন্য নিদর্শন রয়েছে.....।"

CLTD- Nazrul Islam Tipu

পঠিত : ১২৯০ বার

মন্তব্য: ০