Alapon

দাহরিয়া সম্প্রদায় ও ইমাম আবু হানিফার কথোপথন থেকে শিক্ষা...


কিছুদিন আগে এক ছোট ভাইয়ের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। ঢাবিতে পড়ছে। সেই সুদূর পঞ্চগড় থেকে ঢাবিতে এসে যেন তালগোল পাকিয়ে বসে আছে। বন্ধু আর কতিপয় বড় ভাইয়ের পাল্লায় পড়ে সে এখন নিজেকে সংশয়বাদি বলে পরিচয় দিতে আনন্দ পায়।

ইদানিংকালে উঠতি বয়সের কিছু ছেলে-মেয়েদের মাঝে নিজেকে সংশয়বাদি বলে পরিচয় দেওয়ার এক ধরণের প্রবনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। তো সেই সংশয়বাদি ছোট ভাইকে বললাম, ‘তোর সংশয়বাদি হওয়ার কারণ কি?’

সবাই যা বলে সেও একই কথা বলল, ‘এই বিজ্ঞানের যুগে এসে সংশয়বাদি হওয়াই তো স্বাভাবিক। তোমরা বল, আল্লাহ আছে। কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ দাও দেখি।’
তাকে বললাম, ‘প্রমাণ দেখাতে পারব না। আল্লাহ আছে কি নাই তা প্রমাণ করার বিষয় নয়; বিশ্বাসের বিষয়। বিশ্বাস করলে করবি না করলে নাই। তোর বিশ্বাস অবিশ্বাসে কোনো কিছু যায় আসে না। আর ইসলামের মূল কনসেপ্টটাই হচ্ছে বিশ্বাস। আর এই বিশ্বাসকে ইসলাম বলে ঈমান। অদৃশ্যে বিশ্বাস করাটাই ঈমান।’

শামসুন নাহার হলের সামনে বসে এই আলোচনা চলছিল। দুজনের জন্য দুইটা বার্গার নিয়ে আমরা আলোচনায় ফিরে আসলাম। তাকে বললাম, ‘এই দেখ, ৫০ টাকার এই বার্গারটাও তো কেউ না কেউ বানিয়েছে। তাহলে এই দুনিয়াটা বানিয়েছে কে?’
সে অতি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল, ‘প্রকৃতি! এসব কিছু প্রকৃতিরই সৃষ্টি।’

তার এই বক্তব্য বলে দেয় সে এখনো সংশয়বাদের প্রাথমিক স্তরে অবস্থান করছে। তাকে বললাম, তাহলে তোকে একটা ঘটনা বলি। আশা করছি, এই ঘটনা তোর মনে জমে থাকা অনেক প্রশ্নের উত্তর দিবে।

একবার ইমাম আবু হানিফা দাহরিয়া সম্প্রদায়ের সাথে কথা বলছিলেন। দাহরিয়া অর্থ সময়পন্থি। তারা বিশ্বাস করে পৃথিবীর সবকিছু সময়ই তৈরি করেছে। আরও সহজ করে বলতে প্রকৃতি তৈরি করেছে। দাহরিয়া সম্প্রদায় নিজেদের বিশ্বাস নিয়ে ইমাম আবু হানিফার সঙ্গে আলোচনা করছিল। এক পর্যায়ে ইমাম আবু হানিফা বলেন, ঠিক আছে আগামীকাল তোমাদের সাথে আমার উন্মুক্ত বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেই ফয়সালা হবে, তোমাদের দাহরিয়া বিশ্বাস সঠিক নাকি আমার ইসলাম সঠিক!

পরের দিন দাহরিয়া সম্প্রদায় বিতর্কের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে, নির্দিষ্ট সময়ে হাজির হল। কিন্তু ইমাম আবু হানিফার দেখা নেই। দাহরিয়া সম্প্রদায়ের কেউ কেউ বলতে লাগল, ‘তার তো কোনো যুক্তিই নেই, বলবে কি! তাই হয়তো পরাজয়ের ভয়ে আসতেছে না!’

অবশেষে এক ঘন্টা পর ইমাম আবু হানিফা বিতর্কস্থলে হাজির হলেন। তিনি উপস্থিত হলে বিতর্ক সভায় উপস্থিত ব্যাক্তিরা প্রশ্ন করল, ‘আপনার এতো দেরি হওয়ার কারণ কি?’

ইমাম বললেন, এখানে আসতে আমাকে নদী পার হতে হয়। আমি সময় হিসেব করেই বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম। কিন্তু নদীর পাড়ে এসে দেখি, কোনো নৌকা নেই। তারপর চিন্তা করলাম, আমার নৌকার জন্য অপেক্ষা দেখে হয়তো গাছের পাটাতনগুলো একসঙ্গে হয়ে নৌকা তৈরি হবে। তারপর আমি সেই নৌকায় করে নদী পার হবো। আর হলও তা-ই! কিন্তু নৌকা তৈরি হতে তো কিছু সময়ের প্রয়োজন। সে কারণেই আমার আসতে দেরি হয়ে গেল!

তখন দাহরিয়া সম্প্রদায়ের নেতারা বলতে লাগল, ইমাম আবু হানিফা পাগল হয়ে গেছে! না হলে সে এই কথা কীভাবে বলতে পারে যে, নৌকা আপনা-আপনি তৈরি হয়েছে। তারপর সেই নৌকায় করে নদী পার হয়েছে!

তখন ইমাম আবু হানিফা মুচকি হেসে বললেন- এই ছোট্ট নৌকাই যদি আপনাআপনি বা প্রকৃতি তৈরি করতে না পারে, তাহলে এই বিশাল পৃথিবী আপনা-আপনি তৈরি হয় কীভাবে?

পঠিত : ১৮৩১ বার

মন্তব্য: ০